২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আসুন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই

-

পৃথিবীর সর্বত্র চলছে আর্তনাদ আর আহাজারি। জাতিসঙ্ঘ বলছে, করোনাভাইরাসে লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সঙ্কটের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। একটি সমীক্ষা বলছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০ কোটি মানুষ ইতোমধ্যেই খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন। জাতিসঙ্ঘের ধারণা, আগামী দিনে এই সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে। সুতরাং এ অবস্থায় সামর্থ্যবানদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। ইসলাম মানবতার ধর্ম। ক্ষুধার্ত, অসুস্থ, বঞ্চিত মানুষের সেবা করতে হবে। আদায় করতে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর হক। আল্লাহ বলেন, তাদের ধন সম্পদে রয়েছে বঞ্চিত ও সাহায্য প্রার্থনাকারীর হক্ক।’ (জারিয়াত ১৩)
ঈমানদারদের সমাজের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এই যে, এটা কোনো জালেম, নির্দয়, বেরহম, পাষাণ হৃদয় ও হৃদয়হীনদের সমাজ নয়। বরং সমগ্র মানবতার জন্য এটি হয় একটি স্নেহশীল, করুণাপ্রবণ এবং নিজেদের পরস্পরের জন্য সহানুভূতিশীল ও পরস্পরের দুঃখে শোকে-বেদনা অনুভবকারী একটি সংবেদনশীল সমাজ। ব্যক্তি হিসেবেও একজন মুমিন হয় আল্লাহর করুণার মূর্ত প্রকাশ এবং দলগতভাবে ও মুমিনদের দল আল্লাহর এমন এক নবীর প্রতিনিধি যার প্রশংসায় বলা হয়েছে :
‘বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ও করুণা হিসেবেই তোমাকে পাঠিয়েছি।’ (আম্বিয়া : ১০৭) নবী সা: নিজের উম্মাতের মধ্যে এই রহম ও করুণাবৃত্তিটির মতো উন্নত নৈতিক বৃত্তিটিকেই সবচেয়ে বেশি প্রসারিত ও বিকশিত করতে চেয়েছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ তাঁর নিম্নোক্ত বাণীগুলোর গুরুত্ব কী ছিল তা জানা যাবে। হজরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রেওয়ায়াত করেছেন, নবী সা: বলেন : ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি রহম করে না, আল্লাহ তার প্রতি রহম করেন না।’ (বুখারি ও মুসলিম) নবী করিম সা: বলেছেনÑ ‘তোমরা মুমিনদেরকে পরস্পরের মধ্যে রহম, ভালোবাসা ও সহানুভূতির ব্যাপারে একটি দেহের মতো পাবে। যদি একটি অঙ্গে কোনো কষ্ট অনুভূত হয় তাহলে সারা দেহ তাতে নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।’ ( বুখারি ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আমার নিকট যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণও স্বর্ণ থাকে, তাহলে তিন রাত অতিবাহিত হওয়ার পরও তার সামান্য কিছু আমার কাছে অবশিষ্ট থাকুক তা আমি পছন্দ করি না। তবে হ্যাঁ, আমার দেনা পরিশোধের জন্য সামান্য যেটুকু প্রয়োজন (কেবলমাত্র সেটুকু রেখে বাকি আল্লাহ কাজে দান করে দিবো)। (বুখারি)
‘আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করো তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগেই। অন্যথায় অনুতাপ অনুশোচনা করে বলতে হবে।’ (মুনাফিকুন ১০)
রাসূল সা: বলেন, ‘সাদাকাহ করলে কোনো মানুষের সম্পদ কমে না।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ) রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর পথে কোনো কিছু ব্যয় করবে তাকে সাতশ’ গুণ সওয়াব দেয়া হবে। (মুসনাদে আহমাদ)
‘আমার ঈমানদার বান্দাহদের বলে দাও, তারা যেন নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে যেন খরচ করে, গোপনে অথবা প্রকাশ্যে, সেই দিন আসার আগেই যেদিন কোনো কেনা বেচার সুযোগ থাকবে না, যেদিন কোনো বন্ধুত্ব কাজে আসবে না।’ (ইবরাহিম ৩১)
রাসূল সা: বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেস্তা অবতরণ করেন। তাদের একজন আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলতে থাকেনÑ হে আল্লাহ! দানকারীর মালে বিনিময় দান করো (বিনিময়ে সম্পদ বৃদ্ধি করো)।
আর দ্বিতীয়জন কৃপণের জন্য বদ দোয়া করে বলেন, হে আল্লাহ কৃপণের মালে ধ্বংস দাও। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) রাসূল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা তার দুনিয়া ও আখেরাতের সব বিষয় সহজ করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম)
নবী করিম সা: বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে সাত শ্রেণীর মানুষ আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে। তন্মধ্যে এক শ্রেণী হচ্ছেÑ ঐ ব্যক্তি যে এত গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কী দান করে বাম হাত তা জানতেই পারে না।’ (বুখারি) তিনি আরো বলেন, ‘খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
নবী সা: বলেন, ‘মিসকিনকে দান করলে তা শুধু একটি দান হিসেবেই গণ্য হবে। কিন্তু গরিব নিকটাত্মীয়কে দান করলে তাতে দ্বিগুণ সওয়াব হয়। একটি সাদাকার; অন্যটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার।’ (নাসায়ি ও তিরমিজি) ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক আত্মীয় ও প্রত্যেক মুসলিমের জন্য দয়ার্দ্র হৃদয় ও কোমল প্রাণ।’ (মুসলিম )
নবী সা: বলেন, ‘তোমরা কৃপণতা ও লোভ থেকে সাবধান! কেননা পূর্বযুগে এ কারণে মানুষ রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, মানুষকে খুন করেছে এবং নানা প্রকার পাপাচার ও হারাম কাজে লিপ্ত হয়েছে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাকিম) রাসূলে কারিম সা: বলেন : নিশ্চয় আল্লাহ দাতা, তিনি দাতাকে ভালোবাসেন এবং উন্নত চরিত্রকে ভালোবাসেন ও মন্দ চরিত্রকে ঘৃণা করেন।
রাসূল সা: বলেছেন, হে আয়েশা! অভাবীদের কিছু না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়ো না, যদিও তা কেবল খেজুরের একটি টুকরো হয়। হে আয়েশা! গরিবদের ভালোবাস এবং তাদের তোমার কাছে সাহায্যের জন্য আসতে দাও। তখন আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই কিয়ামতের দিন তাঁর কাছে স্থান দেবেন। (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)
রাসূল সা: বলেছেনÑ সর্বোত্তম দান হলো প্রয়োজন মিটিয়ে পরিতৃপ্ত করা। (বায়হাকি) রাসূল সা : বলেছেনÑ ‘হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, অভাবীদের খাবারের ব্যবস্থা করো। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ পড়। (এগুলো করে) তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (তিরমিজি)
মহান আল্লাহ পাক বলেন, ‘যারা আল্লাহ রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মতো যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়, আর প্রতিটি শীষে একশ’টি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত সুবিজ্ঞ।’ (বাকারা ২৬১)
‘তোমরা কিছুতেই প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে পারবে না যে পর্যন্ত না তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলোকে আল্লাহ পথে ব্যয় করবে।’ (আল ইমরান ৯২) ‘যারা সচ্ছল অবস্থায় ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, (আল ইমরান ১৩৪)
আল্লাহ বলেন, ‘এবং তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে ভিক্ষুক এবং বঞ্চিত (অভাবী অথচ লজ্জায় কারো কাছে হাত পাতে না) সবার হক রয়েছে।’ (সূরা আল মায়ারিজ ২৪, ২৫)
রাসূল সা: বলেছেন, সে ঈমানদার নয় যে তার প্রতিবেশকে অভুক্ত রেখে নিজে পেট ভরে খেয়ে ঘুমায়। আসুন সামনে ঈদুল আজহা। মানবতার মহাদুর্যোগে ত্যাগের চেতনা নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। সৎশধৎরসথ৮০@ুধযড়ড়.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement