২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভুটানের রাজার সফর বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সাক্ষ্য : যৌথ বিবৃতি

ভুটানের রাজার সফর বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সাক্ষ্য : যৌথ বিবৃতি - ছবি : ইউএনবি

ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এ সময় পুষ্পস্তবক অর্পণ, পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর এবং একটি গাছের চারা রোপণ করবেন।

ভুটানের রানী জেটসুন পেমা ওয়াংচুকও রাজার সাথে থাকবেন।

ভুটানের রাজা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিনের আমন্ত্রণে ২৫ থেকে ২৮ মার্চ বাংলাদেশ সফর করছেন।

সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ভুটানের রাজার বাংলাদেশ সফর দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বড় সাক্ষ্য।

এতে বলা হয়, রাজা ও রানীর বাংলাদেশ সফর দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও সুসম্পর্কের ঐতিহাসিক বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করেছে।

রাজা ও রানী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সাথেসাক্ষাৎ করবেন। রাষ্ট্রপতি রাজার সম্মানে মঙ্গলবার একটি ভোজের আয়োজন করবেন।

সোমবার রাজা ও রানী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন।

সফরকালে থিম্পুতে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনে সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্য সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওএমএস) স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার জন্য, বাংলাদেশের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং ভুটানের প্রতিযোগিতা ও ভোক্তাবিষয়ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

এছাড়াও বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতামূলক চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ভুটানের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ভর্তির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেন।

সহযোগিতার বিদ্যমান গতি আরও সুসংহত করার জন্য, ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক এমবিবিএস আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।

আনুষ্ঠানিক বৈঠকে উভয় পক্ষ বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যকার সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে, যা অভিন্ন ইতিহাস, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য জনগণের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার উপর ভিত্তি করে একটি বিশেষ বিষয়।

রাজা জিগমে তাকে এবং তার প্রতিনিধিদলের সদস্যদের আন্তরিক অভ্যর্থনা ও উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য গভীর প্রশংসা করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক এবং সেদেশের জনগণের অমূল্য সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞতার সাথেস্মরণ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ।

প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ হিসেবে ভুটানের কথা স্মরণ করেন।

বাংলাদেশ ও ভুটান ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট চলাচল চুক্তি এবং এর প্রটোকল স্বাক্ষর করেছে, যা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও যোগাযোগের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। এ নিয়ে দুই পক্ষই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, এই চুক্তি এবং এর প্রটোকল কেবল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের জন্যই অভূতপূর্ব হবে না বরং আন্তঃসংযুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার পথ প্রশস্ত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করবে।

আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ অর্থনৈতিক সংহতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বলে উভয় পক্ষই সম্মতি প্রকাশ করেছে।

সড়ক, রেল ও জলপথের মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি আঞ্চলিক সংহতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করছে দুটি দেশই।

উন্মুক্ত হলো নতুন এক দিগন্ত
ভুটানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জিলেফু থেকে ১৯০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের‘কুড়িগ্রামে' 'বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল' আয়োজনের প্রস্তাব দেয়ায় ভুটান বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানায়।

এই অর্থনৈতিক অঞ্চল দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বৃহত্তর সমৃদ্ধি অর্জনে নতুন দিগন্ত যোগ করবে।

দুই পক্ষই ভুটান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জ্বালানি খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

এই অঞ্চলের অভিন্ন শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উভয় পক্ষই বৈঠকে জানিয়েছে।

রাজা ২৬ মার্চ ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন এবং সেখানকার কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের সাথেকথা বলবেন।

বাংলাদেশ থিম্পুতে একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন করতে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আরেকটি মাইলফলক হবে।

কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক যোগাযোগ থাকায় উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

তারা ভুটানের হিমালয়কে বাংলাদেশের কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সাথেযুক্ত করে বাংলাদেশ ও ভুটানের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ আরো জোরদার করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

এ সফরে রাজা জিগমে পদ্মা সেতু পরিদর্শন করবেন, যা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের স্ব-অর্থায়ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে নির্মিত একটি স্মরণীয় অবকাঠামোগত সাফল্য।

অসাধারণ এই অবকাঠামো প্রকল্পটি যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদারে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের সাক্ষ্য বহন করে।

রাজা জিগমে আড়াইহাজারের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন এবং সেখানকার অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা প্রত্যক্ষ করবেন।

ঢাকায় অবস্থানকালে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতা এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সাথে সাক্ষাৎ ও মত বিনিময় করবেন রাজা।

ভুটানের রাজা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ভুটান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement