০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কেন আল্লাহকে চিনতে হবে

-

প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন আল্লাহকে জানতে ও চিনতে হবে? যদি উভয় জগতে সফলতা ও শান্তিতে জীবন যাপনের আশা করি তাহলে অবশ্যই আল্লাহকে জানতে হবে।
এমন কোনো সন্তান নেই যে, সর্বপ্রথম বাবা-মাকে না চেনে। অর্থাৎ সন্তান সর্বপ্রথম চেনে বাবা-মাকে, তারপর ভাইবোন, তারপর অন্যান্য আত্মীয়স্বজন। একজন মিস্ত্রি আপনার জন্য টেবিল তৈরি করে আল্লাহর সৃষ্টি মাটি থেকে উৎপন্ন গাছের কাঠ দিয়ে। আমাদের জন্য দুঃখ, মিস্ত্রিকে সবাই চিনলেও অনেকেই অনেক সময় টেবিলের মূল স্র্রষ্টা আল্লাহকে ভুলে যাই।
আমাদের মধ্যে যিনি স্র্রষ্টাকে জানতে ও চিনতে পারলেন না, সে ব্যর্থ ও বঞ্চিত হতে বাধ্য। কারণ যাকে আমি জানি না বা চিনি না তার প্রতি আমার ভয়ভীতি ও ভালোবাসা (তাকওয়া, হুব্বুন) মনে স্থান পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। উদাহরণস্বরূপÑ যিনি একজন মন্ত্রীকে চেনেন না, তিনি মন্ত্রীকে সালামও দেবেন না, সম্মানও দেখাবেন না। এমনি করে যারা আল্লাহকে চিনল না বা জানল না; তারা পথভ্রষ্ট থাকাই স্বাভাবিক সঙ্গত কারণে।
আল্লাহকে চেনার উপায় : আল্লাহর গুণগত ৯৯টি নামের প্রত্যেকটিই তাঁর পরিচয় বহন করে। গুণবাচক নাম ছাড়াও আল্লাহর পরিচয় পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন আয়াতে বিদ্যমান রয়েছে, যার অংশবিশেষ নিম্নে উল্লেøখ করা হলোÑ
‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকটি কাজের বিষয়ে ইচ্ছা বাস্তবায়নে সীমাহীন ক্ষমতার আধিকারী (সূরা বুরুজ, আয়াত-১৬)। ‘বলুন (হে রাসূল)! তিনি আল্লাহ এক, অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই’ (সূরা ইখলাস, আয়াত : ১-৪)। ‘আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো কিছু করার ইচ্ছা করেন তা গঠনমূলক হোক বা ধ্বংসমূলক হোক, কল্যাণকর হোক বা অকল্যাণকর হোক, আঞ্চলিক বা গোত্রভিত্তিক হোক বা বিশ^ব্যাপী হোক তিনি আদেশ করেন ‘হয়ে যাও’ (কুন), সাথে সাথে বা নির্ধারিত সময়ে তা নিখুঁতভাবে হয়ে যায় (সূরা ইয়াসিন, আয়াত-৮২)।
প্রসঙ্গ, ইবরাহিম আ:কে যখন অভিশপ্ত নমরুদ বাহিনী অতুলনীয় অগ্নিকুণ্ডে নিরাপদ দূর থেকে চরকা দিয়ে উল্টো অবস্থায় নিক্ষেপ করল, তখন আল্লাহ তায়ালা অগ্নিকুণ্ডকে আদেশ করলেনÑ ‘ইয়া নারুকুনি বারদাও ওয়া ছালামান আলা ইবরাহিম।’ অর্থাৎÑ হে অগ্নিকুণ্ড! হয়ে যাও শান্তিদায়ক শীতল (আমার বন্ধু) ইবরাহিমের ওপর। এ অগ্নিকুণ্ডে ইবরাহিম আ: ৪০ দিন অবস্থান করেছিলেন আগুন নিবারিত হওয়া পর্যন্ত। পরনে ছিল জান্নাতি পোশাক, পানাহারও ছিল জান্নাতি। নমরুদ বাহিনী জীবন্ত অবস্থায় ইবরাহিম আ:কে দেখে তো হতবাক! আল্লাহ তায়ালার অসীম ক্ষমতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আলোচ্য ঐতিহাসিক ঘটনাটি। বিশেষ করে জ্ঞানীদের জন্য বড় ধরনের বার্তা রয়েছে ওই ঘটনায়।
আল্লাহর অন্যতম পরিচয় : তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই (তিনিই একমাত্র উপাস্য)। তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধু একমাত্র তারই ইবাদত বা দাসত্ব করার জন্য। অন্য কোনো কাজ নয়। অন্য কারো দাসত্ব নয়। ফলে আমাদের প্রত্যেকটি কাজ যথাÑ উপার্জন, পানাহার, নিদ্রা-বিশ্রাম, এমনকি স্নান, মল-মূত্র ত্যাগ ইত্যাদি এককথায় যাবতীয় কাজ সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সঠিক উদ্দেশ্য গ্রহণ করে ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপÑ মল-মূত্র ত্যাগের উদ্দেশ্য হবে পবিত্রতার অন্তরায় দূর করা, পবিত্র থাকার অবস্থা গ্রহণ করা, সংশ্লিষ্ট দোয়া কালাম পাঠ করা, রাসূল সা:-এর আদর্শ বা প্রক্রিয়া মল-মূত্র ত্যাগের ব্যাপারে স্মরণ ও বাস্তবায়ন করা।
আল্লাহ তায়ালা না নিদ্রামগ্ন, না তন্দ্রাচ্ছন্ন হন। এ অবস্থার কারণ আল্লাহই জানেন। নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সব কিছুর মালিক বা স্বত্বাধিকারী একমাত্র আল্লাহ, অন্য কেউ নয়। কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না (কোনো বিষয়ে বা ব্যক্তির জন্য)। যদি সৌভাগ্যক্রমে আল্লাহর অনুমতি পান, তখনই সুপারিশ করতে পারবেন অন্যথা কোনো অবস্থাতেই নয় (সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৫)।
আল্লাহর আসন (কুরসি) সপ্তাকাশ ও ভূমণ্ডল বেষ্টিত বা ব্যাপক, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল রক্ষণাবেক্ষণ ও রক্ষা করতে আল্লাহ তায়ালার সামান্যতম কষ্ট পেতে হয় না। অতি সহজেই তিনি তা করে যাচ্ছেন’ (সূরা বাকারা-২৭৫)। লক্ষ্য করুন, আল্লাহ তায়ালার অসীম ক্ষমতার নিদর্শন, মহাজগতের সৃষ্টি, এর রক্ষণাবেক্ষণ ও রক্ষা করার কার্যাবলির নিয়ন্ত্রণ।
আল্লাহ তায়ালার পাকড়াও বড়ই ভয়ঙ্কর বা যথেষ্ট কঠিন (সূরা বুরুজ, আয়াত-১২)। উদাহরণস্বরূপÑ নমরুদ, ফিরাউন, কারুন, আবরাহা বাদশাহ, আবু জাহেল, আবু লাহাবদেরকে আল্লাহ ইহজগতে কী ভয়ঙ্করভাবে পাকড়াও করেছেন তা অন্যত্র দীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement