২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কবিতায় দেশপ্রেমের চেতনা

-

স্বাধীন ভূখণ্ডে এক চিলতে রৌদ্দুর যখন চিকচিক করে। নীল আকাশে উড়ে যায় একঝাঁক সাদা বক। পুকুরে ভাসে শাপলা-শালুক নামের কয়েকটি জীবন্ত ফুল, গাছে গাছে পাখিদের গান। আর হাওয়ায় ভাসে ৩০ লাখ মানুষের রেখে যাওয়া লাল সবুজের নিশান। যা মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতার মধু চুষে খাওয়া মানুষের দায়িত্ববোধ। আর সঙ্গত কারণেই বলতে হয় কবির সেই দু’টি পঙ্ক্তি-
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’
(সংগ্রহ : কবিতা-আদর্শ ছেলে, কুসুম কুমারী)

বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের দেশের প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব কিন্তু স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। এখানে সরলের মতো কোনো প্রথম ব্রাকেট এবং দ্বিতীয় ব্রাকেট বলে কিছু নেই। তবে আছে প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্নতা- অর্থাৎ, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে। দায়িত্বের ঝুলিটা কিন্তু সবাকেই পারস্পরিক ভাগাভাগি করে বহন করতে হবে। আবার সেই দায়িত্ব পালনের জন্য বড় প্রয়োজন ‘দেশপ্রেম’। তাইতো কবি মনিরুজ্জামানের কথায় বলতে হয়-
কবিতায় আর কি লিখব?
যখন বুকের রক্তে লিখেছি
একটি নাম বাংলাদেশ।
(কবিতা : শহীদ স্মরণে- মো: মনিরুজ্জামান)
এখানে কোনোভাবেই দেশপ্রেম ফিকে হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুযোগ আছে আরও গাঢ় করার। আর যার জন্য বড় ভূমিকা রাখতে পারে কবিতা। যে কাজটি যুগ যুগ ধরে করেছেন আমাদের কালের সাক্ষীগণ। তবে পাঠক মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, দেশপ্রেমের জন্য কবিতার কথাই শুধু কেন বলছি! দেশপ্রেমের চেতনা জাগাতে রয়েছে আরো অনেক ইতিহাস বা সাহিত্যের অন্যান্য বিভাগ। সেগুলোওতো দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে। হ্যাঁ অবশ্যই পারে, পেরেছে এবং পারবেও-তাতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। তবে যুগের ঘড়ির কাঁটাটার সাথে বর্তমান প্রজন্ম বিনোদনের হেতু হিসেবে, যেভাবে প্রযুক্তির (কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি) পিছনে ঘুরছে। তাতে করে বড় বড় ইতিহাস পড়তে তাদের কতটুকু আগ্রহ আছে; সেটিই ভাববার বিষয়। কিন্তু কবিতা যেহেতু সেই তুলনায় আকারে ছোট-পাঠককে পড়তে, বুঝতে এবং আবৃত্তির মাধ্যমে দেশপ্রেমে প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে সহযোগিতা করে। এ ছাড়া আছে আরো একটি আশার বাণী- পাঠক যদি কবিতার প্রেমে পড়ে, ঠিক একসময় সাহিত্যের বা ইতিহাসের অন্যান্য শাখাগুলোর প্রতি তৃষ্ণা বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তাই কবিতা হতে পারে দেশপ্রেম চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার অন্যতম পদক্ষেপ। অবশ্য এই ফাঁকে একটু জেনে যাওয়া যাক দেশপ্রেমটা কী?

দেশপ্রেম বলতে বোঝায় নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসা। অর্থাৎ, দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে দেশপ্রেম বলে। দেশের প্রতি আজন্ম আকর্ষণ থেকেই দেশপ্রেমের উৎপত্তি। দেশপ্রেম তো মায়ের প্রতি ভালোবাসার শামিল। দেশপ্রেম দেশের মানুষকেও ভালোবাসতে শেখায়। দেশপ্রেম বলতে যে শুধু যুদ্ধ করাকেই বোঝায় তা কিন্তু নয়। দেশপ্রেমের সিলেবাসটা অনেক বড়। যেমন : বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলায় জিতলে ভালো লাগে। আবার দেশের মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখলে খুব খারাপ লাগে, এসব উপলব্ধিগুলোও কিন্তু নিঃসন্দেহে দেশপ্রেমের শামিল।
আশা রাখি দেশপ্রেম সম্পর্কে আমরা স্বল্প পরিসরে হলেও কিছুটা পরিষ্কার হলাম। প্রকৃতপক্ষে এই দেশপ্রেম মানুষের মধ্যে ছিল বিধায় দেশটা বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে স্বাধীন হয়েছে। কারণ দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়েই মানুষ নিজেকে দেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তাই বর্তমান প্রজন্মের জন্যও দেশপ্রেমটা মনেপ্রাণে ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি। সে ক্ষেত্রে মনের মধ্যে আঁকতে হবে মুক্তিযুদ্ধের জ্বলজ্বলে চিত্র। কবির ভাষায়,
‘বিষম দামাল দিনগুলি ফিরে আসে বারবার,
বারবার কল্লোলিত আমাদের শহর ও গ্রাম।’
(কবিতা : বারবার ফিরে আসে, শামসুর রাহমান)।
হ্যাঁ কবি একদম ঠিক কথাই বলেছেন, একাত্তরটা এখনো বাজে কানে, ব্যথা অনুভব হয় বুকে, চোখে ভেসে ওঠে বীভৎস সব দৃশ্য। তবে তার জন্য তো অবশ্যই একাত্তর বা সংগ্রাম সম্পর্কে জানতে হবে। আর জানতে হলেই পড়তে হবে কবিতাগুলো। যেমন : রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ভাষায়,
‘তন্দ্রার ভিতর আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,

নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ।
মুণ্ডুহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বীভৎস শরীর।’
(কবিতা : বাতাসে লাশের গন্ধ)।
এই পঙ্ক্তি দু’টির শক্তি যেমন প্রকৃত যুদ্ধের চিত্রটাকে উপলব্ধি করাতে সক্ষম, ঠিক একইভাবে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্ভূত করতেও সফল।
আবার শামসুর রাহমানের কথাই ধরুন,
‘স্বাধীনতা তোমার জন্য হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্যথালা হাতে বসে আছে পথের ধারে।’
(কবিতা : তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা-শামসুর রাহমান)
পঙ্ক্তিগুলো যেন বুকটাকে পুরো ঝাঁজরা করে দেয়! তাতিয়ে দেয় ও দেশকে ভালোবাসতে শেখায়।
এবার আমাদের আরো একটি দায়িত্ব হলো কবিতার প্রতি কিভাবে প্রজন্মকে আসক্ত করা যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য। বর্তমানে ইংরেজিতে ছেলেমেয়েদেরকে পারদর্শী করার ম্যারাথনে নেমে, তাদের মন থেকে জল্লাদের মতো আমরা কেড়ে নিচ্ছি কবিতার প্রতি মায়া, মমতা ও স্নেহ। জানি না এই অধিকার আমাদের কে দিলো বা ভুল শিক্ষাটাই বা কোথায় পেলাম! তবে সেই কথার জল ঘোলা না করে বলতে চাই। এখনও সময় আছে, শিশুদের বাংলা পাঠ্যপুস্তকের কবিতাগুলোকে তোতা পাখির মতো শেখাতে হবে এবং মনে ধরাতে হবে দেশপ্রেমের মৌচাক। যেমন :
‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,
সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।’
(কবিতা : আমার পণ, কবি : মদন মোহন তর্কালঙ্কার)
আবার শামসুর রাহমানের কথায়,
‘স্বাধীনতা তুমি বাগানের ঘর, কোকিলের গান
বয়সী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।’
(কবিতা : স্বাধীনতা তুমি, শামসুর রাহমান)
আহা! মনটা একদম জুড়িয়ে যায়। এমন পঙ্ক্তি পাঠ করলে দেশের প্রতি ভালোবাসা না জন্মানোর কোনো সুযোগই নেই। এভাবে আরো অনেক কবিতার মাঝে ডুব দিতে হবে একালের প্রজন্মকে, তাহলেই কুড়িয়ে পাবে দেশপ্রেমের মুক্তা। এভাবেই তারা অবশ্যই দেশকে ভালোবাসতে বাধ্য হবে। এগিয়ে আসবে মানবতার কল্যাণে। যার রেশ ছড়িয়ে পড়বে যুগ থেকে যুগে। তাই আর দেরি নয়, আর ভুল নয় এবং আর নয় এক রত্তি সন্দেহ। তোতা পাখির মতো শিশু থেকেই শুরু হোক কবিতার পড়া এবং আবৃত্তির চর্চার অনুশীলন। আর সেই চেতনায় জেগে উঠুক সবার মনে দেশপ্রেম। আমাদের দেশটা হোক একটি শান্তির নীড়।


আরো সংবাদ



premium cement
বার্লিনে ফিলিস্তিনিপন্থী ক্যাম্প ভেঙে দিয়েছে জার্মান পুলিশ সেভ দ্য চিলড্রেনে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ বনশ্রীতে কিশোরী গৃহকর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার সৌদি আরবে আরব ও ইইউ কূটনীতিকদের গাজা নিয়ে আলোচনা ইউক্রেনকে দ্রুত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দিতে যাচ্ছে পেন্টাগন ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৯ মিয়ানমারের জাতীয় গ্রন্থাগারে বাংলাদেশ দূতাবাসের বই অনুদান ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশী প্রভুদের দাসত্ব করছে : কাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সুলতান মাহমুদকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩

সকল