২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের অবজ্ঞা

-

সন্তানদের প্রতি মা-বাবর অফুরন্ত ভালোবাসা থাকে। তাদের নিয়ে থাকে শত স্বপ্ন ।তাদের মুখে হাসি ফোটানোই হয়ে থাকে তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য। সন্তানদের সুখে রাখার জন্য মা-বাবা কত ত্যাগ শিকার করেন তা বলা নি®প্রয়োজন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সম্পর্ক বদলে যায়। জন্মদাতা মা-বাবাই হয়ে যায় সন্তানদের বোঝা, অবহেলার পাত্র। বর্তমানে অনেক পরিবারেই বৃদ্ধ মা-বাবাকে চরম অবহেলা ও অবজ্ঞা করা হয়। অনেকে তাদের বৃদ্ধ মা-বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আবার অনেক তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্পদের মালিকানা নিজের নামে লিখে নেয়া চেষ্টা করে। তাছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বৃদ্ধ মা-বাবরা নানাভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছেন। অকথ্য লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালেই ভেসে উঠে এমন সংবাদ। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে এর প্রধান কারণ সন্তানের ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব এবং বাস্তবতার অত্যুজ্জ্বল ঝলকানির মোহে শৈশবের স্মৃতিগুলো ভুলে যাওয়া।
বৃদ্ধ বয়সে সবাই সন্তানদের কাছ থেকে সদাচরণ প্রত্যাশা করে। কিন্তু সবাই কি তাদের সেভাবে গড়ে তুলে? ব্যক্তিগত একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত সন্তানদের মা-বাবাই বৃদ্ধ বয়সে অবহেলা ও অবজ্ঞার শিকার হন বেশি। তাই বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের কাছ থেকে ভালো আচরণ পেতে হলে তাদেরকে অবশ্যই সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। শিশুকালেই তাদেরকে ধর্মের প্রাথমিক শিক্ষা দিতে হবে যেন তাদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্যই সম্পর্কে জানতে পারে। পাশাপাশি ছোট বয়সেই যেন তারা ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, ইসলাম ধর্মেই মা-বাবার প্রতি অফুরন্ত শ্রদ্ধা, ভক্তি ও সদাচরণের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেমনÑ মা-বাবার প্রতি সদাচরণ প্রতি গুরুত্বারোপ করে আল্লøাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে। অতএব, তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করো। অবশ্যই তোমাদের সবাইকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে।’ (সূরা লোকমান-১৪)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘... তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের একজন অথবা উভয়ে যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহলে তুমি তাদের প্রতি উহ শব্দটিও উচ্চারণ করবে না এবং তাদের ধমক দেবে না। তুমি তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলো। আর তাদের প্রতি অনুকম্পায় বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া করো যেমন তারা আমাকে শৈশবে দয়াপরবশে লালন-পালন করেছিলেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩-২৪)
কোনো এক ব্যক্তি রাসূল সা:কে প্রশ্ন করলেন, আল্লøাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কাজ কোনটি? রাসূল সা: বললেন, ‘সময়মতো সালাত আদায় করা’। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, এরপর কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়? রাসূল সা: বললেন, ‘পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা’। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, এরপর কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়? রাসূল সা: বললেন, ‘আল্লøাহর রাস্তায় জিহাদ করা’। (সহিহ বুখারি)
সুতরাং যারা ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে চলবে ও বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবে তারা কখনো মা-বাবাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে না। করবে না অবহেলা-অবজ্ঞা।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মা-বাবার আচার-আচরণের প্রভাব পড়ে সন্তানদের ওপর। মা-বাবা যদি ভালো কাজ করেন তাহলে তার সন্তানরাও ভালো কাজ করার প্রতি আগ্রহ পাবে, ভালো কাজ করবে। তাই মা-বাবা যদি তার সন্তানের কাছ থেকে বৃদ্ধ বয়সে ভালো আচরণ প্রত্যাশা করেন তাহলে তাকে অবশ্যই তার মা-বাবার সাথে ভালো আচরণ করতে হবে। তিনি যদি তার মা-বাবার সাথে ভালো আচরণ করেন তাহলে তার সন্তানরাও তার সাথে ভালো আচরণ করবে এটাই চির সত্য।
অনেকে তার শৈশব ও শৈশবের ঘটনাবলি নিয়ে তেমন চিন্তা-ভাবনা করে না। যদি এগুলো নিয়ে চিন্তা করে তাহলে অনুধাবন করতে পারবেÑ বাল্যকালে তার মা-বাবা তার জন্য কত কষ্টই না শিকার করেছেন! তীব্র শীতের রজনীতে সে বারবার প্রস্রাব করে কাঁথা ভিজিয়ে দিয়েছে। মা সেই স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা কাঁথা নিজের দিকে ঠেনে নিয়ে তাকে উষ্ণ কাপর দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। শীতের পরশ তার গায়ে লাগতে দেননি। সামন্য অসুখ হলে তার মা তার জন্য কত বিনিদ্র রাত্রি যাপন করছেন তার কোনো হিসাব নেই। এভাবে অসংখ্য কষ্ট করেছেন মা। তার খাবার, পোশাক, ওষুধ ম্যানেজের জন্য বাবা কম কষ্ট করেননি। মা-বাবার আদর-সোহাগে পরিপূর্ণ অতীতের কথা যারা স্মরণ করবে তারা কখনো তার মা-বাবাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারে না। আজকে যারা মা-বাবাকে কষ্ট দিচ্ছে, তারাও তো কারো না কারো বাবা কিংবা মা হবে। তারা কি সন্তানদের কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশা করে, যা তারা তার মা-বাবার সাথে করে। এভাবে অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা চিন্তা-ভাবনা করবে তাদের অন্তরে মা-বাবার প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা বিরাজ করবে। তারা মা-বাবার সাথে কখনো এমন ব্যবহার করবে না যার কারণে মা-বাবা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। পরিশেষে সবার উচিত সন্তানদের ধর্মের প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। তাদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করা। ধর্মীয় বিধি-বিধান অনুশীলনে অভ্যস্ত করা। যাদের অন্তরে ধর্মীয় মূল্যবোধ বহাল থাকবে তারা কখনো বৃদ্ধ মা-বাবার সাথে দুর্ব্যবহার করবে না।
লেখক : প্রাবন্ধিক

 


আরো সংবাদ



premium cement