২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ফেসবুকের কাছে কী তথ্য চায় সরকার?

ফেসবুকের কাছে কী তথ্য চায় সরকার? - সংগৃহীত

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ফেসবুকের কাছে ১৯৬টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে। ফেসবুক এরই মধ্যে ৪৪% অ্যাকাউন্টের তথ্য সরবরাহ করেছে বলে তাদের ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। এখন প্রশ্ন উঠেছে, সরকার কী কারণে এবং ঠিক কী ধরনের তথ্য ফেসবুকের কাছে চেয়েছে? এবং ফেসবুক এর জবাবে সরকারকে কী বলেছে?

সরকার কোন তথ্যগুলো চায় এবং কেন:

সরকারি কর্মকর্তারা সাধারণত হত্যা, অপহরণ, জঙ্গিবাদের মতো বিভিন্ন অপরাধের তদন্তের জন্য বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্টের তথ্য পেতে ফেসবুকের কাছে আবেদন জানিয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইমের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান জানান, বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা বিশেষ করে যেগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও ডিজিটাল নিরাপত্তার সাথে সম্পৃক্ত সে বিষয়ে তদন্তে ফেসবুকের কাছে তথ্য চেয়েছে।

আলিমুজ্জামান বলেন, "অনেক সময় দেশে ফেইক নিউজ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়, হত্যা বা হামলার হুমকি দেয়, ফেইক আইডি থেকে অনেক অবৈধ কাজ পরিচালনা করা হয়, আবার সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা কিংবা সাইবার হ্যারাসমেন্ট অথবা ব্ল্যাকমেইলিং- এ ধরনের ঘটনা তদন্তে আমাদের কিছু ফেসবুক আইডির তথ্যের প্রয়োজন হয়।"

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূলত ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সাবস্ক্রাইবার তথ্য অর্থাৎ অভিযুক্তের পরিচয় বা অবস্থান সনাক্ত করা যায় এমন তথ্যগুলো দিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। অ্যাকাউন্টগুলোর ঠিক কোন কোন তথ্য প্রয়োজন সেগুলো নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয় বলে ফেসবুক গাইডলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফেসবুক কিসের ভিত্তিতে তথ্য দেয়:

ফেসবুকের ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের সরকারের পক্ষ থেকে আসা এসব অনুরোধ আইন এবং পরিষেবার শর্তাবলী অনুসারে তারা বিবেচনা করে থাকে। আইনগত কিছু বাধ্যবাধকতা থাকায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তথ্য দেয়ার বা প্রত্যাখ্যানের আগে প্রতিটি অ্যাকাউন্ট খুব সাবধানে পর্যালোচনা করে।

আলিমুজ্জামান বলেন, "ফেসবুক মূলত সঠিকভাবে সব উৎস ও কারণ যাচাই বাছাইয়ের পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, আমাদের গুরুত্বের ভিত্তিতে আগে বা পরে তথ্য সরবরাহ করে থাকে।"

মূলত তথ্যগুলো চাওয়ার পেছনে যদি কোন শিশুর ক্ষতি, হত্যার হুমকি অর্থাৎ কারো গুরুতর শারীরিক আঘাত বা মৃত্যুর ঝুঁকির বিশ্বাসযোগ্য কারণ পাওয়া যায়, তাহলে ফেসবুক কোনো দেরী ছাড়াই জরুরি ভিত্তিতে তথ্য প্রকাশ করে থাকে।

এই জরুরি ভিত্তিতে তথ্য সরবরাহ বা ইমার্জেন্সি ডিসক্লোজারের কিছু নির্দেশিকা রয়েছে। সেগুলোর সঙ্গে আবেদন মিলে গেলে তারা সাধারণত ৩০ মিনিটের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করে থাকে বলে জানান আলিমুজ্জামান।

ফেসবুকের জরিপে দেখা যায় যে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থাৎ ছয় মাসে, বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোট ১৯৬টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে ১৩০টির তথ্যই চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি অনুরোধের মাধ্যমে।

ফেসবুক মূলত জন নিরাপত্তার বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে কারো বিরুদ্ধে যদি তার ব্যক্তিগত মত প্রকাশের কারণে অভিযোগ আনা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ফেসবুক কোনো সাড়া দেয় না বলেও তিনি জানান।

অভিযোগ যাই হোক সেসব তথ্য চাওয়ার অনুরোধ ওই দেশের সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমেই আসতে হবে বলে ফেসবুকের গাইডলাইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

সেখানে বলা আছে, তথ্যগুলো এমন হতে হবে যেন সেগুলো সনাক্ত ও পুনরুদ্ধার করা যায়। কেননা, ব্যবহারকারীরা যদি তথ্যটি মুছে ফেলেন তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় না।

ফেসবুক কিভাবে অনুরোধ গ্রহণ করে থাকে?

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা কারো ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামের আইডি ট্র্যাকিং বা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ফেসবুকের ল' এনফোর্সমেন্ট অনলাইন রিকোয়েস্টের মাধ্যমে তাদের অনুরোধ জমা দিতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে কারো অনুরোধ ফেসবুক গ্রহণ করে না।

এ কারণে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি সমস্যার মুখোমুখি হন, তাহলে তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তথ্য চাইতে হবে। এছাড়া ফেসবুকের ঠিকানায় সরাসরি লিখিতভাবে অনুরোধ জানানোর সুযোগ রয়েছে।

তবে চিঠির মাধ্যমে আসা আবেদনের তথ্য প্রক্রিয়াকরণে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে।

যোগাযোগের ঠিকানা-

United States mailing address:

1601 Willow Road,

Menlo Park CA 94025

ফেসবুক এসব অনুরোধের প্রতিক্রিয়া জানাতে কিছু অর্থ চার্জ করতে পারে বলে প্রতিষ্ঠানটির ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদনে জানানো হয়। প্রতিটি একাউন্টের অনুরোধের ভিত্তিতে এই অর্থ প্রযোজ্য হয় বলে সংস্থাটি উল্লেখ করে।

এছাড়া অস্বাভাবিক বা জটিল অনুরোধের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি চার্জ করা হতে পারে বলেও জানায় তারা। তবে সম্ভাব্য ক্ষতির তদন্তের ক্ষেত্রে বা ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় এই ফি কম/বেশি অথবা বিনামূল্যেও হয়ে থাকতে পারে।

ফেসবুক মূলত আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসা সরকারি অনুরোধগুলো গ্রহণ করে থাকেন। তারপর তারা ওই অ্যাকাউন্টগুলোর তথ্যের স্ন্যাপশট সাময়িক সময়ের জন্য সংরক্ষণ করে থাকেন।

শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক বা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তারা সেই তথ্যগুলো সরবরাহ করে থাকেন। তবে অনেক তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে ফেসবুক ইউজার নিজেই আগে থেকেই অনুমতি দিয়ে থাকে। এরমধ্যে রয়েছে তার ছবি, ভিডিও, টাইমলাইন পোস্ট ইত্যাদি। সূত্র : বিবিসি।


আরো সংবাদ



premium cement