২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে ঐক্য

মুসলিম বিশ্বের এগিয়ে আসা দরকার

-

বিগত শতাব্দীর একেবারে শেষে এসে বিশ্বব্যাপী একটি প্রচারণা জোরেশোরে ওঠানো হয়। ‘ইসলামভীতির’ নামে এই প্রচারণার মূল সুর ছিল মুসলিমরা ‘সন্ত্রাসী’। এমন প্রচারণার শিকার হয়ে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে আমরা বিভক্ত হতেই দেখেছি। সংখ্যালঘু দেশগুলোতে মুসলিমরা নানা বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে মুসলিম নামের কারণে মানুষ হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে সীমিত থাকলে ব্যাপারটা খুব পীড়াদায়ক কিছু ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে এই ভীতি ব্যবহার করা হয়েছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানোর জন্য। এমনকি খোদ মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামোফোবিয়ার প্রচারণা চালিয়ে জনসাধারণকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক অধিকার সঙ্কুচিত করা হয়েছে। অনেক মুসলিম দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের রাজনীতি করার অধিকার হরণ করা হচ্ছে।
বিশ্ব মুসলিমের অধিকার রক্ষার জন্য এই প্রচারণার বিরুদ্ধে উম্মাহর ঐক্য ও সমন্বয় দরকার। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে- বৃহত্তর সংগঠন অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স (ওআইসি) এ ব্যাপারে কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালন করতে পারেনি। কাশ্মিরে মুসলিমদের অধিকার লুণ্ঠন করা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এসব ব্যাপারে ওআইসি শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এক কথায় ইসলামোফোবিক প্রচারণার তোড়ে মুসলিম বিশ্ব বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। নিজেদের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস নিতে পারছে না। এ সময় আমরা দেখলাম, এ ধরনের প্রচারণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনটি দেশ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। শতধাবিভক্ত মুসলিমদের মধ্যে এই ঐক্যের সমঝোতা একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে। আশা করা যায়, মুসলিম বিশ্ব নিজেদের মধ্যে থাকা বিভক্তির দেয়ালগুলো নিয়ে নতুন করে ভাববে। নিজেদের মধ্যে শত্রুতা মুছে ফেলে অগ্রসর হওয়ার ব্রত গ্রহণ করবে।
তিনটি মুসলিম রাষ্ট্র- তুরস্ক, পাকিস্তান ও আজারবাইজান এ ব্যাপারে এবার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। দেশ তিনটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়। তারা ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার ঠেকাতে সম্মিলিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবেন। দেশ তিনটি শান্তি, নিরাপত্তা, ব্যবসায়, বিনিয়োগ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিনিময় হওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। ওই বৈঠকে তারা কাশ্মির ও আফগান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। এ দু’টি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে নানা শক্তির খেলা আমরা দেখে আসছি। বিশেষ করে বিগত পাঁচ দশকে আফগানিস্তান নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্বে এ অঞ্চলের মুসলিমরা বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্য দিকে কাশ্মিরের মানুষের স্বাধিকারের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন বছরের পর বছর এ অঞ্চলের আকাশ-বাতাস ভারী করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি এর সাথে আরেক জটিল সঙ্কট হিসেবে যোগ হয়েছে। এসব মানুষের নিগৃহীত হওয়ার প্রধান কারণ তাদের ধর্ম। মুসলিম পরিচয়ের কারণে তারা নিজেদের বসতবাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে গেছে। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ তাদের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।
নাগরনো কারাবাখকে অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করতে তুরস্ক ও পাকিস্তান সহযোগিতা নিয়ে আজারবাইজানের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই এই মুসলিম দেশগুলো নিজেদের ঐক্য গড়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝে। ইসলামোফোবিয়া যেভাবে পুরো বিশ্বকে গ্রাস করেছে, তা থেকে মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষায় নিজেদের মধ্যে সমঝোতার বিকল্প নেই। তুরস্ক এর মধ্যে বিভিন্ন মুসলিম ইস্যুতে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বিপন্ন রোহিঙ্গাদের পাশে আন্তরিকতা নিয়ে তাদের এগিয়ে আসতে আমরা দেখেছি। এখন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ ইসলামোফোবিয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ হতে উদ্যোগী হওয়া দরকার। তারা গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দেশের এ ব্যাপারে সমঝোতাকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। এ জন্য প্রত্যেকটি মুসলিম দেশ এগিয়ে আসতে পারে। আমরা তুরস্ক, পাকিস্তান ও আজারবাইজানের এ জন্য সমঝোতাকে স্বাগত জানাই। আশা করি, তাদের এ প্রচেষ্টা ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বে। সারা বিশ্বে তৈরি হবে একটি সাম্য-মৈত্রীর বন্ধন। যাতে উপকৃত হবে পুরো বিশ্ব। নিজেদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ প্রতিকার করার মাধ্যমে একটি মানবিক বিশ্ব গড়তে তারা অবদান রাখতে পারবেন।


আরো সংবাদ



premium cement