২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

`কাপড়চোপড় খুলে আমাদের ছেড়ে দেয়া হয়’

`কাপড়চোপড় খুলে আমাদের ছেড়ে দেয়া হয়’ - ছবি : সংগৃহীত

দুই বছর আগে ওমান থেকে বসনিয়া এসেছেন বাংলাদেশের মোহাম্মদ ইয়াসিন। স্বপ্ন ইউরোপের কোন দেশে পাড়ি জমানো। তিনি এখন আটকে আছেন ক্রোয়েশিয়া-বসনিয়া সীমান্তের ভেলিকা ক্লাদুসার একটি পাহাড়ের ঢালে। সেখান থেকে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ক্রোয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারেননি ইয়াসিন। বারবার দেশটির পুলিশের হাতে আটকা পড়েন। পুলিশ তার সর্বস্ব রেখে আবারো বসনিয়া ফেরত পাঠায় বলে জানান তিনি।

‘ওমান থেকে স্পিড বোটে করে ইরান এসে সেখান থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে আসি আমি। গ্রিস থেকে আসি বসনিয়াতে। গত চার মাস যাবৎ এ জঙ্গলটিতে আছি। সর্বশেষ গত তিনদিন আগে ক্রোয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করি। সে সময় কিছুটা (ক্রোয়েশিয়ার) ভিতরে ঢুকেছিলাম। কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাই। পুলিশ আমার সবকিছু কেড়ে নেয়। শুধু আন্ডারওয়্যার পরা অবস্থায় আমাকে এখানে ফেরত পাঠায়,’ কষ্টের কথা এভাবেই বলেন ইয়াসিন।

বসনিয়ার জঙ্গলে বাংলাদেশীদের আটকে পড়ার বিষয়ে সরেজমিন প্রতিবেদনের জন্য বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন দুই সংবাদকর্মী। তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশটির ক্রোয়েশিয়া সীমান্তবর্তী ভেলিকা ক্লাদুসা এলাকার একটি পাহাড়ের ঢালে প্রায় কয়েকশ’ বাংলাদেশী অবস্থান করছেন। তীব্র শীত, খাবারের অভাব, পানির সংকটে অমানবিক জীবনযাপন করছেন তারা।

লাখ টাকা খরচ আর বিপদসঙ্কুল পথ

ভেলিকা ক্লাদুসায় অবস্থানরত বাংলাদেশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে এসেছেন। পাড়ি দিয়েছেন দুর্গম পথ। সেখানে অবস্থানরতরা জানান, তারা দালালদের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা খরচ করে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। ‘১৮ থেকে ২০ লাখ খরচ করে এখানে এসেছি। বিভিন্ন দেশে দালালদেরকে এ টাকা দিতে হয়েছে আমাদের। এ মুহূর্তে দেশে গেলে নিঃস্ব হয়ে যাব আমরা,’ জানালেন সেখানে অবস্থানরতদের একজন।

মানবেতর জীবন

গাছের সাথে পলিথিন বেঁধে ভেলিকা ক্লাদুসার একটি পাহাড়ের ঢালে বানানো হয়েছে তাবু যেখানে গাদাগাদি করে রাত কাটাচ্ছেন তারা। এমন বেশ কিছু তাবুতে অবস্থান কয়েকশো বাংলাদেশীর কর্দমাক্ত মাটিতে পাতলা পলিথিন বিছিয়ে নিজেদের থাকার আয়োজন করেছেন তারা। নেই পর্যাপ্ত খাবার কিংবা জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা। ভেলিকা ক্লাদুসায় একটি শরণার্থী ক্যাম্প থাকলেও সেখানে সবাইকে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে নাবলে অভিযোগ করেছেন তারা। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের একটি পরিত্যক্ত কারখানায়।

‘নজর নেই’ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর

কয়েকশো মানুষ বসনিয়ার এ জঙ্গলে মানবেতর জীবনযাপন করলেও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে তাদের সহায়তায় তৎপর হতে দেখা যায়নি। এখানে অবস্থানরত বাংলাদশীরা জানান, মাঝে মাঝে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কেউ কেউ কিছু খাবার আর চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে আসলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement