২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মুহাম্মদ সা: সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী

-

হজরত মুহাম্মদ সা: সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তাঁর চেয়ে সেরা কোনো নবী নেই এবং তিনিই সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নয়; বরং সে আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ (সূরা আল আহজাব-৪০)। আয়াতে বর্ণিত খাতাম অর্থ- সমাপ্ত বা শেষ। খাতামুন নাবিয়িন অর্থ- সর্বশেষ নবী। হজরত ইবনে আব্বাস রা: আয়াতের মর্মার্থ প্রসঙ্গে বলেন, নবুয়তের ধারা যদি হজরত মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত সমাপ্ত না হতো, তবে তাকে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের পিতা করতেন, যে তার মহাতিরোধানের পর নবী হতো। হজরত আতা বর্ণনা করেন, হজরত ইবন আব্বাস রা: বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, হজরত মুহাম্মদ সা:-ই শেষ হবে, সেহেতু তিনি তাঁর কোনো পুত্রকেই প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় পৌঁছাননি। ইবনে মাজার বর্ণনায় এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেছেন, রাসূল সা: তাঁর পুত্র হজরত ইবরাহিম সম্পর্কে বলেছেন, সে বেঁচে থাকলে নবী হতো। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘রিসালাতের দায়িত্ব কার ওপর অর্পণ করতে হবে তা আল্লাহ ভালোভাবেই জানেন’ (সূরা আল আনয়াম-১২৪)। সূরা বাকারার ৪ নম্বর আয়াতে মুত্তাকিদের গুণ সম্পর্কে বলা হয়েছে- মুত্তাকি হলো তারা যারা আপনার ওপর অবতীর্ণ কিতাব এবং আপনার পূর্ববর্তী কিতাবের প্রতি বিশ^াস স্থাপন করে। এখানে এ কথা বলা হয়নি, যা আপনার পরে অবতীর্ণ হবে অথবা যা আপনার পাশাপাশি আরেকজনের ওপর অবতীর্ণ হবে। এর মর্মার্থ হলো- কাদিয়ানিরা যে মনে করে তাদের নবীর কাছে আল্লাহ তায়ালা নতুন বাণী পাঠিয়েছেন, তাদের এ দাবি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও পরিত্যাজ্য। আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার ২, ৩ ও ৪ আয়াতে নাস্তিকতা থেকে শুরু করে ইসলামের যতগুলো বিকৃত গোত্র রয়েছে যেমন- শিয়া, রাফেজি, কাদিয়ানি, খারেজি ইত্যাদি সবার যুক্তি-তর্ক বাতিল করে দিয়েছেন।
মহানবী সা: যে শেষ নবী এ প্রসঙ্গে ৬৫টি হাদিস রয়েছে যা ৩৭ জন সাহাবি বর্ণনা করেছেন, যেমন-
১. হজরত উবাই ইবন কাব রা: তার পিতা কাব রা: হতে বর্ণনা করেন - মহানবী সা: বলেন, ‘নবীদের মধ্যে আমার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ওই ব্যক্তির দৃষ্টান্তের মতো যে একটি বাড়ি তৈরি করেছে এবং তা সম্পূর্ণরূপে ও উত্তমভাবে নির্মাণ করেছে, কিন্তু তাতে একটি ইট পরিমাণ জায়গা খালি রয়েছে। দর্শনার্থীরা চার দিকে ঘুরে দেখে নির্মাণকাজের প্রশংসা করেছে। কিন্তু তারা বলছে, যদি এ স্থানটি খালি না থাকত, তাহলে কতই না সুন্দর হতো। সুতরাং নবীদের মধ্যে আমি ওই নবী যিনি ওই ইটের সাথে তুলনীয়’ (আহমদ-৫/১৩৬, তিরমিজি-১০/৮১)।
২. হজরত আনাস ইবন মালিক রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, মহানবী সা: বলেছেন, ‘রিসালাত ও নবুয়ত শেষ হয়ে গেছে। আমার পরে আর কোনো নবী-রাসূল আসবে না। সাহাবিদের কাছে তাঁর এ কথাটি খুবই কঠিন বোধ হলো। তখন তিনি বললেন, কিন্তু সুসংবাদ দানকারীরা থাকবে। সাহাবিরা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সুসংবাদদাতা কি? তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘মুসলিমদের স্বপ্ন, যা নবুয়তের একটি অংশবিশেষ (আহমদ-৩/২৬৩, তিরমিজি-৬/৫৫১)।
৩. হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমাকে ছয়টি জিনিসের মাধ্যমে সমস্ত নবীদের ওপর ফজিলত দান করা হয়েছে- ক. আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থ ও সর্বজনীন কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে; খ. প্রভাব দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে; গ. আমার জন্য গণিমত বা যুদ্ধলব্ধ মাল হালাল করা হয়েছে; ঘ. আমার জন্য সারা দুনিয়ার মাটিকে মসজিদ ও অজুর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে; ঙ. সমস্ত সৃষ্টির জন্য নবী করে পাঠানো হয়েছে; চ. আমাকে সমস্ত মানব জাতীর জন্য পাঠানো হয়েছে এবং আমার দ্বারা নবী আগমনের ধারাবাহিকতা শেষ করা হয়েছে’ (সহিহ মুসলিম-১/৩৭১, তিরমিজি-৫/১৬০, ইবনে মাজাহ-১/১৮৮)।
আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করার মাধ্যমে তার দ্বীনকে পূরিপূর্ণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম’ (সূরা আল মায়েদা-৩)।
অন্য কোনো নবীর প্রয়োজন নেই : যেহেতু আল্লাহ তায়ালা হজরত মুহাম্মদ সা:-এর মাধ্যমে দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন এবং পবিত্র কুরআন ও মহানবী সা:-এর অগণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, হজরত মুহাম্মদ সা: শেষ নবী। ফলে যে বা যারাই তাঁর পরে নবুয়তের দাবি করবে তারা মিথ্যুক, ভণ্ড, প্রতারক ও কাফির বলে বিবেচিত হবে।
মহানবী সা: বলেছেন, ‘কিয়ামতের আগে অনেক ভণ্ড নবীর আবির্ভাব ঘটবে। তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাকবে। সর্বপ্রথম ভণ্ড ও ভুয়া নবুয়তের দাবি করেছিল মুসাইলামাতুল কাযযাব। সে ইয়ামামার যুদ্ধে নিহত হয়। তারপর একে একে নবুয়তের দাবি করে আসওয়াদ আনাসি, তুলায়হা বিনতে খুয়াইলিদ আসাদি, সাজাহ বিনতে হারিস তাগলিবি, মুখতার বিন আবি ওবায়দ সাকাপি, হারেস বিন সায়েদ, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি প্রমুখ। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান নামক শহরে জন্মগ্রহণ করে। ১৮৯১ সালের ২২ জানুয়ারি সে নিজেকে মসিহ ঈসা, ১৮৯৪ সালের ১৭ মার্চ ইমাম মাহদি এবং ১৯০৮ সালের ৫ মার্চ নিজেকে নবী হিসেবে ঘোষণা করে। সে একজন ভণ্ড, প্রতারক ও মিথ্যাবাদী। তাকে যারা নবী হিসেবে মানবে তারা আল্লাহর বাণী এবং মহানবী সা:-এর ৬৫টি হাদিসকে অস্বীকার করল।
সুতরাং মহানবী সা:-এর পর আর কোনো নবী আসবে না এ বিষয়টি পবিত্র কুরআন ও অসংখ্য হাদিসে প্রমাণিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শেষ জামানার সব ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে রক্ষা করুন, আমীন!
লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী


আরো সংবাদ



premium cement
বসুন্ধরা গ্রুপে চাকরির সুযোগ মাদারীপুরে মাহিন্দ্র উল্টে চালকসহ নিহত ২ জর্ডান ও ইসরাইল সফরে যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবার আগে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের মার্কিন ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভ থেকে গ্রেফতার ৯০০ নির্বাচনের আগে ‘সিএএ’ চালু করে ভোট টানার কৌশল ব্যর্থ বিজেপির ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ পালনের আহ্বান কানাডায় বেকারত্ব বিদেশী শিক্ষার্থীদের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে রাফাতে ইসরাইলি হামলায় এক পরিবারের ৯ সদস্য নিহত আজ ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী গ্রেফতারের মধ্যেই মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত

সকল