২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মহামারীতে বেহাল শিক্ষা খাত

নতুন পদ্ধতি জরুরি

-

করোনার কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষায় বেহাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি-জেডিসির পাশাপাশি বাতিল করা হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষাও। আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষা নিয়েও অনিশ্চয়তা কাটেনি। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট চরমে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হলেও এবার কবে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে; এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কার্যত শিক্ষার সব পর্যায় স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সরাসরি পাঠদান হচ্ছে না। অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। শুরুতে অনলাইন ক্লাসের তোড়জোড় ছিল; কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে গতি তত কমেছে। এখন তো সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস প্রায় বন্ধ। যেগুলোতে চালু আছে সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার মাত্র ২০-২৫ শতাংশ। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে দায়সারাভাবে। কোর্স শেষ করতে নামমাত্র অনলাইন ক্লাস চালু রাখা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেশনজট এড়াতে এবং নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে ইউজিসির কাছে অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাতটি নির্দেশনাসহ অনার্স-মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা, ব্যবহারিক ক্লাস ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার অনুমোদন দিয়েছে ইউজিসি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদেরও একই অবস্থা।
চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে আর মাত্র ৪০ দিন বাকি। এখন পর্যন্ত প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। অথচ মূল্যায়নের বিষয়ে প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া উচিত ছিল, যেন বিদ্যালয়গুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেয়া হলেও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নম্বর দেয়ার কোনো নিয়ম রাখা হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তা শিক্ষার্থীদের দিতে হয় ফটোকপি করে। এতে বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ হচ্ছে স্কুলগুলোর। এখন পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করায় শিক্ষার্থীদের জেএসসি-জেডিসি ও এসএসসির ফলের গড় অনুযায়ী ফল নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে এবার শতভাগ শিক্ষার্থীই পাস করবে। তবে বিভাগ পরিবর্তনকারী ও মানোন্নয়নে আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের ফল নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। এইচএসসির পরই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে কে কোন পেশায় যেতে পারবে এ পর্যায়েই অনেকখানি নির্ধারিত হয়। ফলে এইচএসসি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবার এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আগামী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসির ফলে মাত্র ২০ নম্বর নির্ধারণ করেছে। এতে যে জটিলতা দেখা দিয়েছে তা হলোÑ যারা দুই বছর ধরে পড়াশোনা করল, তার কোনো মূল্যায়ন না রেখে তিন-চার বছর আগে একজন শিক্ষার্থী কী করেছে, তা দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে যার প্রভাব পড়বে উচ্চশিক্ষায়।
করোনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এই মহামারীর মধ্যেও বিশ্বের অনেক দেশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে পরীক্ষা নিচ্ছে। দেশে দেশে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে; কিন্তু আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। অথচ সরকারের তরফ থেকে প্রতিনিয়ত দাবি করা হয়, ‘দেশ ডিজিটাল হয়েছে। আমাদের অগ্রগতি আকাশছোঁয়া।’ বাস্তবে করোনা সব প্রকাশ করে দিয়েছে। তাই সরকারকে বাস্তবতা মেনে নিয়েই শিক্ষাকার্যক্রম অটুট রাখতে নতুন শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাকার্যক্রম পূর্ণোদ্যমে শুরু করতে হবে। এমনিতেই প্রাথমিকের অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। সে জন্য শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনার দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক কমিয়ে, একাধিক শিফট করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। এ কথা ঠিক, এতে শিক্ষকদের একটু বেশি পরিশ্রম হলেও শিক্ষার্থীদের সিলেবাস অসম্পূর্ণ থাকবে না।


আরো সংবাদ



premium cement