৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়...

-

কবি মতিউর রহমান মল্লিকের লেখা জনপ্রিয় একটি ইসলামী গানের আলোকেই আজকের এই লেখার সূত্রপাত। শুরুতেই দেখে নেই গানের লিরিকে কি আছে? এই গানটি মনোযোগসহকারে শিল্পীর কণ্ঠে শুনলে আপনার হৃদয় কেঁপে উঠবে, আবেগ তাড়িত হবেন নিশ্চয়ই।
পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়/মরণ একদিন মুছে দেবে সকল রঙিন পরিচয়...
মিছে এই মানুষের বন্ধন/মিছে মায়া স্নেহ প্রীতি ক্রন্দন।
মিছে এই জীবনের রংধনু সাতরঙ/মিছে এই দু’দিনের অভিনয়।
মিছে এই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব/মিছে গান কবিতার ছন্দ।
মিছে এই অভিনয় নাটকের মঞ্চে/মিছে এই জয় আর পরাজয়।
আমরা সবাই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি দুনিয়া আমাদের আসল ঠিকানা নয়। একদিন এ দুনিয়া ছেড়ে আমাদের যেতে হবে পরপারে। কিন্তু কে কখন পরপারের পথিক হবো তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। এ জন্য সবসময় মৃত্যুপরবর্তী জীবনের জন্য পুঁজি সঞ্চয় করার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেকেই অধিকাংশ সময় দুনিয়ার মোহে আবিষ্ট থাকেন। ধন সম্পদের আকর্ষণে আখিরাতের কথা বেমালুম ভুলে যান। দুনিয়া নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকেন যে, ঠিক মতো নামাজ পড়ারও সময় পান না। অথচ দু’চোখ বন্ধ হয়ে গেলে দুনিয়ার কোনো কিছুই সাথে যাবে না। সাথে যাবে শুধু নেক আমল। আমাদের চোখের সামনে অনেককে মরতে দেখি। আমরা প্রতিনিয়ত এমন অনেকের জানাজা পড়ি, অনেককে কবরে রাখি, যারা প্রচুর বিত্ত বৈভবের মালিক, অনেক ক্ষমতার অধিকারী। যাদের ঘরে ঢুকলে মখমলের বিছানা, সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্র চোখে পড়ে। মরণের পর তাদের সাথে কি আমরা এসব জিনিস দিয়ে দেই? লেপ, তোশক সুন্দর বিছানা কিছুই আমরা কবরে দেই না। ধপধপে সাদা কাফনের কাপড়ে জড়িয়ে কবরে রাখি। আর কবরে শুধু মাটি আর মাটি। আমরা যারা বর্তমানে বেঁচে আছি আমাদেরও একদিন মরতে হবে। আমাদেরও একদিন জানাজা পড়া হবে। আমাদেরও একদিন কবরে রাখা হবে। কিন্তু আমরা জানি না কবে আমাদের মরণ হবে। কোথায় আমাদের জানাজা হবে। কোথায় আমাদের কবর হবে। কে আমাকে কবরে রাখবে। কিংবা আদৌ কেউ কবরে রাখতে পারবে কিনা? কেননা, অনেক মানুষ দুর্ঘটনায় মারা যান যাদের লাশও খুঁজে পাওয়া যায় না।
আমরা যদি মরণের কথা সবসময় মনে জাগরুক রেখে দুনিয়ায় চলি, তাহলে আমাদের দিয়ে কোনো খারাপ কাজ হতে পারে না। কারণ, আমাদের বিশ্বাসÑ মরণ শুধু জীবনাবসানের নাম নয়। মরণ নতুন জীবনের সূচনা। যে জীবনের সুখ বা দুঃখনির্ভর করছে দুনিয়ার জীবনের কর্মের ওপর। কেউ যদি দুনিয়ার জীবনে কারো ওপর জুলম করে, আখিরাতে তার প্রতিফল পেতে হবে। দুনিয়ার জীবনে ‘দুনিয়ার আদালত’-এর সাজা থেকে বাঁচতে আত্মগোপন করে থাকা সম্ভব হলেও ‘আল্লাহর আদালত’ এর সাজা থেকে বাঁচার কোনো সুযোগ নেই। মরণের সাথে সাথে ফেরেশতারা রুহ নিয়ে যাবে। ভালো কাজ করলে ইল্লিনে আর খারাপ কাজ করলে সিজ্জিনে রুহ নিয়ে যাবার পর নেয়ামত বা সাজা ভোগ শুরু হয়ে যাবে। আখিরাতে বিচার ফায়সালার পর চূড়ান্ত পুরস্কার জান্নাত বা চূড়ান্ত শাস্তি জাহান্নাম ভোগ করতে হবে।
মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে তার আমল করার পথ বন্ধ হয়ে যায়। তার পক্ষে মসজিদে যাওয়া, হজ করা, দান খয়রাত করাসহ কোনো ধরনের ইবাদাত বন্দেগি করা সম্ভব হয় না। দুনিয়ার জীবনে কৃত আমলের ভিত্তিতে তাকে পুরস্কার বা শাস্তি পেতে হবে। দুনিয়ার জীবনে কেউ কোনো সমস্যায় থাকলে একে অপরকে সাহায্য করা যায়। কারো কিছুর দরকার হলে একে অপরের কাছ থেকে নেয়া যায়। মৃত্যুর পর আর এ সুযোগ থাকবে না। কিন্তু সে সময়ই মানুষের সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দরকার। মানুষ মারা যাওয়ার পর তার সরাসরি আমল করার সুযোগ না থাকলেও কয়েকভাবে তার আমলনামায় ভালো বা মন্দ কাজ যোগ হয়। কেউ যদি দুনিয়াতে নেক কোনো কাজ করে যায়, যেমন কোনো মাদরাসা বা মসজিদ নির্মাণ করে তাহলে মৃত্যুর পরও সে সওয়াব পাবে। আর যদি খারাপ কোনো কাজ করে যেমন সিনেমা হল বা মদের কারখানা করে, তাহলে মৃত্যুর পরও তার আমলনামায় গুনাহ যোগ হবে। হাদিসে রাসূল সা: থেকে জানা যায় যে, মৃত্যুর পর মানুষের আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনভাবে মানুষের আমলের সাথে সওয়াব যোগ হয়।
সদকায়ে জারিয়া, নেক সন্তান , উপকারী ইলম
উপরের তিনটি বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা লিখতে গেলে লেখার পরিধি অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই পরবর্তী লেখায় এই তিনটি বিষয় নিয়ে আলাদা আলাদা প্রবন্ধ লেখার ইচ্ছা রইল।
এখন আমাদের ভাবা দরকার আমরা দুনিয়ার একটু সুখের জন্য কত কিছু করি। বাড়ি, গাড়ি, দালান-কোঠা সবইতো একটু আরামে থাকার জন্য। যে দুনিয়াতে সুখের জন্য মানুষ এত কিছু করে তার পরও অনেকেই সুখ পায় না। এমন অনেকে আছেন যাদের অঢেল সম্পদ আছে, কিন্তু তিনি কিছুই খেতে পারেন না। স্যালাইনের মাধ্যমেই খাবার দিতে হয়। আবার কেউ কেউ আছেন, সুন্দর খাট, নরম তোশক, আরামদায়ক বিছানা থাকা সত্ত্বেও ঘুম আসে না। তারা দুনিয়ার সুখের জন্য যত অর্থ ব্যয় করেন সে তুলনায় আখিরাতের সুখের জন্য কিছুই ব্যয় করেন না। অথচ দুনিয়ার জন্য যা ব্যয় করে তা মৃত্যুর সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায়। আর আখিরাতের জন্য যা ব্যয় করে তা মৃত্যুর পর সঙ্গী হয়। এমনকি কঠিন বিপদ সঙ্কুল মুহূর্তে তার নাজাতের উসিলা হতে পারে। তাই আমাদের বেশি বেশি সদকায়ে জারিয়ার কাজ ও সন্তানদের দ্বীনদার হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করা উচিত।
আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘সেই বুদ্ধিমান যে নফসকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের সাফল্যের জন্য আমল করে।’ দুঃখের বিষয় আজকে আমরা তাকেই বুদ্ধিমান মনে করি যে ছলচাতুরী করে, অপরকে ঠকিয়ে বেশি উপার্জন করতে পারে। আর তাকে বোকা মনে করা হয় যে দুনিয়াতে খুব বেশি সম্পদ করতে পারে না, চালাকি করে ধনদৌলত করতে সক্ষম হয় না। অথচ হাদিসে রাসূল সা:-এর আলোকে সেই বুদ্ধিমান যে আখিরাতের জন্য বেশি বেশি নেক আমল করে।
লেখক : বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement
দেশের বেসরকারি সৌর প্রকল্পে ১২১.৫৫ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন এডিবির কটিয়াদীতে কালের সাক্ষী ৫০০ বছরের কোটামন দিঘি সখীপুরে ৩০০ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে আউশ ধানের বীজ ও সার বিতরণ স্কুল-মাদরাসার ছুটি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বহাল থাকছে রাজবাড়ীতে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১ বাকিতে সিগারেট না দেয়ায় দোকানিকে কুপিয়ে হত্যা ট্রেনে বন্ধুর ব্যাগ তুলে দিতে গিয়ে প্রাণ গেল কিশোরের গাজা উপকূলে বন্দর নির্মাণের ছবি প্রকাশ করল যুক্তরাষ্ট্র মানুষের প্রতিকার চাওয়ার কোনো জায়গা নেই : রিজভী রেলের ভাড়া না বাড়ানোর আহ্বান জাতীয় কমিটির ব্যারিস্টার খোকনের অব্যাহতিপত্র প্রত্যাহার

সকল