২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘোর আঁধারের ঘর বসতি

-

আমরা মানুষ। কারো ভাষায় সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু কেউ কি কখনো ভেবে দেখেছি, আমাদের কেন এই ‘সেরা’ ট্যাগ দেয়া হলো? কেন মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বলা হয়? যারা একটু হলেও চিন্তা করে তারা হয়তো উত্তর দেবে, মানুষের মস্তিষ্ক তথা বিবেক আছে। তার বুদ্ধির জন্য সে অন্য সব পশুর থেকে উত্তম। কিন্তু সবাই কি তাই? যদি তাই-ই হবে তাহলে আল্লাহ তায়ালা কেন বললেন, ‘তাদের আমি একটি কলব দিয়েছি, তবে তা দ্বারা তারা অনুধাবন করে না। তাদের এক জোড়া চোখ দিয়েছি, তবে তারা দেখে না, তাদের কান দিয়েছি, তা দিয়ে তারা শোনে না। এরা হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তুর মতো, বরং তার থেকেও নিকৃষ্ট এবং এরাই হলো গাফেল’ (সূরা আল আরাফ-১৭৯)।
তাহলে পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের আলোকে আমরা প্রমাণ পেলাম সব মানুষই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ নয়। তাহলে কারা সেই অভাগা যারা গবাদিপশুর মতো, বরং তাদের থেকেও নিকৃষ্ট? মানুষের শরীরটাই আসল মানুষ নয়। শরীরের মধ্যে যে আত্মা বা রূহ্ আছে সেটাই আসল মানুষ। শরীরটা হলো সেই গবাদিপশুর মতো। আর আমাদের আত্মা বা রূহ্, যাকে বিবেক বলে, সেটা ওই শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে। যারা শরীর নামক পশুর আবদার মেটাতে ব্যস্ত তারা দুনিয়ায় মজে যায় আর তারা যারা শরীরের আবদারগুলো না মেনে বিবেককে প্রশ্রয় দেয় তারাই আসল মানুষ। মনে হতে পারে দেহের আবার আবদার কী? প্রতিদিন ফজরের সময় যখন আমরা নামাজের জন্য উঠতে যাই, তখন দেহ বলে, আরেকটু শুয়ে থাকি পরে উঠব। এটাই দেহের আবদার। যে দেহের চাহিদা মেনে নেয় সে নিশ্চিতভাবেই তিগ্রস্ত হয়। আর যে তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে শয্যা ত্যাগ করে তার দিনটা অবশ্যই ভালো কাটে। আজ আমাদের সমাজের দিকে আমরা দেখব, অধিকাংশ মানুষই দেহের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত এবং এরাই অন্ধকারে আছে। আজ আমি যদি জিজ্ঞেস করি যে, ভাই তোমার জীবনের উদ্দেশ্য কী? জবাবে হয়তোবা কেউ বলবে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ডিসি, এসপি হওয়া। কিন্তু অধিকাংশ লোক এর কোনো উত্তরই দিতে পারবে না। তারা কেউ সাহস করে বলতে পারে না। ‘আমার উদ্দেশ্য জান্নাতে যাওয়া।’ তাহলে এই উন্নত মস্তিষ্ক দিয়ে কী লাভ হলো আমাদের? আমরা অনেকেই আছি যারা কখনো এই ল্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তাই করি না।
তাহলে কি আমরা কুরআনের ওই আয়াতের হিসাবে পশুর মতো হয়ে যাচ্ছি না? শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সঠিক। আজ আমরা আমাদের জীবনের কোনো গন্তব্য খুঁজে পাই না। খোঁজার চেষ্টাও করি না। তাহলে আমাদের জীবন কিভাবে গোছানো হবে? যাদের কাছে ডাক্তার হওয়া জীবনের ল্য, ইঞ্জিনিয়ার হওয়া জীবনের উদ্দেশ্য। বড় বড় সরকারি পদগুলো গন্তব্য, তারা যখন ওই গন্তব্যে পৌঁছে যাবে তখন তাদের টার্গেট পূরণ হয়ে গেলে তারা কী করবে? তারা তখন আবার বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে? ঘুষ খাবে, দুর্নীতি করবে? কিন্তু এটা জীবনের মানে হতে পারে না। সত্যিকারের মানুষ কখনো এমন চিন্তা করতে পারে না। তাই বলে আমি বলছি না যে, তুমি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হইও না। হও, তবে আগে তুমি তোমার গন্তব্য স্থির করো। পথ খুঁজে বের করো কোন পথে তুমি হাঁটবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন। ‘আর আমি মানুষ ও জিনকে শুধু আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি’ (সূরা আয যারিয়াত -৫৬)।
তাহলে কি একবাক্যে বলা যায় না যে, আমাদের ল হলো আল্লাহর ইবাদত করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। আমরা কি তবে বলতে পারি না আমাদের উদ্দেশ্য হলো সেই জান্নাত। অবশ্যই বলতে পারি। সেই পথ ধরে হাঁটতে হবে যে পথের শেষে রয়েছেন আমাদের রব আল্লাহ। এই পথে হাঁটার নামান্তর হলো সব বিষয়ে আল্লাহর হুকুম মানা। আমরা যারা নামাজ পড়েও মজা পাই না, তারা কি কখনো ভেবে দেখেছি কেন নামাজ আমাদের অন্তরে প্রশান্তি এনে দিতে পারে না। এর কারণ আমরা ঘোর আঁধারে বাস করছি, আমরা নামাজে মনোযোগী নই, নামাজ আমরা পড়ছি ঠিকই তবে একই সাথে হারাম কাজ করছি। আমরা নামাজ পড়ে বের হয়েই মাঠে গিয়ে হাঁটুর উপরে প্যান্ট তুলে ফুটবল খেলছি। নামাজ থেকে উঠেই সিনেমা দেখা শুরু করছি। নামাজ পড়া শেষ করেই বন্ধুদের আড্ডায় গিয়ে বান্ধবীদের নিয়ে রসালো আলাপ করছি। এমনকি আমরা মসজিদে বসে অন্যের গিবত করছি। তাহলে নামাজের হক আদায় হলো? আমরা তো সেই অন্ধকারে থেকে গেলাম। যখন জীবন থেকে সব কালো অধ্যায়গুলো আমরা দূর করে ঠেলে দিয়ে নতুন করে সাদাকে আলিঙ্গন করব, ঠিক তখন থেকেই ইবাদতের আসল মজা পাওয়া শুরু করব। আমাদের তাই আগে হারাম ছেড়ে দিতে হবে। একটি গ্লাসভর্তি বিষ আছে।
আমাকে যদি বলা হয়, ওই গ্লাসে শরবত গুলিয়ে নিয়ে আসো। আমাদের প্রথম কাজ হবে গ্লাসের বিষ টুকু ঢেলে ফেলে দেয়া তারপর গ্লাসে পরিষ্কারক দিয়ে গ্লাসটা সুন্দরভাবে ধুয়ে নেয়া। তারপর তাতে শরবত ঢালব। ঠিক তেমনিভাবে আগে আমাদের জীবন থেকে হারামের বিষ দূর করতে হবে তারপর তওবা ও প্রতিজ্ঞা নামক পরিষ্কারক দিয়ে নিজেকে পরিষ্কার করতে হবে। এর পরই জীবন নামক গ্লাসে হালাল নামক শরবত ঢাললে তবেই জীবনকে উপভোগ করতে পারব। বিষ আর শরবত যেমন একসাথে খাওয়া যায় না তেমনিভাবে হারাম ও হালাল একসাথে থাকলে জীবনকে উপভোগ করা যায় না। ইবাদতে মন আসে না, মজা লাগে না। তাই আজ এই মুহূর্ত থেকেই আমাদের ঘোর আঁধারের ঘরবসতি ত্যাগ করে সত্য পথের পথিক হতে হবে, সে পথে চলতে হবে। যে পথের শেষে অপোয় আছেন আমাদের রব।


আরো সংবাদ



premium cement