২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কুরআনের আলোয় জীবন গঠন

-

আমাদের পূর্বসূরিদের কুরআনের সাথে ছিল গভীর সম্পর্ক। শুধু পাঠে নয়, তাদের চিন্তা-চেতনায়, কাজে-কর্মে ছিল খোদায়ি বাণীর পূর্ণ প্রতিফলন। যেকোনো সমস্যায় তারা কুরআন থেকে সমাধান খুঁজতেন। রাতের পর রাত তাদের অনায়াসে কেটে যেত কুরআন গবেষণায়। একটি কিংবা দুটি আয়াতের মর্ম উদ্ধারে নির্ঘুম রাত কাটাতেন। জীবনের প্রতিটি পদে তারা কুরআন থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে কুরআনের ১০টি করে আয়াত ভালোভাবে শিখে নিতাম এবং তার মর্মার্থ পুরোপুরি বুঝে-শুনে আমলে পরিণত করার আগে সামনের আয়াত শিখতাম না। এভাবে আমরা পুরো কুরআন শিখতাম ও আমলে পরিণত করতাম।’ (জামেউল বায়ান-১/৩৫) তাবেয়ি হাসান বসরি রহ: বলতেন, ‘কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে অনুযায়ী আমল করার জন্য। তোমরা তোমাদের তিলাওয়াতকে আমলে পরিণত করো’ (মিফতাহু দারুস সায়াদাহ লি’ইবনিল কাইয়িম-১/১৮৭)।
প্রভুর সাথে স্থায়ী সম্পর্ক জুড়ে দেয় কুরআন। কুরআনের সাথে যার সম্পর্ক যত মধুর, রবের সাথে তার সম্পর্ক তত নিবিড়। মানুষের মনোজগত পরিবর্তন করে সোনার মানুষে পরিণত করে কুরআনুল কারিম। তাই মক্কার কাফেরদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল কুরআন থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখা। মক্কার মাথাওয়ালা কাফেররা সাধারণ মানুষকে কুরআন শুনতে বারণ করতেন যাতে সত্য গ্রহণে তাদের অন্তর খুলে না যায়। কুরআনুল কারিমে বিষয়টি মহান আল্লাহ সুন্দর করে তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘অবিশ্বাসীরা বলে, তোমরা এই কুরআন মনোযোগ দিয়ে শুনবে না, বরং শোরগোল তৈরি করবে। তবেই তোমরা বিজয়ী হতে পারবে’ (সূরা হামিম সিজদা-২৬)। তবুও কুরআনের বাণী আড়ালে থেকে শুনতেন তারা। এর জাদুকরী স্পর্শে তাদের অনেকের অন্তর শীতল হয়ে যেত। প্রভুর বাণীর কাছে সমর্পিত হতো চিন্তার জগত। এভাবে কুরআনের কাছে যে নিজেকে সঁপে দেয়, সে পায় মহান রবের সন্ধান।
অথচ আমাদের কাছে আজ কুরআন প্রাণহীন গ্রন্থে পরিণত হয়েছে। আমাদের কেউ কেউ কুরআন পড়তে পারলেও এর মর্মার্থ অনুধাবনে সচেষ্ট নয়। কুরআন গবেষণায় কার্যকরী উদ্যোগ নেই। এমনকি এর প্রয়োজনীয়তাও আমরা উপলব্ধি করি না। ফলে অনেক কিছু জানলেও কুরআনের মর্মবাণী না জানার কারণে রবের সাথে আমাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আমাদের জীবনে কুরআনের প্রতিফলন ঘটে না। আল্লাহ তায়ালা কুরআনের বহু স্থানে বলেছেন, ‘তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তরে তালা ঝুলানো?’ আরো বলেছেন, ‘আমি আপনার প্রতি বরকতময় গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি। যাতে তারা এর আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং বিবেকবানরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (সূরা সোয়াদ-২৯)।
হাসান বসরি আক্ষেপ করে বলতেন, ‘তোমরা এখন কুরআন তিলাওয়াতকে কয়েকটি মনজিলে পরিণত করেছ এবং রাতকে পরিণত করেছ উটের বাহনে। তোমরা এ উটের বাহনে চড়ে মনজিলগুলো অতিক্রম করে চলে যাছে। অথচ তোমাদের পূর্বসূরি ঈমানদাররা কুরআনকে তাদের রবের পক্ষ থেকে বার্তা হিসেবে গ্রহণ করতেন। তারা রাতে কুরআন নিয়ে গবেষণারত থাকতেন এবং দিনে তা কার্যকর করতেন’ (আত-তিবইয়ানু ফি আদাবি হামালাতিল কুরআন, পৃষ্ঠা-৫৪)। নবীজী সা: বলেছেন, ‘কুরআন পড়ো। মনে রেখো, কুরআন যা নিষেধ করে তা যদি বর্জন করতে না পারো, তবে তোমার কুরআন পড়াই হয়নি’ (মুসনাদুশ শামিয়িন-১৩৪৫)। কুরআন পড়া মানে বুঝে পড়া। কুরআন পড়া মানে আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা। কুরআন পড়া মানে কুরআন অনুযায়ী জীবন গঠন করা। -শিক্ষক ও কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement