২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটে মন্দা

দুশ্চিন্তায় বিক্রেতা-ইজারাদার

-

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর হাটগুলোতে পশু কেনাবেচা শুরু হয়েছে। তবে এবার অন্য বছরের তুলনায় কেনাবেচা কম। গত বছর এ সময়ে হাটে গরু ভর্তি থাকত; এ বছর এখনো অনেক জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে। হাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হাট বসার বিষয়ে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। তবু ক্রেতা-বিক্রেতা দুই-ই কম। করোনার প্রভাবে গরু কী পরিমাণ বিক্রি হতে পারে তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তাদের বক্তব্য, এখনো হাট জমে না ওঠায় লাভ তো দূরের কথা এবার হাটের ইজারামূল্য উঠবে কি না তা নিয়েই শঙ্কা রয়েছে। এ দিকে যারা হাটে আসছেন তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানার ব্যাপারে অনেকটাই উদাসীন।
হাটে দেশী গরুর পাশাপাশি ভারতীয় গরুও রয়েছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, এসব গরু ৮-৯ মাস আগে ভারত থেকে এনে দেশে প্রতিপালন করা হয়েছে। গত বছর এমন সময় যে হারে গরু বিক্রি হয়েছে, সেই তুলনায় এবার বিক্রি উল্লেখ করার মতো নয়। ক্রেতার সংখ্যা হাতেগোনা হওয়ায় তাদের টানতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। করোনার কারণে ক্রেতাদের একটি অংশ অনলাইনে পশু কেনার দিকে ঝুঁকে পড়ায় এবার হাটে তেমন লোকসমাগম হচ্ছে না বলে অনেকের ধারণা। তাদের মতে, খামারিরা ঢাকার পশুর হাটে গিয়ে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। গ্রাম থেকে গরু বিক্রির চেষ্টায় আছেন তারা। খামারিরা এলাকার বাইরে যেতে না চাওয়ায় কোরবানির হাটে পশুর সরবরাহ কম। দাম না পাওয়ার আশঙ্কায় খামারিরাও হাটমুখী হচ্ছেন না। নিজ এলাকায়ই পশু বিক্রির চেষ্টা করছেন তারা। ক্রেতাদের অনেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে অনলাইনে গরু কিনতে চাইবেন। অনলাইনে পশু কেনাবেচায় অনেকেই আগ্রহী হওয়ায় আগের তুলনায় অনলাইন হাট জমে উঠেছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল প্রায় এক কোটি ১৮ লাখ। কোরবানিযোগ্য ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু-মহিষ, ৭২ লাখ ছাগল-ভেড়া এবং ছয় হাজার ৫৬৩টি অন্য পশু ছিল। গতবার ঈদুল আজহায় এক কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হয়েছিল। এর আগের বছর ২০১৮ সালে ঈদে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মোট সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৫ লাখ এবং কোরবানি হয়েছিল এক কোটি পাঁচ লাখের মতো। তবে এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন। করোনা পরিস্থিতির কারণে চার মাস ধরে গোশত বিক্রি কমে গেছে। অবিক্রীত গরু-ছাগলও কোরবানির ঈদে যুক্ত হবে।
মহামারীর প্রভাবে মানুষের কোরবানি দেয়ার আর্থিক সঙ্গতি কমে গেছে। এবার তাই ছোট গরু অর্থাৎ ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা দামের গরুর চাহিদা বেশি ক্রেতাদের কাছে। প্রতি বছর কোরবানির ঈদে বড় বা একাধিক গরু বা পশু যারা কোরবানি দিতেন, তারা ছোট গরুর দিকে ঝুঁকবেন। আর্থিক মন্দা, করোনায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিসহ নানা কারণে অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের কোরবানি ২০ শতাংশের মতো কম হবে। এ ছাড়া কোরবানির সাথে একটি রাজনৈতিক উত্তাপ থাকে। এখন দেশে কোনো ধরনের নির্বাচন নেই। করোনার কারণে রাজনীতিবিদ বা সমাজসেবক বা বিত্তবানের খাদ্যসহায়তায় অর্থ ব্যয় করেছেন। কোরবানির গোশত বিতরণে জনসমাগমের বিষয়টিও থাকে। করোনার কারণে সেই ঝুঁকি অনেকেই নিতে চাইবেন না। তাই কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা কম।
আমরা মনে করি, করোনার কারণে অনেকে আর্থিক সঙ্গতি হারিয়ে ফেলায় তারা কোরবানি দিতে পারবেন না। সঙ্গত কারণে কোরবানির পশু কেনাবেচা এবার কম হবে। এতে দেশের খামারিরা ক্ষতির সম্মুখীন। এর ওপর যদি ভারতীয় গরু দেশে আসে তাহলে তাদের ক্ষতি আরো বেড়ে যাবে। তাই দেশীয় খামারিদের ক্ষতি যাতে কম হয়; সেজন্য চোরাই পথে ভারতীয় গরু আসা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement