২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার

ব্যবস্থা নিতে হবে

-

সুন্দরবনে অভয়ারণ্যের নদী-খালে কীটনাশকরূপী বিষ প্রয়োগ করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকার মাছ শিকারের সুযোগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার ঘুষবাণিজ্যের মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে একটি অভয়ারণ্যের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
মৎস্যজীবীদের সূত্রে আরো জানা গেছে, সুন্দরবনের বিশেষত পূর্ব অঞ্চলে বেআইনি মৎস্য নিধনের জন্য বাগেরহাট জেলার শরণখোলা এবং বরগুনার পাথরঘাটায় চক্রবিশেষ তৎপর। অসৎ ও লোভী এই চক্রের লোকজন বনের কোনো কোনো অভয়ারণ্য কেন্দ্রের কিছু কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে রাতে খাল ও নদীনালা থেকে অবাধে ধরে নিয়ে যাচ্ছে প্রচুর মৎস্যসম্পদ। এই চক্রের হোতাদের মধ্যে আছে পাথরঘাটা ও শরণখোলার পাশাপাশি পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়ার কোনো কোনো ব্যক্তি। এদের নিয়ন্ত্রিত শতাধিক নৌকা প্রধানত কটকা অভয়ারণ্যের বিভিন্ন নদী, খাল ও চরে এবং আশপাশে দিনরাত জাল দিয়ে মাছ ধরে নিচ্ছে। তারা এভাবে শিকার করে নানান প্রজাতির মাছ বেচে দিচ্ছে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে। অথচ সাধারণত এসব জলাশয়ে ছোট জেলেদের এবং বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে দেয়া হয় না। উল্লিখিত চক্রের একজন হোতাকে কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরার দায়ে কয়েক মাস সুন্দরবনে মাছ ধরতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। পরে একটি প্রভাবশালী মহলের মদদে তাকে আবার ‘পাস’ দেয়া হয়েছে মাছ শিকারের জন্য। জানা যায়, অন্যায়ভাবে সুন্দরবনের মাছ ধরার জন্য কটকা ছাড়াও কচিখালী ও চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ি এবং সুপতি ফরেস্ট স্টেশন অফিসের সাথে ‘গোন’ হিসেবে চুক্তি করা হয়ে থাকে। এক গোন মানে, ৯ দিন। গোনের ভিত্তিতে একেকটি গ্রুপকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা দিতে হয় অগ্রিম। মাসে দু’টি গোনে মাছ ধরার বিনিময়ে কোনো কোনো বন অফিসের ‘আয়’ ছয়-সাত লাখ টাকা।
যারা এই অবৈধ পন্থায় বনের মাছ ধরছে, তারা ছোট খালগুলোতে দিনে নৌকাসমেত লুকিয়ে থাকে। আর আঁধার নামলেই জাল ফেলে। এরা খুব প্রত্যুষে মাছ নিয়ে যায় আড়তে। এ মাছ বিক্রি হচ্ছে সুন্দরবনসংলগ্ন শরণখোলা বাজারে এবং কিছু দূরে, পাথরঘাটার পদ্মস্লুইস বাজারে। তা ছাড়া পিকআপে মাছ পাঠানো হয় খুলনা শহরে; এমনকি রাজধানী ঢাকায়ও। আরো জানা যায় চিংড়ির জালে প্রত্যেক গোনে একেকটি নৌকায় ৪০ থেকে ৫০ মণ করে ছোট মাছ মারা পড়ে। তা ফেলে দেয়া হয় নদী ও সাগরে। এভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে অমূল্য মৎস্যসম্পদ। কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরা অনেক বেড়ে যাওয়ায় বিগত দু’টি ‘গোনে’ চিংড়ি বেশি পাওয়া যায়নি।’
কটকা অভয়ারণ্যের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অবৈধ মৎস্য শিকারের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। শরণখোলার রেঞ্জ কর্মকর্তা (সহকারী কনজারভেটর) বলেছেন, ‘কটকা অভয়ারণ্যে মাছ ধরার খবর ঠিক নয়। কিছু অসাধু ব্যক্তি ‘সুবিধা’ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে কাল্পনিক কথা প্রচার করে থাকে।’ পূর্ব সুন্দরবনের ডিএফও বলেছেন, ‘এই মাছ ধরার খবর জানা নেই। আজই শুনলাম প্রথম। এ ব্যাপারে দেখা হবে।’
মৎস্য, বন্যপ্রাণী, বনজসম্পদ তথা প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে সুপতি, কচিখালী ও কটকাসহ সুন্দরবনের বেশ কিছু এলাকা এখন ‘অভয়ারণ্য’। প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নীলকমল এলাকায় সুন্দরবনকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’রূপে ঘোষণা দেন। তাই ২১ বছর ধরে নিষিদ্ধ রয়েছে অভয়ারণ্যে সর্ববিধ বনজসম্পদ আহরণ। এ জন্য প্রচারও করা হয়েছে। সে এলাকাকে মৎস্য প্রজননের একটি ক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ ‘মা’ মাছ এসব স্থানের জলাশয়ে ডিম ছেড়ে পোনার জন্ম দিয়ে থাকে।
অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগে মৎস্য নিধনের ব্যাপারে। অন্যথায় দেশের একটি অমূল্য সম্পদ হারিয়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement