৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গ

বাংলাদেশের সহমত পোষণ করা উচিত

-

রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ উভয় সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। চীন-ভারতের সহযোগিতা চেয়েও বাংলাদেশ আক্ষরিক অর্থে সেই সাহায্য পাচ্ছে না। অপর দিকে, জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর পক্ষে। তাই রোহিঙ্গারা ফিরতে অনীহা জানানোর কারণে গত ১৫ নভেম্বর তাদের প্রত্যাবাসনের সব আয়োজন সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তা স্থগিত করতে হয়।
অন্য দিকে, প্রত্যাবাসনের আগে রোহিঙ্গাদের রাখাইনের অবস্থা সরেজমিন দেখে আসার সুযোগ করে দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআর। পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা যাতে স্বাধীনভাবে স্বভূমিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেটিই চায় জাতিসঙ্ঘ। ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায়। সংস্থাটির ঢাকা অফিস প্রচারিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইন কতটা প্রস্তুত, সেখানে কী অগ্রগতি হয়েছে তা বোঝার জন্য রোহিঙ্গাদের স্বচক্ষে ওই এলাকার অবস্থা দেখে আসা জরুরি। এর মধ্য দিয়ে শরণার্থীরা স্বাধীনভাবে রাখাইনে পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন এবং বাংলাদেশে অন্য শরণার্থীদের কাছে সে তথ্য প্রচার করতে পারবেন। তাদের রাখাইনে নিয়ে যাওয়াসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে ইউএনএইচসিআর সহযোগিতায় প্রস্তুত রয়েছে বলে দাবি করছে। তবে রাখাইন রাজ্যে শরণার্থীসহ সব জনগোষ্ঠীর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থায়ী ও টেকসই সমাধান জরুরি। আর এটি করার জন্য জাতিসঙ্ঘ তার সব অংশীদারের সাথে কাজ চালিয়ে যাবে।
রাখাইনে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ ব্যাপক নির্যাতনের কারণে গত বছর আগস্টের শেষ থেকে কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয় নিয়েছেন। পরে তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফেরানোর জন্য মিয়ানমারের সাথে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। তবে এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের মতামতের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে, মর্যাদার সাথে এবং স্থায়ীভাবে রাখাইনে তাদের বসতিতে ফিরতে পারেন, সেই পরিস্থিতি সৃষ্টিতে দেশটির সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করছে বাংলাদেশ। ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়Ñ রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির দায় মিয়ানমারেরই। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সর্বতোভাবে প্রচেষ্টা নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইউএনএইচসিআর বলেছে, এ জন্য কফি আনান নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণ অনুসন্ধান জরুরি। আর এটি করতে হবে মিয়ানমারকেই।
জাতিসঙ্ঘের এই সংস্থাটি মনে করে, রোহিঙ্গাদের চলাচলের স্বাধীনতা, সেবা পাওয়ার সুযোগ, দালিলিক বিষয় ও জীবিকার সুযোগের ক্ষেত্রে কী অগ্রগতি হয়েছে তা মিয়ানমারের দেখানোটা এখন গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টিতে এসব পদক্ষেপ জরুরি।
আমরা মনে করি, জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাটির বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ অবশ্যই এ বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করার পক্ষে। আশা করি, বাংলাদেশ যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিতে কোনো প্রকার ভুল করবে না।


আরো সংবাদ



premium cement