০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ব ই আ লো চ না

ফজলুল হক তুহিনের ‘উজানে উৎস’ : অক্ষয় জীবনের গান

-

কবিতার সন্ধিৎসু পাঠকের কাছে ফজলুল হক তুহিন (জন্ম : ১৫ জানুয়ারি ১৯৭৮) নামটি এখন আর অপরিচিত নয়। প্রায় নিয়মিতই তার কবিতা পত্রস্থ হচ্ছে এবং প্রায় বছরেই তার কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে চলেছে। ‘উজানে উৎস’ (২০১৯) ফজলুল হক তুহিনের সপ্তম কবিতার বই। এর আগে আমি তার, ‘সুন্দরের সপ্তপদী’ (২০১৬) ও ‘দীর্ঘ দুপুরের দাগ’ (২০১৬) নামে দু’টি কাব্যগ্রন্থ পড়েছি। ‘উজানে উৎস’সহ তার মোট তিনটি বই পড়া হলো আমার। ফলে তুহিনের কবিতা নিয়ে কথা বলা সহজতর হলো আমার পক্ষে। কেননা ৮/১০টি কবিতার, এমনকি পুরো একটা গ্রন্থের সবগুলো লেখার ভিত্তিতেও যখন মন্তব্য করা হয়, তখনো কবির প্রবণতার কিছু কিছু দিক অনালোচিত থেকে যেতে পারে।
লক্ষ করেছি, ফজলুল হক তুহিনের কবিমনটি খুবই সক্রিয়। তিনি এ সময়ে যথেষ্ট সৃষ্টিশীলÑ গদ্য-পদ্য দু’দিক থেকেই। এখনো তিনি অনূর্ধ্ব তেতাল্লিশ। আর এমন বয়সে এটাই তো স্বাভাবিক। অভিজ্ঞতা থেকে জানি, যারা ৪০-৪৫ বছরের মধ্যেই সৃজনশীলতার খরায় ভোগেন এবং হোঁচট খেতে খেতে অবশেষে মুখ থুবড়ে পড়েন, তারা সচরাচর আর এগোতে পারেন না। তুহিন কিন্তু ধারাবাহিকভাবে সৃজনশীল। তার কবিতায় এগিয়ে যাওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট।
উজানে উৎসের পাতায় পাতায় দেখতে পাচ্ছি রোমান্টিক আকাক্সক্ষা, উচ্ছ্বাস, স্বপ্ন ও উজ্জীবন মন্ত্র। আধুনিক কবিরা প্রধানত নৈরাশ্যবাদী। তুহিনের অবস্থানের বিপরীতে। আধুনিকতার অনেক বৈশিষ্ট্য সঙ্গে নিয়েও তিনি শেষ পর্যন্ত আশার কথা বলেন। পড়–ন তার কবিতার কিছু পঙক্তিÑ
ক. পরীববি, আমি বিমুগ্ধ, বিস্মিত, হতবাক/তুমি শোনালে কবিতাÑ মার্বেল পাথর আর কষ্টি পাথরের গায়ে বর্ণমালা হয়ে গেলো/তুমি কথা বললে ঝর্নার গানের ধ্রুপদী সুরে সুরে/কথা শেষ না হতেই সূর্য ডুবে যাচ্ছে দূরে। [লালবাগ কেল্লায় একটি বিকেল]
খ. ‘তোমার গৌরবে হাঁটাপথে মজনুর মতো/হৃদয়ের কার্পেট বিছিয়ে দিলাম।’ [বসন্তের সকালে]
অন্য দিকে সহজ জীবনদর্শন, দূষণলাঞ্ছিত নগর ও নগরের নিসর্গ, সন্ধ্যার মর্মস্পর্শী চিত্রÑ এসবও বেশ সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে তার কবিতায় :
ক. ‘সবকিছু পুতুল নাচের ইতিকথা/হাস্যকর হয়ে ওঠে জীবনের অমরতা।’ [চিরকাল]
খ. ‘রাস্তার দু’পাশে আইল্যান্ডে নির্যাতিত বৃক্ষের শাখায়/হঠাৎ দিয়েছে দেখা নতুন পাতার উৎসব/জরা মরা দূষণের গ্রাস পেরিয়ে আবার/এসেছে নগরে বসন্ত বাতাস।’ [তবুও বসন্ত]
গ.‘মেহগনি গাছের পাতায় অন্ধকার নেমে ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে তাড়াতাড়ি।’ [পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে]
বইয়ের নাম কবিতা ‘উজানে উৎস’ এর তৃতীয় স্তবকে লেখক বলেছেন জেনে রেখো : ‘জেনে রেখো কোন মুক্তি সহজে নেই পৃথিবীতে ভাটিয়ালি গানে।’ এর অর্থ কবি উজানের পক্ষে। উজানে কিসের উৎস? অক্ষয় আশাবাদের ও জীবনের উজ্জীবন সূত্রের। এটা এই কাব্যগ্রন্থের মূল সুর যা পূর্বতন গ্রন্থগুলোতেও ধ্বনিত হয়েছে কিন্তু এই বইয়ে তা একটা সামগ্রিক আকার পেয়েছে। আমি কবি হিসেবে ফজলুল হক তুহিনের উত্তরণের বিষয়ে সত্যিই আশাবাদী।
উজানে উৎস ॥ ফজলুল হক তুহিন
প্রকাশক : পরিলেখ প্রুকাশনী, প্রচ্ছদ : সাইফ আলি

 


আরো সংবাদ



premium cement