২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুলাদীতে পাটের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকেরা দিশেহারা

মুলাদীতে পাটের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকেরা দিশেহারা - ছবি : নয়া দিগন্ত

বরিশালের মুলাদীতে পাট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন পাট চাষীরা। তাদের অভিযোগ, পাট বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না। পাট ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করায় কম দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে। কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সোনালি ফসল চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা।

পাট ব্যবসায়ীদের দাবি, মিল মালিকরা দাম কমিয়ে দেয়ায় কৃষকদের থেকে কম দামে কিনতে হয়।

চলতি মৌসুমের শুরুতে পাট ব্যবসায়ীরা দু’হাজার ৫০০ থেকে দু’হাজার ৮০০ টাকা দরে প্রতি মণ পাট কেনেন। হঠাৎ করে দাম কমিয়ে এক হাজার ৮০০ থেকে দু’হাজার ২০০ টাকা দরে পাটের দাম নির্ধারণ করেন। বৃষ্টি কিংবা বৈরী আবহাওয়ায় পাট কিছুটা ভেজা থাকাসহ নানা টালবাহানায় দাম কমিয়ে দেন তারা।

জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ছয় হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছে কৃষকেরা। এসব জমিতে ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে। পাটের কাঙ্ক্ষিত দাম নিয়ে কৃষকদের আগে থেকেই দুশ্চিন্তা ছিল। এরপরও দ্বি-ফসলি জমিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই পাট চাষ করছেন অনেক কৃষক।

মুলাদী সদর ইউনিয়নের ভাঙ্গারমোনা গ্রামের কৃষক শাহ আলম সরদার বলেন, আমন ধানের পর প্রায় এক একর জমিতে পাট চাষ করেন। তার মধ্যে ২০ শতাংশ জমির পাটের হিসাব করে দেখেন বীজ কেনা, জমি চাষ, সার প্রয়োগ, পাট কাটা ও পরিষ্কার করার মজুরি বাবদ প্রায় চার হাজার ৬০০ টাকা খরচ হয়েছে। ওই ২০ শতাংশ জমির পাট বিক্রি করে পান তিন হাজার ৭৫০ এবং পাটখড়ি বিক্রি করেন ৪৮০ টাকা।

চরলীপুর গ্রামের আরেক কৃষক বাবুল ব্যাপারী বলেন, ব্যবসায়ীরা জোটবদ্ধ হয়ে কৃষকদের ঠকিয়ে কম দামে পাট কিনে অতিরিক্ত লাভ করেন। তাদের কাছে কৃষকেরা অনেকটা অসহায়।

মুলাদী পৌরসভার চরডিক্রি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘গত বছর পাইকারদের কাছে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের কাছ থেকে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা দরে পাট কিনি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তারা পাটের দাম কমিয়ে দু’ থেকে দু’ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দেন। ফলে গত বছর অনেক পাট বিক্রি করতে পারিনি। এ বছরও দাম না পাওয়ায় ওই পাট নিয়ে বিপদে পড়েছি।’

খাসেরহাট বন্দরের পাট ব্যবসায়ী সোহেল ফকির বলেন, পাটের দাম মিল মালিকদের ওপর নির্ভর করে। তারা দাম কমিয়ে দিলে বাধ্য হয়েই কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পাট কিনতে হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা লোকসান দিয়ে কৃষক কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি দামে পাট কিনবে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, গত বছর পাঁচ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছে কৃষকেরা। এ বছর পাট চাষের জমি বেড়ে ছয় হাজার ৪৫০ হেক্টর হয়েছে। তবে পাটের দাম নির্ধারণের বিষয়টি ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের ওপর নির্ভর করে।

তিনি আরো বলেন, পাট খাতে সরকারি কোনো সহযোগিতা কিংবা ভর্তুকি দেয়া হয় না। কৃষি কার্যালয় থেকে কৃষকদের চাষাবাদ ও ভালো ফলন পেতে পরামর্শ দেয়া হয়। যদি সরকারিভাবে পাট চাষীদের সহযোগিতা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তা হলে তালিকা করে কৃষকদের দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement