২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আল্লাহর নৈকট্য লাভে সিজদা

-

ঈমানের পরে ইসলামে সর্বাপেক্ষা জরুরি কাজ হচ্ছে সালাত বা নামাজ আদায়। নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ এবং আমলের ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে। এ মর্মে যথাক্রমে দু’টি হাদিস উল্লেখযোগ্য। ১. রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের ওপর। আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্যদান ও মুহাম্মদ সা: আল্লাহর রাসূল, নামাজ আদায় করা, জাকাত প্রদান, হজ ও রমজানের রোজা।’ (বুখারি-৮) ২. রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দা প্রথম নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস-১৬৬১৪) নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। এ নামাজ আমরা সবাই দৈনন্দিন আদায় করি না। যারাও করি, তাদেরও বেশির ভাগেরই নামাজের অবস্থা শোচনীয়। নামাজে পূর্ণাঙ্গতা বা পূর্ণাঙ্গ নামাজ আদায় করাই মুখ্য। নামাজের পূর্ণাঙ্গতার বিভিন্ন আঙ্গিক রয়েছে। যেমন- পবিত্রতা-সংশ্লিষ্ট পূর্ণাঙ্গতা অর্থাৎ সুন্দররূপে অজু করা। ওয়াক্তগত পূর্ণাঙ্গতা, অর্থাৎ সময়মতো নামাজ আদায় করা, এটিও জরুরি। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘মুমিনদের ওপর সুনির্দিষ্ট সময়ে নামাজ ফরজ।’ (সূরা নিসা, আয়াত-১০৩) আবার নামাজের অভ্যন্তরীণ অনেক কর্ম সঠিকভাবে সম্পাদনের ওপর নির্ভরশীল নামাজের পূর্ণাঙ্গতা। রুকু ও সিজদাহ সুস্থিরভাবে আদায় করা এর অন্যতম। সূরা-কিরাত সঠিক উচ্চারণে আদায় করাও পূর্ণাঙ্গতার অংশ। তবে সম্মানিত পাঠকদের আজকে নামাজের অন্তর্গত তিনটি এমন বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যে ব্যাপারে আমরা অনেক মুসল্লিই যতœবান হওয়া তো পরের কথা, বিষয়গুলো আমাদের জানাও নেই। বিষয় তিনটি হচ্ছে, সিজদাহর স্বরূপ উপলব্ধি; অধিক পরিমাণে সিজদাহ; দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠক ও দোয়া।
সিজদা কী : সিজদার স্বরূপ উপলব্ধিতে না এলে এর বিস্ময়কর গুরুত্ব অনুধাবন না করতে পারলে এর প্রতি যতœবান হওয়াও সম্ভব হবে না। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্য লাভ করে বান্দা সিজদারত অবস্থায়।’ (সহিহুল জামে, হাদিস-১১৭৫) পৃথিবীতে একজন বান্দা যত অবস্থায় থাকে, তন্মধ্যে নামাজের অবস্থায়ই বান্দা আল্লাহর অধিক নৈকট্য লাভ করে। পুরো নামাজের মধ্যে আবার সিজদারত অবস্থায় বান্দা সব থেকে বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। যার অর্থ, সিজদাই বান্দাকে সবচেয়ে বেশি আল্লাহর নিকটবর্তী করে। রাসূলুল্লাহ সা:-এর এ হাদিসে সেটিই বলতে চেয়েছেন। এখান থেকে সিজদার গুরুত্ব অনুধাবন করে আমাদের আরো বেশি সময় নিয়ে সিজদাহ করা, সিজদায় আরো বেশি নিবেদিত হওয়া, নিয়মিত তাসবিহ ছাড়াও আরো দোয়া পাঠ করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সা: সিজদায় বেশি বেশি দোয়া করতেও বলেছেন। (সূত্র : প্রাগুক্ত হাদিসের শেষাংশ)
সিজদার আধিক্য কাম্য : জামাতে নামাজ আদায়কালে একটি বিষয় লক্ষ করা যায়। সেটি হলো- ইমাম সাহেব সিজদায় রয়েছেন, তখন রাকাত পাওয়া যাবে না, এটি ভেবে অনেক মুক্তাদিই ইমামের সাথে সিজদায় শরিক হন না। দাঁড়িয়ে থাকেন। এটি অনুচিত। প্রথমত, রাসূলুল্লাহ সা: মুমিনদের যত বেশি সম্ভব সিজদা করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের অবশ্যই আল্লাহর জন্য বেশি বেশি সিজদা করা জরুরি। কেননা, আল্লাহর জন্য তোমাদের করা প্রতিটি সিজদার পরিবর্তে তিনি তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং একটি করে গোনাহ মিটিয়ে দেন।’ (মুসলিম, হাদিস-৪৮৮) এ হাদিস দ্বারা অধিক সংখ্যক সিজদা করতে মুমিনদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাই যত বেশি সম্ভব সিজদাহ করা উচিত। দ্বিতীয়ত, ইমাম সাহেব সিজদায় থাকলে মুক্তাদির জন্য তার অনুসরণ জরুরি। রাকাত পাওয়া গেল কি না, সেটি বিবেচ্য নয়। এ ব্যাপারেও হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। নবী সা: বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে আসবে, তখন ইমাম যে অবস্থায় থাকেন, সে যেন তার অনুসরণ করে।’ (তিরমিজি-৫৯১)
দুই সিজদার মাঝে করণীয় : দুই সিজদার মধ্যখানে যেখানে একটু সুস্থিরভাবে বসার চর্চা আমাদের অনেকের মধ্যেই নেই, সেখানে এ সময় গুরুত্বপূর্ণ দোয়া পাঠ করার কথা ভাবাই যায় না। হাদিসে এসেছে, নবী সা: উভয় সিজদার মাঝের সময়টায় এতটা দীর্ঘ সময় ধরে উপবেশন করতেন যে, প্রত্যক্ষদর্শীরা ভাবত তিনি দ্বিতীয় সিজদা করতে ভুলে গেছেন! এ সময় অবশ্য তিনি একটি দোয়া পাঠ করতেন। তিনি দুই সিজদার মাঝে বসে বলতেন- ‘হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথ দেখান, আমাকে রিজিক দান করুন।’ দোয়াটির আরবি উচ্চারণ এরূপ : আল্লাহুম্মাগ ফিরলি ওয়াহদিনি ওআফিনি, ওয়ারজুকনি। (তিরমিজি, হাদিস-২৮৪) এ দোয়াটির মধ্যে একজন মানুষের জন্য ইহ ও পরকালীন প্রয়োজনীয় সব কিছুর সমন্বয় ঘটেছে। তাই আমাদের উচিত দুই সিজদার মাঝে সুস্থির হয়ে বসা এবং এ দোয়াটি পাঠ করে দুনিয়া ও আখিরাতের সমূহ নিয়ামত লাভ করা।

লেখক : মুহাদ্দিস, সিরাজুল উলুম মহিলা মাদরাসা, সাভার


আরো সংবাদ



premium cement