১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


ইজ্জত বাঁচাতে ইমাম হত্যা, প্রবাসীর স্ত্রীর যাবজ্জীবন

ইজ্জত বাঁচাতে ইমাম হত্যা, প্রবাসীর স্ত্রীর যাবজ্জীবন - প্রতীকী

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় মসজিদের ইমামকে হত্যার মামলায় এক প্রবাসীর স্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তার ভাইকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সাথে দণ্ডপ্রাপ্ত ওই নারীকে দুই লাখ টাকা এবং তার ভাইকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রোববার সকালে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, কুলিয়ারচর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের বিলপাড়ার দুবাই প্রবাসী নজরুল ইসলামের স্ত্রী ময়না আক্তার (২৯) এবং তার ভাই মনির হোসেন (২৫)।

অন্যদিকে নিহত ইমাম হাফেজ মো. মিজানুর রহমান খোকন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পূর্ব ভরাটি গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে।

তিনি কুলিয়ারচরের উছমানপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের বিলপাড়া পাঞ্জেগানা মসজিদে ইমামতি করতেন। ইমামতির পাশাপাশি সেখানকার মক্তবে শিশুদের পড়াতেন তিনি।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত ৩টার দিকে কোনাপাড়া এলাকায় এক ব্যক্তিকে ভারী একটি বস্তা নিয়ে যাওয়ার সময় বিষয়টি এলাকার কয়েকজনের নজরে এলে তারা চোর ভেবে চিৎকার শুরু করলে ওই ব্যক্তি বস্তাটি ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা আরেক ব্যক্তিও মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়।

পরে জানা যায়, বস্তার ভেতরে একটি লাশ রয়েছে এবং সেটি স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. মিজানুর রহমান খোকনের।

১৫ আগস্ট সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার বস্তাবন্দী লাশ এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। ওই দিন দুপুরে ইমাম হত্যায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ প্রথমে মসজিদের পাশের বাড়ির ময়না আক্তারকে ও পরে তার ভাই মনির হোসেনকে আটক করে।

এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট রাতে নিহত মিজানুরের বড় ভাই মো. নূরুল হক অজ্ঞাতদের আসামি করে কুলিয়ারচর থানায় মামলা করেন।

পুলিশ এই মামলায় ময়না আক্তার ও তার ভাই মনির হোসেনকে গ্রেফতার দেখানোর পর ১৬ আগস্ট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন ময়না আক্তার। ইজ্জত বাঁচাতে ইমাম মিজানুর রহমান খোকনকে ময়না আক্তার হত্যা করেন বলে তিনি তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেন।

তিনি জানান, ঘটনার রাতে (২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট) ময়না আক্তারের ঘরে গিয়ে মিজানুর রহমান খোকন ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি মিজানকে বাধা দেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ময়না আক্তার খাটে মশারি টানানোর রশি দিয়ে মিজানের গলা পেঁচিয়ে সজোরে টানতে থাকেন। এতে মিজানের মৃত্যু হয়।

পরে লাশের হাত-পা বেঁধে সেটি ঘরে থাকা বস্তায় ভরার পর ময়নার ভাই মনির হোসেন বস্তাবন্দী লাশটি রাস্তায় পাশে ফেলে রেখে যান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুলিয়ারচর থানার এসআই মো. কোহিনূর মিয়া ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল ময়না আক্তার ও তার ভাই মনির হোসেনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। রোববার মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি অ্যাডভোকেট যজ্ঞেশ্বর রায় চৌধুরী এবং আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট আবদুল কুদ্দুস মামলাটি পরিচালনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement