২০ মে ২০২৪, ০৬ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
`


ফরিদপুরে বৃষ্টিতে পাটচাষে সাশ্রয় হলো ৫০ কোটি টাকার জ্বালানি

ফরিদপুরে বৃষ্টিতে পাটচাষে সাশ্রয় হলো ৫০ কোটি টাকার জ্বালানি - ছবি : নয়া দিগন্ত

টানা রোদ আর তাপপ্রবাহে দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল পাট ক্ষেতের সবুজ চারা নুয়ে পড়েছিল। কুঁচকে পড়া পাতা আর অনাবৃদ্ধির ফলে চিন্তিত কৃষকের কপালে দেখা দিয়েছিল দুশ্চিন্তার রেখা। এ অবস্থায় মোটা অংকের টাকা খরচ করে জমিতে সেচ দিয়ে ক্ষেতের ফসল রক্ষাই ছিলো তাদের একমাত্র চিন্তা।

কিন্তু গভীর নলকুপেও যেন পানি উঠছিল না, সেচের খরচও তাই বাড়ছিল। এ অবস্থায় দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানের পরে গত দু-তিন দিন আগে প্রায় পুরো জেলা জুড়েই খণ্ড খণ্ড বৃষ্টি হয়েছে। আর এতেই লকলকিয়ে আড়মোড়া ভেঙে সজীব হয়ে উঠেছে পাটের ক্ষেত।
কৃষকেরা বলছেন, এই বৃষ্টিতেই তাদের কাজ হয়ে গেছে। এবার আর পানির জন্য অতিরিক্ত সেচ দিতে নগদ টাকা গুনতে হবে না। আর কৃষি বিভাগ বলছে, এই একদিনের বৃষ্টিতে ফরিদপুরের পাটচাষিদের সেচ বাবদ সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলার নয়টি উপজেলায় জেলায় ৮৬ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আর প্রতি হেক্টর জমিতে একবার সেচ দিতে কৃষকের খরচ হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা।

ফরিদপুরের আবহাওয়া ও মাটি পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পাট চাষের উপযুক্ত মাটি এবং আবহাওয়া এবং পাট জাগ দেয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকার কারণে ফরিদপুরে আবহমান কাল ধরে পাটের আবাদ হয়ে আসছে। এখানকার নদ-নদী, খাল, বিল, বাওড়, পুকুর ও জলাশয় থাকায় এখানকার কৃষককে পাট জাগ দিতে ভোগান্তি পোহাতে হতো না। এজন্য দেশের পাট চাষে এই জেলার অবস্থান শীর্ষে।

বিপুল পরিমাণে পাট আবাদ হওয়ায় ফরিদপুরকে পাটের রাজধানীও বলা হয়। জেলার সবকটি উপজেলায় পাটের আবাদ হলেও সালথা ও নগরকান্দা উপজেলাতে পেঁয়াজের মতোই সবচেয়ে বেশি পাটের আবাদ করা হয়। এ বছর এ দু’টি উপজেলাতে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। তবে প্রতিবার বৃষ্টিতে মাটি নরম হওয়ার পরে বীজ রোপন করলেও এবার বৃষ্টি নামেনি। তাই মৌসুমের শুরু থেকেই সেচ দিয়েই শুরু হয়েছে পাটের আবাদ। আর বীজ রোপনের পর গত প্রায় দেড় মাসে ক্ষেতের মাটি ভেজাতে অনেককে দু’তিনবার করেও সেচ দিতে হয়েছে। এজন্য এবার পাট চাষের খরচও বেড়ে গেছে শুরু থেকেই।

সালথার বাইলাগট্টি গ্রামের মিজান শেখ (৬৮) নামে একজন পাটচাষি এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার এই জীবনে বিগত ৫০ বছরের মধ্যে এমন খড়া দেহি ন্যাই। রোদের কারণে এইবার আমাগের অনেক খরচ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘২৮ শতকের এক পাখি ভুঁইতি সেচ দিতে পাঁচ-ছয় লিটার তেল লাগে। আর একেকটা ভুঁইতি দুই-তিনবার কইর‍্যা সেচ দিতি হইছে। এই জন্যি এইবারতো অনেক খরচ হইয়্যা গ্যাছে আমাগের। যাইহোক, শ্যাষম্যাস আল্লাহ এহন বৃষ্টি দিছে। এহন আর সেচ লাগবে নানে। এতে আমাগে অনেক টাকা বাইচ্যা গ্যাছে। আর্থিকভাবে আমরা ইট্টু উপকৃত হইছি।’

নগরকান্দার ছাগলদি গ্রামের জলিল শেখ (৫৩) নামে একজন কৃষক বলেন, ‘ভুঁইতে এইবার অনেক খরচা হইয়্যা গ্যাছে। এক পাহি ভুঁইতে একেকবারে সেচ দিতে কোথাও এক হাজার টাকাও লাগে। তিন-চাইরড্যা সেচ দিছি। এহন আল্লাহপাক বৃষ্টি দিছে, তারজন্যি ক্ষ্যাতটা নিরাপত্তা হইছে। পরে কি হবি সেইড্যা আল্লাহই জানে। রোদের কারণে পাটে ছটকায় (পোকা) খাইতেছে। এও মারতি হবি।’

মধুখালীর নওয়াপাড়া আবুল খায়ের মিয়া (৫২) বলেন, ‘এইবার রোদের কারণে আমাদের পাটের অনেক ক্ষতি হইছে। পাট গাছ বাড়ে নাই। পোকামাকড় সহ নানাকারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হইছে। এইজন্য কৃষক সেচের মাধ্যমে ক্ষেতের পাট বাঁচায় রাখছে। এখন এই বৃষ্টি হওয়াতে কিছুটা হলেও কৃষকের উপকার হইছে। এই বৃষ্টি না হইলে কৃষকের আরো ক্ষতি হইতো। পাখি প্রতি আরো এক হাজার টাকা লসে পড়তো। অন্তত সেইটাকা বাইচ্যা যাওয়ায় আমরা এই বৃষ্টিতে অনেক উপকার পাইছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (শষ্য) অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো: রইচউদ্দিন বলেন, কৃষকেরা মূলত: বৃষ্টির উপরে নির্ভর করেই প্রাকৃতিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাটের আবাদ করে থাকেন। কিন্তু এই বছর প্রায় ৩০ দিন ধরে যেই টানা বৃষ্টিহীন তাপদাহ হয়েছে একারণে ফরিদপুরের কৃষকদের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জমিতেই সেচ দিতে হয়েছে। এক হেক্টর জমিতে তাদের জমিভেদে চার থেকে ছয় হাজার টাকা প্রতিবারে খরচ হয়েছে। তবে গত দু’তিন দিনে ফরিদপুরের সব জায়গাতেই খণ্ড খণ্ড বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে ধরা দিয়েছে কৃষকদের কাছে।

তিনি বলেন, পাটের এখন যেই পর্যায় রয়েছে তাতে আমরা দেখেছি যে এই বৃষ্টির পরে এবার আর ফরিদপুরের পাটের ক্ষেতে সেচ দিতে হবে না।

কৃষকেরা আশা করছেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে এখানকার খালবিল, পুকুর ও জলাশয়গুলো ভরে উঠবে পানিতে। তাহলে তাদের আর এবার পাট জাগ দিতে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে না। সম্প্রতি এখানকার কৃষকেরা পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পেরে মাটি চাপা দিয়ে পাট মজিয়েও আঁশ ছাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। তাতে অবশ্য পাটের রং কালচে হয়ে গেছে। বাজারে দাম মিলেনি। কৃষকেরা চাইছেন, হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তারা যেনো সোনালী আঁশ ঘরে তুলতে পারেন।


আরো সংবাদ



premium cement
কেমন ছিল রাইসির ব্যক্তিগত ও কর্মজীবন ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী : ওবায়দুল কাদের রাইসির মৃত্যুতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের শোক ঝালকাঠিতে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা টানা চতুর্থবার প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতে ম্যান সিটির রেকর্ড ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক অবিলম্বে ১০ম ওয়েজবোর্ডে গঠনের দাবি বিএফইউজের হযরত পালনপুরী রহ:, জীবন ও কর্ম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ইসরাইলের হাত! দ্বিতীয়বারের মত প্রিমিয়ার লিগের গোল্ডেন বুট জয় করলেন হালান্ড সাভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা আহত, স্ত্রী নিহত

সকল