২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আল্লাহ যা চান সেটিই হয়

-

করোনা আবার ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। আমাদের দেশে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন পরিস্থিতি বেশ নাজুক। গত বছরের ২ জুলাই সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ছিল ৪ হাজার ১৯ জন। অথচ এখন তা ৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ১০০। ৮ মার্চ আমাদের দেশে করোনা প্রথম শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ মৃত্যু হয়। ৩১ মার্চ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ৫১ ও মৃত্যু পাঁচজন। সে সময়ে ইউরোপ-আমেরিকায় ভয়াবহ অবস্থা চলছিল। গত বছরের ৩১ মার্চ ২৪ ঘণ্টায় স্পেনে মৃত্যু হয় ৮৪৯ ও আমেরিকায় ৫৪০। মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঘরে নিজেদেরকে আবদ্ধ করে নিয়েছিল। এমনকি মসজিদগুলো মুসল্লিশূন্য হয়ে পড়েছিল। আমি নিজেও জুমা ও ঈদের নামাজসহ সব নামাজ বাসায় জামাত করে আদায় করেছি। ঘরগুলো হয়ে পড়েছিল মসজিদ। লকডাউন, সরকারি ছুটিসহ নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
এবার চিত্র ভিন্ন। করোনা দ্রুত সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। কিন্তু দ্রুত করোনার বিস্তৃতি রোধে জনসচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষণীয় নয়। আগের মতো করোনাভীতি মানুষের মাঝে বর্তমানে নেই। গতকালের নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক বাসে ৫০ শতাংশ যাত্রী বহনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দীর্ঘ লাইন থেকে পাঁচ-ছয়টা বাস পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর বাসে ওঠার সুযোগ হয়। বাসে শতভাগ যাত্রীদের মাস্ক ছিল। মাস্ক ছাড়া বাসে ওঠার সুযোগ নেই। মসজিদে মাস্ক পরে এবং দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করছি। ৯০ শতাংশ মুসল্লি মাস্ক ব্যবহার করছে। সন্ধ্যার পর বাসার বাইরে গিয়ে দেখলাম প্রচুর লোক-সমাগম এবং অপেক্ষাকৃত তরুণদের মাস্ক ব্যবহার ৫০ শতাংশ হবে। এরাই আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনছে।
এবারে তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। আক্রান্ত হলেও তাদের মাঝে মৃত্যুহার প্রায় শূন্য। তারা ভাইরাস বহন করে বাসায় এলে তাদের সংস্পর্শে বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার খুব বেশি নয়, ১.৫ শতাংশ হবে। চিকিৎসা দুরূহ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোয় আইসিইউ সঙ্কট অত্যন্ত প্রকট। এর যে কষ্ট ও বিড়ম্বনা তা কেবল ভুক্তভোগীরাই উপলব্ধি করতে পারে।
বাসে আসার সময় খুব করে মনে হচ্ছিল, আমরা কত সতর্ক হয়ে চলাফেরা করছি, হয়তো সপ্তাহে দু-একদিন বের হচ্ছি অথচ এই বাসের ড্রাইভার, সুপারভাইজার প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কত মানুষের সাথে তাদের মেলামেশা, রিকশা ও ভ্যানচালক, বাসায় কাজের মহিলা, বস্তিতে বসবাসরত লোকজন, ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষ সারাদিন পরিশ্রম করছেÑ তারা স্বাস্থ্যসচেতনও নন, এসব লোককে কে সুরক্ষা দিচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে একজন বিশ^াসী ব্যক্তি বলে উঠবে, আল্লাহই এদের সুরক্ষা দেন। অথচ সমাজে উঁচুস্তরের মানুষ যাদের বাইরে মেলামেশার সুযোগই নেই, তারা কিভাবে আক্রান্ত হচ্ছেনÑ আসলে এর কোনো জবাব নেই। বলতেই হয়, আল্লাহ যা চান সেটিই হয়। আমাদের অনেক প্রিয়জন, পরিচিত মুখ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মহান রবের কাছে ফিরে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সা:-এর ঘোষণা মোতাবেক তারা শহীদ। দোয়া করি, যারা ঈমান নিয়ে আল্লাহর দরবারে ফিরে গেছেন আল্লাহ পাক যেন তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ যা চান সেটিই হয়, তাহলে আমাদের সতর্কতার প্রয়োজন কী? মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি, হ্যাঁ, তারও কিছু করার রয়েছে এবং সেটি আল্লাহপাকেরই নির্দেশ। উট না বেঁধে যখন উটের আরোহী বলে উঠল ‘তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ’, তখন আল্লাহর রাসূল সা: বললেন, ‘উটটি বেঁধে বলো তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ’। একজন বিশ^াসী ও অবিশ^াসী বান্দার মধ্যে পার্থক্য হলোÑ বিশ^াসী বান্দা নিজের পক্ষে সম্ভব সবটুকু সম্পন্ন করার পর তার শক্তি-সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর না করে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। এমতাবস্থায় আল্লাহপাক তাঁর বান্দার ওপর রহম করেন এবং সব অবস্থা তার জন্য কল্যাণকর হয়। বিপদাপদে পড়লে ধৈর্য অবলম্বন করে এবং ভালো কিছু পেলে শুকরিয়া আদায় করে।
সাধারণ সর্দি-কাশি-জ¦র ও করোনার উপসর্গ একই। করোনার উপসর্গ নিয়ে টেস্ট করার ক্ষেত্রে বর্তমানে শনাক্ত ২০ শতাংশ । উপসর্গ দেখা দিলে করোনা না হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ। তাই ভয় না পেয়ে আমরা সতর্ক হই। উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করা বা পরীক্ষা কোনো কারণে বিলম্ব হলে বা করতে না চাইলে অন্তত ১৪ দিন নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে থাকার চেষ্টা করা দরকার এবং এমতাবস্থায় সর্বক্ষণ মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি। এ পর্যন্ত করোনা সম্পর্কে যত কথা বলা হয়েছে বা হচ্ছেÑ তার মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হলো মাস্ক ব্যবহার, দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং ঘনঘন হাত ধোয়া। অন্যান্য রোগের মতো করোনাও একটি রোগ এবং এর বিস্তার রোধে সচেতনতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। অপ্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকা, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের বাসায় গেলেও মাস্ক ব্যবহারে অবহেলা না করা এবং একত্রে খানাপিনা ও আড্ডাবাজি থেকে দূরে থাকা উচিত। আমরা সবাই সচেতন হই এবং নিজেকে হেফাজতের পাশাপাশি অপরকেও নিরাপদ করি।
করোনা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের জন্য এক সতর্কবার্তা। এই করোনা আমাদের মধ্যে মৃত্যুভয় জাগ্রত করে। মৃত্যুচিন্তা মানুষকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে উদ্বুদ্ধ করে। এমনটি যদি হয়, সত্যিই করোনা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। বান্দার জন্য হেদায়াতের চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু নেই। আল্লাহর নাফরমান হয়ে শত বছর বাঁচার চেয়ে তাওবা করে আল্লাহর অনুগত বান্দা হয়ে একটি দিন বেঁচে থাকা অনেক শ্রেয়। এমন বান্দা তার মহান রবের ক্ষমা ও জান্নাতের প্রত্যাশা করতেই পারে।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তোমার প্রিয়ভাজন বান্দা হিসেবে কবুল করো ও করোনা থেকে বিশ^বাসীকে হেফাজত করো। আমীন।
লেখক : উপাধ্যক্ষ (অব:), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ

 


আরো সংবাদ



premium cement