কোরবানি ইসলামের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির দিনগুলোতে কোরবানি না করে বরং সদকা করে দিলে কোরবানি আদায় হবে না। এই হিসাবে বলা যায়, এর কোনো বিকল্প নেই। তবে হ্যাঁ, বিশেষ কোনো কারণে কোরবানির দিনগুলোতে কোরবানি করতে না পারলে কাজা আদায় করবে। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম : ১৫/৪৯২-৫১৩)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সুতরাং তুমি নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো।’ (সূরা কাউসার-২)
কোরবানি ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও যারা কোরবানি করে না, তাদের ব্যাপারে এক হাদিসে এসেছে; আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যার কোরবানির সামর্থ্য আছে, তবুও সে কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ‘মুসলা’ (ঈদগাহ)-এ না আসে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩১২৩)
ওই আয়াত ও হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, কোরবানি করা একটি স্বতন্ত্র ওয়াজিব ইবাদত, এর কোনো বিকল্প নেই। প্রত্যেকটি ইবাদতকে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান এবং রাসূলুল্লাহ সা: কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি ও তরিকা অনুযায়ী করতে হবে। এর বাইরে নিজস্ব কোনো সিস্টেম বা পদ্ধতিতে আদায় করার সুযোগ ইসলামী শরিয়তে নেই।
পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এই দিনটিতে সামর্থ্যবান মুসলমানরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য পশু কোরবানি করেন। অত্যন্ত আনন্দ, উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় এই দিনটি।
করোনাসহ বন্যা ও ইত্যাদি বিপর্র্যয়ের কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই খারাপ যাচ্ছে। এতে জনগণ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সুযোগে অনেকে কোরবানির পরিবর্তে গরিব দুঃখীদের মাঝে ‘অর্থ দান’ এর পরামর্শ দিচ্ছে। যদিও আর্তমানবতার সেবা করা উত্তম কাজ ও প্রকৃত ধর্ম। কিন্তু কোরবানির মতো একটি ওয়াজিব বিধান এর জন্য ছেড়ে দেয়া যায় না। সুতরাং কোরবানি না করে, কোরবানির টাকা গরিব-মিসকিনদের মাঝে দান করে দিলে কোরবানি আদায় হবে না। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম : ১৫/৪৯০-৯১)
রাসূলুল্লাহ সা: নিজেও প্রত্যেক বছর কোরবানি করতেন।
হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ সা: ১০ বছর মদিনা শরিফে অবস্থান করেছেন, প্রতি বছর কোরবানি করেছেন। (মুসনাদে আহমদ-৪৯৫৫, সুনানে তিরমিজি-১৫০৭) কোনো দিন তিনি এ কথা বলেননি যে, এই বছর আমরা কোরবানি না করে, অর্থ দান করব। গরিব-অসহায়দের পাশে দাঁড়াব। কারণ, কোরবানি একটি স্বতন্ত্র ওয়াজিব ইবাদত। এর কোনো বিকল্প নেই। অর্থদানের মাধ্যমে কোরবানি আদায় হয় না।
তাছাড়া আল্লাহর রাস্তায় এই রক্ত প্রবাহিত করার বিষয়টিকে আল্লাহ তায়ালা ইসলামের একটি মৌলিক নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কুরআনে কারিমের সূরা হজের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এই কোরবানি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি নিদর্শন হিসেবে আমি করে দিয়েছি, এই নিদর্শন তোমরা বাস্তবায়ন করবে।’ (সূরা হজ : ৩৪-৩৭)
এক হাদিসে এসেছে, একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে এসে বিয়ের জন্য নিজেকে সোপর্দ করে দিলেন। একজন সাহাবি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই মহিলার সাথে আমার বিয়ে পড়িয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, তাকে মোহর দেয়ার মতো তোমার কাছে কি অর্থ আছে? সে বলল, আমার কাছে মোহর দেয়ার মতো তেমন কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, যাও তালাশ করো, লোহার আংটি হলেও নিয়ে এসো। তালাশ করে এসে সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে লোহার আংটিও নেই। তবে একটি চাদর আছে, আমি এর অর্ধেক তাকে দিয়ে দেবো। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, অর্ধেক চাদর দিয়ে সে কী করবে? তুমি পরিধান করলে, সে পারবে না আর সে পরিধান করলে তুমি পারবে না। ওই সাহাবি অনেকক্ষণ নিশ্চুপ বসে ছিলেন। যখন চলে যেতে লাগলেন, রাসূলুল্লাহ সা: তাকে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, কুরআনের কোন কোন সূরা তোমার মুখস্থ আছে? সে বলল, কুরআন কারিমের অমুক, অমুক সূরা আমার ইয়াদ আছে। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ওইগুলো তুমি ভালো করে পড়তে পারো? সে বলল, জি। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, তুমি তাকে কুরআনে কারিমের সূরাগুলো শিক্ষা দেবে, এর বিনিময়ে তাকে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম। (বুখারি শরিফ-৫০৩০, মুসলিম শরিফ-১৪২৫) হজরত সাহাবায়ে কেরামের মাঝে দরিদ্রতার এমন বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতেও রাসূলুল্লাহ সা: এ কথা বলেননি যে, এ বছর আমরা কোরবানি না করে, এর বিনিময়ের মাধ্যমে দরিদ্র সাহাবিদের বিয়ে সম্পাদন করব, তাদের সাহায্য করব।
এ থেকে প্রমাণিত হয়, ‘অর্থ দান’ এর নামে, কোরবানি না করা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। যারা এগুলো বলছে, তাদের উদ্দেশ্য গরিব অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতা নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামের একটি স্বতন্ত্র ওয়াজিব ইবাদত ও ইসলামের একটি ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব রকম ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, মদিনাতুল উলুম বসুন্ধরা, ঢাকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা