২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দশটি সুন্দর মৃত্যু

-

চিরন্তন এক সত্যের নাম মৃত্যু। মৃত্যুকে অস্বীকার করেছেন, এমন কোনো সুস্থ মানুষের কথা পৃথিবীর ইতিহাসে পাওয়া যাবে না। কারণ, সবকিছুর স্রষ্টা মহান আল্লাহ কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেছেন-সব প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। (আলে ইমরান-১৮৫) তাই মৃত্যুকে ভুলে নয়, বরং মৃত্যুর স্মরণেই মুমিনের ঈমান তাজা হয়। প্রত্যেক ঈমানদারই একটি সুন্দর মৃত্যু প্রত্যাশা করে। কারণ, সুন্দর মৃত্যুই যে সুন্দর আখিরাতের ইঙ্গিত। হাদিসে বর্ণিত ১০টি সুন্দর মৃত্যুর কথা আমরা এখানে উল্লেখ করছি।
১. মৃত্যুর সময় তাওহিদের কালিমা পাঠ করে মৃত্যুবরণ করা। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, যার শেষ কথা হবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১৬; মুসতাদরাকে হাকিম ১/৩৫১)
২. পৃথিবীতে আল্লাহর কালিমাকে সমুচ্চ রাখার জন্য জিহাদে শাহাদত বরণ করা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) ‘এবং (হে নবী!) যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের কখনো মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত। প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের রিজিক দেয়া হয়।
আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা কিছু দিয়েছেন তারা তাতে প্রফুল্ল। আর তাদের পরে এখনো যারা (শাহাদতে) তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি, তাদের ব্যাপারে এ কারণে তারা আনন্দ বোধ করে যে, (তারা যখন তাদের সঙ্গে এসে মিলিত হবে তখন) তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না।
তারা আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের কারণেও আনন্দ লাভ করে এবং এ কারণেও যে, আল্লাহ মুমিনদের কর্মফল নষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান : ১৬৯-১৭১)
৩. জিহাদের সফরে বা হজের ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা। আল্লাহর রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে সে শহীদ। যে আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করেছে সে শহীদ। (মুসলিম, হাদিস : ১২০৬)
অন্য হাদিসে আছে, ইহরামের হালতে উটের পিঠ থেকে পড়ে একজন ব্যক্তির মৃত্যু হলে আল্লাহর রাসূল সা: তার সম্পর্কে বললেন, তাকে বরই পাতাযুক্ত পানি দ্বারা গোসল দাও এবং তার (পরিহিত) দুটো কাপড়েই তাকে কাফন দাও। তবে তার মাথা আবৃত করো না। কেননা, কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে। (মুসলিম, হাদিস : ১২০৬)
৪. ইবাদত-বন্দেগি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা। হুজায়ফা রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং এটাই হবে তার শেষ আমল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় একদিন রোজা রাখবে এবং এটাই হবে তার শেষ আমল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সদকা করবে এবং এটাই হবে তার শেষ আমল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে আহমদ ৫/৩৯১)
৫. শরিয়ত কর্তৃক সংরক্ষিত জিনিসের কোনো একটি রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা। সায়িদ ইবনে যায়েদ রা: থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেন, যে তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহীদ। যে তার পরিবার-পরিজনদের রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহীদ। যে দ্বীন রক্ষায় নিহত হয়, সে শহীদ। যে তার জীবন রক্ষায় নিহত হয় সে শহীদ। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭২; তিরমিজি, হাদিস : ১৪১৮)
৬. মহামারী জাতীয় কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা। আনাস ইবনে মালেক রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘তাউন’ হচ্ছে সব মুসলিমের জন্য শাহাদত। (বুখারি ১০/১৬৫-১৬৭; মুসনাদে আহমদ ৩/১৫০, ২২০)
৭. সন্তান প্রসবের সময় ও নেফাস অবস্থায় নারী মৃত্যুবরণ করা। উবাদা ইবনে সামিত রা: থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেন-সন্তান প্রসব করতে গিয়ে নারীর মৃত্যু হলে তা শাহাদত। তার সন্তান তাকে জান্নাতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমদ ৪/২০১, ৫/৩২৩)
৮. পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে কিংবা ভূমিধসে মৃত্যুবরণ করা। আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, শহীদ পাঁচ শ্রেণীর : প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারী, পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী, পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী, ভূমিধসে মৃত্যুবরণকারী এবং আল্লাহর পথের শহীদ। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৩; মুসলিম, হাদিস :১৯১৫)
হজরত জাবির ইবনে ওতাইক বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর পথে নিহত হওয়া ছাড়াও আরো সাত শ্রেণীর শহীদ আছেন। যথাÑ প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারী শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী শহীদ, জাতুল জাম্বে (ফুসফুসের একটি বিশেষ ব্যাধি) মৃত্যুবরণকারী শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদ, ধসের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী নারী শহীদ। (মুসনাদে আহমদ ৫/৪৪৬; আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১১; নাসায়ি ৪/১৩-১৪)
৯. জুমার দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ করা। আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলিম শুক্রবার দিনের বেলা কিংবা রাতে মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের ফেতনা থেকে মুক্তি দান করেন। (মুসনাদে আহমদ ২/১৬৭; তিরমিজি, হাদিস :১০৮০)
১০. মৃত্যুর সময় কপাল ঘর্মাক্ত হওয়া। হোসাইব থেকে বোরায়দা বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ঈমানদার মৃত্যুবরণ করে কপাল ঘর্মাক্ত অবস্থায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৮২; নাসায়ি ৪/৬)
এছাড়াও সুন্দর মৃত্যুর আরো নিদর্শন রয়েছে। আমরা প্রসিদ্ধ ১০টি উল্লেখ করলাম। সুতরাং এসব মৃত্যু যারা লাভ করবেন, তাদের ব্যাপারে আমরা সুধারণা অবশ্যই পোষণ করব। কিন্তু যারা এর ব্যতিক্রম মৃত্যুবরণ করবেন, তাদের ব্যাপারে কোনো প্রকার অমূলক মন্তব্য করব না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সুন্দর মৃত্যু নসিব করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষক, জামেয়া রাহমানিয়া দারুল ইসলাম, দক্ষিণ কাজলা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।


আরো সংবাদ



premium cement