বাংলাদেশে কোনো কিছুতেই সুষ্ঠু নিয়মশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে এই অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা চলছে অবাধে। বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে এ কথা সবচেয়ে প্রযোজ্য। এ দেশ থেকে অবৈধভাবে কত শ্রমিক রফতানি হয় তার ইয়ত্তা নেই। নেই কোনো সঠিক তথ্য পরিসংখ্যান। শুধু মাঝে মধ্যে গণমাধ্যমে খবর আসে আজ বিদেশের কোন দেশ থেকে কতসংখ্যক অবৈধ শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছে। এরা সংশ্লিষ্ট দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে পুরোপুরি খালি হাতে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে বিপুল শ্রমিক অবৈধভাবে বিদেশে যায়। এরা বিদেশে যাওয়ার পর নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়। অবৈধ শ্রমিক হিসেবে ধরা পড়ার পর অনেককে জেল-জুলুমসহ নানা ধরনের নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাদের এই পরিস্থিতি উত্তরণে আমাদের দেশের দূতাবাসগুলো তেমন কিছুই করতে পারছে না। অনেকে হয়রানি আর নির্যাতনের পর একসময় দেশে ফিরে আসে একদম নিঃস্ব হয়ে। দীর্ঘ দিন ধরে এই সমস্যা চললেও এ ব্যাপারে একটা সমাধান সূত্র আমরা বের করতে পারিনি। পারিনি বিদেশে অবৈধভাবে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়াটি থামাতে।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে বাংলাদেশী অবৈধ শ্রমিকদের সৌদি ক্যাম্পে শাস্তি দিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে মর্মে একটি খবর প্রকাশ হয়েছে। খবরে বলা হয়েছেÑ সৌদি আরবে ‘অবৈধমুক্ত সৌদি আরব’ (ভায়োলেটর্স ফ্রি কেএসএ) কর্মসূচির আওতায় চলমান ধরপাকড় অভিযানে প্রতিদিন বাংলাদেশীসহ যেসব বিদেশী শ্রমিক ধরা পড়ছে তাদের ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে জেল-জরিমানা দেয়ার পরই আউট পাসে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ধরপাকড় অভিযানে মোট ৪০ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী নাগরিক সৌদি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখ বিদেশী কর্মসূচির আওতায় জেল-জরিমানার পর নিজ নিজ দেশে ফেরত গেছে। আর বাকিরা দেশে ফেরত যাওয়ার অপেক্ষায় আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এত বিপুল অবৈধ বাংলাদেশী সৌদি আরবে কী করে গেল, প্রশাসন কেন তা ঠেকাতে পারল না। বিদেশে এরা কার্যত দেশের মর্যাদাহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরো অবাক হওয়ার বিষয়, সৌদি আরবের উল্লিখিত ‘অবৈধমুক্ত সৌদি আরব’ অভিযানে কতসংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক গ্রেফতারের পর কারাবরণ করে দেশে ফিরেছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় অথবা বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক জানে না। তবে দুই-এক দিন পরপরই বিচ্ছিন্নভাবে দেশে ফেরত আসাদের তালিকা দেয়া হচ্ছে বিমানবন্দর প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক থেকে। এ ধারাবাহিকতায় গত বুধবার রাতে দু’টি ফ্লাইটে অবৈধ হওয়ার অভিযোগে ২১৫ শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছে। যাদের সবাই সৌদি সরকারের অর্থায়নে ফ্রি টিকিটে এক-কাপড়ে দেশে ফিরেছে। কিন্তু দেশে ফিরে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে এরা খুবই উদ্বিগ্ন। নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরে কী করে তারা সংসার চালাবে সেটিই তাদের বড় ভাবনা। এ দিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, বিদেশে নারী শ্রমিক পাঠানো নিয়ে ঝামেলায় আছে সরকার। নারী শ্রমিকদের অত্যাচারের বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করার কারণে বিপাকে আছে সরকার।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে নিয়মনীতির মধ্যে আনার দায়িত্ব তো সরকারের। সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে, বাংলাদেশ থেকে কোনো শ্রমিক যেন অবৈধভাবে সৌদি আরব কিংবা অন্য কোনো দেশে যেতে না পারে। এ জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে কী করে জবাবদিহির আওতায় আনা যায়, সে উপায় উদ্বাবনও করতে হবে সরকারকেই। তা না করতে পারা সরকারেরই ব্যর্থতা। দীর্ঘ দিন ধরে চলা বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর বিশৃঙ্খলার দায় অবশ্যই সরকারকেই নিতে হবে। নারী শ্রমিকদের ব্যাপারে সরকারকেই আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের নারী শ্রমিকরা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে অনেকে মৃত্যুবরণ করছে, এ কথা আর গোপন নেই। আমরা জেনেছি সৌদি আরব থেকে ৫৩ জন নারীর লাশ দেশে ফিরেছে।
বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে একটা নিয়মশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা