১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


জাকাত, সম্পদ বণ্টনের সুষম হাতিয়ার

-


জাকাত, অর্থনীতি বণ্টনে সুষম হাতিয়ার। জাকাত প্রদানে সম্পদের বৃদ্ধি, পবিত্রতা লাভ হয়। তা ছাড়া জাকাত হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত। সম্পদশালীদের ওপর নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর থাকলে জাকাত ফরজ। তা অস্বীকারকারী কাফের। ইরশাদ হচ্ছে-‘তোমরা সালাত কায়েম করো ও জাকাত আদায় করো। তোমরা উত্তম কাজে যা কিছু আগে প্রেরণ করবে আল্লাহর কাছে তা পাবে। তোমরা যা করো নিশ্চয়ই আল্লাহ তা জানেন দেখেন।’ (সূরা বাকারা-১১০)
ইসলাম ধর্মে প্রত্যেক মুসলমানকে সম্পদ সুষম বণ্টনের তাগিদ দিয়েছে। মানুষের হাতে সম্পদ জমা হলে, সমাজে ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়, অভাব অনটন বেড়ে যায়। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে, নৈতিক চরিত্রে বিপর্যয় ঘটে। মানুষ সম্পদ জমা করুক আল্লাহ তা চান না। তিনি চান, অর্থনীতির চাকা গতিশীল থাকুক। সম্পদে গরিবের অধিকার রয়েছে। তা আদায় করলে আল্লাহর রহমত, গরিবের মধ্যে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত, মানসিক ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়। ইরশাদ হচ্ছে- ‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা (জাকাত) গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন।’ (সূরা তওবা-১০৩) আল্লাহ আরো বলেন- ‘তোমরা সালাত কায়েম করো ও জাকাত আদায় করো।

তোমরা উত্তম কাজে যা কিছু আগে প্রেরণ করবে আল্লাহর কাছে তা পাবে। তোমরা যা করো নিশ্চয়ই আল্লাহ তার স্র্রষ্টা।’ (সূরা বাকারাহ-১১০) হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, বিশ^নবী সা:-এর দরবারে জনৈক বেদুইন ব্যক্তি এসে বললেন, আমাকে একটি আমল বাতলিয়ে দিন যা করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। নবী সা: বললেন, ‘তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সাথে কোনো কিছু শরিক করবে না, ফরজ সালাত আদায় করবে, ফরজ জাকাত দেবে এবং রমজান মাসে সাওম পালন করবে।’ বেদুইন বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ সে সত্তার কসম, আমি এ থেকে কিছু বৃদ্ধি করব না, কমও করব না। তখন ওই ব্যক্তি ফিরে যাওয়ার কালে নবী সা: বললেন, ‘জান্নাতি কোনো ব্যক্তিকে দেখে কেউ যদি আনন্দিত হতে চায়, তবে সে যেন এই ব্যক্তিকে দেখে নেয়।’ আব্দুল্লাহ ইবনে জায়দ বলেন, নামাজ ও জাকাত উভয়ই ফরজ। এ কাজে কোনো পার্থক্য নেই। রাসূল সা: বলেন, কেউ যদি আল্লাহর পুরস্কারের আশায় জাকাত দেয় তাহলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু যে জাকাত দিতে অস্বীকার করবে তার কাছ থেকে শক্তি প্রয়োগ করে জাকাত আদায় করতে হবে এবং আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী তার অর্ধেক সম্পত্তি নিয়ে নেয়া হবে।’ (বুখারি) ইরশাদ হচ্ছে- ‘যে তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও জাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।’ (সূরা তাওবা-১১) জারির ইবনে আব্দুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি নবী সা:-এর কাছে সালাত কায়েম করা, জাকাত দেয়া ও সব মুসলিমের কল্যাণ কামনা করার উপর বায়াত করি।’ জাকাত হালাল আর সুদ হারাম। সুদ সম্পদকে শোষণ করে। গ্রহীতা ধ্বংস হয়। সুদের মহাজন সম্পদশালী হয়। অপর দিকে, জাকাত ও সদকা শর্ত ছাড়া বিলিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন ও সাদকাকে বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ কাফের ও পাপীকে ভালোবাসেন না।’ (সূরা বাকারা-২৭৬) বিশ^নবী সা: বলেন, সাদকা ও জাকাত সম্পদ হ্রাস করে না।

জাকাত আদায়ের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির নৈতিক ও মানসিক উন্নতি সাধিত হয়। সমাজে শ্রেণীবৈষম্য দূর হয়। গড়ে ওঠে অসহায়, গরিব ও বিত্তবানদের মধ্যে সুমধুর সম্পর্ক। ধনী-গরিবের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। অন্তর পরিষ্কার ও পরিশুদ্ধ হয়। কৃপণতা থেকে মুক্তি লাভ করে। আল্লাহ বলেন-‘আপনি তাদের সম্পদ হতে সাদকাহ (জাকাত) আদায় করুন, যা তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।’ (সূরা তাওবা-১০৩) জাকাত প্রদানকারী আল্লাহর আনুগত্যশীল বান্দা হিসেবে প্রকাশ পায়। অভাবগ্রস্ত বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। বরকত ও বিনিময় লাভ করে। গোনাহগুলো মোচন হয়। অর্থের অন্ধ মোহ হ্রাস ও কৃপণতা দূর হয়। অপচয় থেকে মুক্ত, গরিব দুঃখীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হয়। জাকাত আদায়কারীর সম্পদ বৃদ্ধি ও পবিত্র করা ছাড়াও মহা পুরস্কার রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা ওই সম্পদ থেকে যা ব্যয় করবে তার পুরস্কার পুরোপুরি পেয়ে যাবে। আর তোমাদের প্রতি কোনো প্রকার জুলুম করা হবে না।’ (সূরা বাকারা-২৭২) তিনি আরো বলেন, ‘আর যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে আমি তাদের মহা পুরস্কার দেবো। যারা সালাত প্রতিষ্ঠাকারী, জাকাত প্রদানকারী হবে, তাদের মহান পুরস্কারে ভূষিত করা হবে।’ (সূরা নিসা-১৬২) শুধু পুরস্কার আর পুরস্কার। ইরশাদ হচ্ছে- ‘তোমরা জাকাত দেয়ার সময় যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে থাকো, তাহলে দ্বিগুণ প্রাপ্ত হবে।’ (সূরা রুম-৩৯) ‘আর তোমরা যা ব্যয় করবে আল্লাহ তার প্রতিদান দেবেন। তিনি উত্তম রুজিদাতা।’ (সূরা সারা-৩৯) আল্লাহ বলেন- ‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের দৃষ্টান্ত একটি শস্যবীজের মতো যা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয় এবং প্রত্যেক শীষে থাকে ১০০টি শস্যদানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ মহান দাতা ও মহা জ্ঞানী।’ (সূরা বাকারা-২৬১)
লেখক : সহকারী অধ্যাপক আরবি, পঞ্চগড় নুরুন আলা নুর কামিল মাদরাসা, পঞ্চগড়

 


আরো সংবাদ



premium cement