২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধর্ষণ বন্ধে করণীয়

-

ধর্ষণ ধর্ম, জাতি, সমাজ, রাষ্ট্র সব অঙ্গনে নিষিদ্ধ এবং চরম নিন্দনীয়। তবু কেন বারবার ধর্ষণই শিরোনাম হচ্ছে। অবস্থা পরিবর্তনে কী করছি আমরা? নাকি কার্যকর কোনো উপায় না খুঁজে শুধু হইচই করছি? ধর্ষণ সংঘটিত হয় যে মানুষ দ্বারা সেই মানুষের স্র্রষ্টা মহান আল্লাহ কি ধর্ষণ বিষয়ে আমাদের সচেতন করেননি? অবশ্যই করেছেন। কুরআন ও হাদিসে ধর্ষণ বন্ধে কার্যকর পদ্ধতি এবং অশ্লীলতামুক্ত সমাজ গঠনে স্পষ্ট বিধান বর্ণিত হয়েছে।
তবে আমরা আল্লাহর বান্দা হয়ে তার দেয়া নিয়ম অনুসরণ না করে বারবার কেন ধর্ষণকে শিরোনামে নিয়ে আসছি। স্র্রষ্টার এই বিধান না মানায় আজ আমার মেয়ে কাল আপনার মেয়ে, আরেক জনের বউ, কারো বোন ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। যত দিন স্র্রষ্টার নিয়ম অনুসরণ না করা হবে তত দিন ধর্ষণ বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ নির্মাতাই ভালো জানেন কোথায় সমস্যা এবং কী তার সমাধান। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর দেয়া নিয়ম অনুসরণ করা। ধর্ষকের শাস্তির বিষয়েই শুধু আল্লাহর নিয়ম অনুসরণ করলে হবে না, প্রথমে ধর্ষণের আগে ছেলে-মেয়ের মধ্যে যে সম্পর্কের বিষয় বারবারই সামনে আসছে সেই সম্পর্ক ইসলামের দৃষ্টিতে বিচার করতে হবে।
আল্লাহর ভয় : যাবতীয় পাপাচার বন্ধে সবার আগে অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকতে হবে। এ জন্য সন্তানদের ছোট বেলাতেই কুরআন-হাদিসের শিক্ষা দিতে হবে। তাহলে তাদের বেড়ে ওঠাই হবে সঠিক পথে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে (জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে) ভয় করো। আশা করা যায় তোমরা সফল হবে।’
ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা : ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার বিকল্প নেই। ধর্ম মানুষের পথপ্রদর্শক ও পরিচালক। আমাদের নাটক-সিনেমাতে বরাবরই ধর্মকে জীবনের একটি অংশের জন্য দেখানো হয়। কিন্তু ধর্ম হলো পুরো জীবন পরিচালনার নীতিমালা। যারা ধর্মীয় রীতিনীতিতে চলে না, আল্লাহর আদেশ-নিষেধের তোয়াক্কা করে না, নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে ভালো-মন্দের ফারাক করে না, পাপাচার থেকে নিরাপদ থাকা তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। এরা নৈতিকভাবে পদে পদে বিচ্যুত হয়। এদের দ্বারা ব্যভিচার, ধর্ষণসহ অন্যান্য পাপকর্মের বিস্তার ঘটে।
অভিভাবকদের নজরদারি ও সঠিক পথনির্দেশনা : সন্তানের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় অভিভাবকের দায়বদ্ধতা ও সঠিক পথনির্দেশনার বিকল্প নেই। ছেলে-মেয়ে কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুশাসন কতটা মেনে চলছে, নৈতিকতার শিক্ষা পাচ্ছে কি না ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অধিকাংশ অভিভাবকের অবহেলা ও গাফিলতি দেখা যায়। রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং পরকালে নিজ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে’ (বুখারি ও মুসলিম)।
বিয়ে সহজ করা : সমাজ থেকে ধর্ষণের মূলোৎপাটন করতে বিয়ে সহজ করতে হবে। বিলম্বিত বিয়ে ধর্ষণ, ব্যভিচার বৃদ্ধির প্রধান একটি কারণ। আমাদের সমাজে কারণে-অকারণে বিলম্বিত বিয়ের যে প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে তা মারাত্মক ব্যাধি ছাড়া কিছু নয়। এ সময় মানুষের মধ্যে সব ধরনের শক্তি ও চাহিদা থাকে। ফলে পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। আবদুুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, নবীজী সা:-এর সাথে আমরা কয়েকজন যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোনো কিছু ছিল না। এ অবস্থায় আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা বিয়ে করে নেবে। কারণÑ বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে, লজ্জাস্থান সুরক্ষা করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। কেননা, সাওম তার যৌনতাকে দমন করবে’ (বুখারি-৫০৬৬)।
আইন ও শাস্তির প্রয়োগ : ধর্ষণ নির্মূল ও প্রতিরোধে প্রথমে বর্তমান আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এরপর ধাপে ধাপে রাষ্ট্রের অন্য বিষয়ে ইসলামী আইন প্রয়োগ করতে হবে। সব ক্ষেত্রে ইসলামী আইন চালুর পরে যদি কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তখন ধর্ষণের বিষয়ে ইসলামী আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ইসলামী সংস্কৃতি চর্চা ও লালন : ধর্ষণের পেছনে প্রচলিত সংস্কৃতির কতটা ইন্ধন আছে তা ভেবে দেখার বিষয়। কারণ প্রচলিত নাটক-সিনেমাতে আমরা দেখে থাকি, ছেলে-মেয়েরা অবাধে ঘোরাফেরা করছে। আবার একে অন্যের বাসায়ও যাচ্ছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা নাটক-সিনেমা দেখে সেগুলোই শিখছে। কিন্তু বাস্তব জীবনে তারা যখন এসব অনুসরণ করতে যাচ্ছে তখনই ঘটছে ধর্ষণ-শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা।
নির্লজ্জতার নিকটবর্তী না হওয়া : বিপরীত লিঙ্গের দুইজন মানুষ পাশাপাশি একান্তে থাকলে তাদের মধ্যে শয়তান অবস্থান করে। এ জন্যই কুরআনে যেনার নিকটবর্তী হতে নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ দু’জন ছেলে-মেয়েকে অবৈধভাবে একান্তে অবস্থান করতেই নিষেধ করা হয়েছে। কারণ আল্লাহ জানেন তার সৃষ্ট মানুষ এই পরিস্থিতিতে গেলে যেনা থেকে মুক্ত থাকা অসম্ভব। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা নির্লজ্জতার কাছেও যেও না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য’ (সূরা আনআম-১৫১)।
দৃষ্টি সংযত রাখা : ধর্ষণের জন্য সর্বাগ্রে দায়ী দৃষ্টি। নারীর রূপ-সৌন্দর্য ইত্যাদি দেখার মাধ্যমেই পুরুষ প্রভাবিত হয়, ফলে তার মধ্যে আসক্তি ও কামনা সৃষ্টি হয়। একটা পর্যায়ে তাকে উপভোগ করার সমূহ চেষ্টা, সাধনা চালিয়ে যায়, অতঃপর ধর্ষণ পর্যন্ত পৌঁছায়।
বাইরে সৌন্দর্য প্রকাশ না করা : পোশাকই একমাত্র কারণ নয়, তবে অমার্জিত ও খোলামেলা পোশাক ধর্ষণে প্রলুব্ধ করে। এ জন্য ইসলামে এগুলো হারাম ও নিষিদ্ধ। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে যা সাধারণত প্রকাশ হয়ে থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে... তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে...’ (সূরা নূর-৩১)।
মনে রাখতে হবে, মার্জিত পোশাক ও শরীর ঢেকে রাখা শুধু যে ধর্মীয় নির্দেশ তা নয়; এগুলো ব্যক্তির ভদ্রতা, উন্নত রুচি ও নির্মল মানসিকতা এবং বংশীয় আভিজাত্যের পরিচয়ও বহন করে।
কুপ্রবৃত্তি দমন : আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যে নিজ রবের সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে (কিয়ামত দিবস) ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে। নিশ্চয় তার ঠিকানা হবে জান্নাত’ (সূরা নাজিয়াত-৪০-৪১)।
লেখক : সহকারী শিক্ষক, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, সিলেট

 


আরো সংবাদ



premium cement