২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তর বন্ধের আহ্বান দুই মানবাধিকার সংস্থার

- সংগৃহীত

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে একই দিনে বিবৃতি দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। দুটি মানবাধিকার সংস্থাই রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটি আপাতত স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে ৪ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা তৈরি করেছে যাদেরকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। বাংলাদেশের সরকারের উচিত একটি স্বচ্ছ স্থানান্তর প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উদ্বাস্তুদের বুঝে-শুনে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এবং দ্বীপটিতে যাওয়া-আসার অনুমতি সাপেক্ষে স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। সেই সাথে জাতিসঙ্ঘের আহ্বান অনুযায়ী একটি স্বাধীন কারিগরি এবং সুরক্ষা বিষয়ক মূল্যায়ন পরিচালনা করা উচিত।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্র্র্যাড অ্যাডামস বলেন,‘মানবিক পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সম্মতি বা সবুজ সংকেত ছাড়া উদ্বাস্তুদের ভাসান চরে স্থানান্তর না করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসঙ্ঘের কাছে যে ওয়াদা করেছিল তা থেকে সরে আসছে।’

তিনি বলেন, সরকার যদি ভাসান চরে বসবাসের উপযোগিতা নিয়ে নিশ্চিতই হয়ে থাকে তাহলে তা স্বচ্ছ হওয়া উচিত এবং জাতিসঙ্ঘের কারিগরি মূল্যায়নকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত স্থানান্তর শুরু করা উচিত নয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসজি টেরিঙ্ক বলেন, ভাসানচরে জাতিসঙ্ঘের পূর্ণ কারিগরি ও মানবিক মিশন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত স্থানান্তর নিয়ে কোনো কথা বলবে না ইইউ।

যদিও বাংলাদেশে সরকার বলছে স্থানান্তর প্রক্রিয়া উদ্বাস্তুদের ইচ্ছাতেই হচ্ছে। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করেছে যে, ভাসান চরে স্থানান্তর করা হবে এমন অন্তত ১২টি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন তারা। যাদের নাম তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তারা স্বেচ্ছায় স্থানান্তর হতে চান না বলে মানবাধিকার সংস্থাটিকে জানিয়েছেন। এই তালিকায় থাকা কিছু উদ্বাস্তু জোর করে স্থানান্তরিত হওয়ার ভয়ে পালিয়েছেন বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি।

কয়েক জন উদ্বাস্তুর বক্তব্য উদ্ধৃত করে সংস্থাটি বিবৃতিতে জানায়, তারা ভাসান চরে স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হয়েছে কারণ মাঝি এবং ক্যাম্প-ইন-চার্জরা তাদেরকে বলেছে যে, সেখানে মাছ ধরা কিংবা কৃষিকাজ করার মতো জীবিকা উপাজর্নের পথ বেছে নিতে পারবেন। সেই সাথে তাদের স্বাস্থ্যসেবা এবং সন্তানদের শিক্ষালাভের সুযোগ থাকবে।

ভাসান চর সম্পর্কে সরকার পরিপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, চরটিতে এরইমধ্যে যে ৩ শতাধিক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু রয়েছেন তাদের অবস্থা নাজুক। তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা নেই এবং স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষার কোনো সুযোগ নেই।

সংস্থাটি বলছে,‘রোহিঙ্গা সংকটের সাথে সংশ্লিষ্ট দাতা দেশগুলো যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া উচিত।’

এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হামাদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর অনতিবিলম্বে বন্ধ করে সেখানে থাকা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে আনা উচিত।
দুর্গম ওই দ্বীপটিতে যেখানে মানবাধিকার গ্রুপ ও সাংবাদিকদের আগে থেকে অনুমতি না নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় সেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতির স্বাধীন পর্যবেক্ষণ করাটাও হুমকির মুখে পড়বে।

চরটিতে স্থানান্তর শুরুর আগে বাংলাদেশ সরকারের সেখানে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং সংস্থাগুলোকে বসবাসের উপযোগিতার বিষয়টি মূল্যায়নের সুযোগ দেয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে গত ২ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে জাতিসঙ্ঘ বলে, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে জাতিসঙ্ঘ অবগত থাকলেও উদ্বাস্তুদের স্থানান্তর প্রস্তুতি কিংবা তাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংস্থাটিকে যুক্ত করা হয়নি।

এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসঙ্ঘের কাছে তথ্যও খুবই কম আছে বলে বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। সেই সাথে গুরুত্বারোপ করা হয় যে, স্থানান্তর যাতে স্বেচ্ছায় হয় সে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের নিশ্চিত করা উচিত।

ডিসেম্বর মাসেই আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা সরকার নিয়েছিল- পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের এমন বক্তব্য এর আগে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সাথে জড়িত কর্মকর্তারাও বলেছেন, স্থানান্তরের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার ব্যাপারে সরকারের তাগিদও রয়েছে। সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement