০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আবার সঙ্কটে ব্রিটিশ রাজপরিবার

-

ব্রিটেনের রাজসিংহাসনের দাবিদারদের একজন প্রিন্স হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগান মার্কেলের রাজপরিবার থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তারা রাজপরিবারের ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ অর্থ নেবেন না বলে জানিয়েছেন এবং বলেছেন, তারা আর্থিকভাবে স্বনির্ভর জীবনযাপন করতে চান। গত সপ্তাহে এই দম্পতির এক যৌথ বিবৃতি ব্রিটেনে হই চই ফেলে দিয়েছে। আর রাজপরিবার পড়েছে নতুন করে সঙ্কটজনক অবস্থায়।
হ্যারি ও মেগান বলেছেন, তারা আর রাজপরিবারের দায়দায়িত্ব পালন করবেন না। তাদের শিশুসন্তান নিয়ে জীবনযাপনের জন্য তারা ব্রিটেন এবং উত্তর আমেরিকায় ভাগাভাগি করে সময় কাটাতে চান।
প্রিন্স হ্যারি এবং মেগানের রাজকীয় উপাধি হচ্ছে সাসেক্স-এর ডিউক ও ডাচেস। তারা এরই মধ্যে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন যেটি উত্তর আমেরিকা এবং আফ্রিকায় নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করবে।
রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তারা রাজপরিবারের কারো সাথে কোনো ধরনের আলোচনা করেননি বলে জানিয়েছে বিবিসি। এমনকি রানীও বিষয়টি জানতেন না। রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের যে বড় ধরনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে এ তারই প্রমাণ।
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ে ছিল রূপকথার মতো। ২০১৮ সালের ১৯ মে লন্ডনের উইন্ডসর কাসলে প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কলেকে স্বামী এবং স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল গির্জায় ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ এবং ৬০০ নিমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিতিতে তারা বিয়ের শপথবাক্য পাঠ করেন এবং আংটি বদল করেন। ব্রিটিশ ডিজাইনার ক্লেয়ার ওয়েইট কেলারের তৈরি বিয়ের পোশাক পরে মেগান মার্কল যখন গির্জায় এসে হাজির হন তখন শ্বশুর প্রিন্স চার্লস তার হাত ধরে তাকে বিয়ের মঞ্চ পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যান।
এই বিয়ে উপলক্ষে লক্ষাধিক মানুষ উইন্ডসরে হাজির হয়েছিলেন। সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ টেলিভিশনে এই বিয়ের অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করেন।
যেভাবে পুরো অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল, সেই বিবেচনায় এটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এক রাজকীয় অনুষ্ঠান। উইন্ডসর প্রাসাদে তখন প্রথমবারের মতো সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে ১২০০ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
গত ৮ ডিসেম্বর প্রিন্স হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগান মার্কেল রাজপরিবারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে কানাডায় চলে যাওয়ার ঘোষণা দিলে ব্রিটিশ রাজপরিবার বড় সঙ্কটে পড়ে। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এই সঙ্কট নিয়ে কথা বলার জন্য গত সোমবার তার সাড্রিংহ্যাম রাজপ্রাসাদে রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্যদের ডাকেন। প্রিন্স হ্যারির সিদ্ধান্তকে অনেকে তুলনা করছেন অষ্টম অ্যাডওয়ার্ডের রাজসিংহাসন ত্যাগের সাথে। ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের ক্রমতালিকায় অবশ্য প্রিন্স হ্যারির অবস্থান অনেক পেছনে, আট নম্বরে। প্রিন্স হ্যারি, প্রিন্স উইলিয়াম এবং তাদের বাবা প্রিন্স চার্লস রানী এলিজাবেথের সাথে ওই আলোচনায় যোগ দেন। এই দম্পতির সাথে রাজপরিবারের সম্পর্ক এখন কী দাঁড়াবে, সেটা নিয়েই মূলত কথা হয় এখানে। রানী এলিজাবেথ শেষ পর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেন। হ্যারি-মেগানের ঘোষণায় রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্যরা একটা বড় ধাক্কা খেয়েছেন। প্রেম ও বিয়ের ঘটনায় এর আগেও একাধিকবার বিব্রত হতে হয়েছে ব্রিটিশ রাজপরিবারকে। বিয়ের ১২ বছর পর ১৯৯২ সালে লেডি ডায়ানার সাথে বিচ্ছেদ হয় যুবরাজ চার্লসের। মনোমালিন্য ছাড়াও এই বিচ্ছেদের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল চার্লসের সাবেক প্রেমিকা ক্যামিলা পার্কার বোলস। রাজপরিবারের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ২০০৫ সালে ক্যামিলাকে বিয়ে করেন চার্লস। এই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন না চার্লসের মা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও তার বাবা ফিলিপও।
চার্লসের সাথে বিবাহিত থাকাকালীন এবং বিচ্ছেদের পরেও একাধিক পুরুষের সাথে জুড়তে থাকে ডায়ানার নাম। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মিসরের চলচ্চিত্র প্রযোজক দোদি ফায়েদের সাথে তার সম্পর্ক। ১৯৯৭ সালে প্যারিসের যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ডায়ানা সেই গাড়িতে তার সাথে ছিলেন ফায়েদও। ডায়ানার জীবনযাপন বিষয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারের অনন্তোষ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই আলোচিত হয়েছে।
চার্লসের ছোট বোন রাজকুমারী অ্যানের সাথেও জড়িয়ে ছিল নানা পুরুষের নাম, যার মধ্যে অন্যতম ক্যামিলার সাবেক স্বামী অ্যান্ড্র পার্কার বোলসও। এছাড়া, অ্যানের স্বামী মার্ক ফিলিপসের নামও জড়ায় নানা কেচ্ছার সাথে। শুধু তাই নয়, অ্যান-মার্ক বিচ্ছেদের ফলে সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয় ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিচ্ছেদবিরোধিতা কমার প্রবণতা।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছোট বোন রাজকুমারী মার্গারেট। মার্গারেট প্রথম শিরোনামে আসেন পিটার টাউনসেন্ডের সাথে তার প্রেমের কারণে। সেই সময় বিয়েবিচ্ছেদ হয়েছে এমন কারো সাথে রাজপরিবারের সদস্যের বিয়ে হওয়া ছিল অসম্ভব। পরিবারের চাপে টাউনসেন্ডকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন মার্গারেট, কিন্তু পরবর্তীতে চিত্রগ্রাহক অ্যান্টনি আর্মস্ট্রং-জোনসের সাথে তার বিয়েও সৃষ্টি করে বহু বিতর্ক।
মার্গারেটেরও আগে মার্কিন নাগরিক ও বিবয়েবিচ্ছেদপ্রাপ্ত ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করার জন্য রাজকর্তব্য থেকে সরে আসেন অষ্টম এডওয়ার্ড। সেই সময় রাজার আসনে বসতে চলা এডওয়ার্ডের এই পদক্ষেপ আলোড়ন তোলে। এর ফলে, তার ছোট ভাই ষষ্ঠ জর্জ রাজা হন। এডওয়ার্ড-ওয়ালিসের বিয়ে এখনো রাজপরিবারের অন্যতম বিতর্কিত ঘটনা হিসেবে আলোচিত হয়। চার্লসের ছোট ভাই অ্যান্ড্রুরুরও পিছু ছাড়েনি বেশ কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনা। যেমন মার্কিন অভিনেত্রী কু স্টার্কের সাথে তার সম্পর্ক। শুধু তাই নয়, পরবর্তী সময়ে সারা ফার্গুসনকে বিয়ে করলেও কু স্টার্কের কন্যার ‘গডফাদার’ হন অ্যান্ডন্ড্রু, যা নতুন করে খবরের শিরোনামে নিয়ে আসে তাকে। মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেলের সাথে রাজপুত্র হ্যারির বিয়ের পর থেকেই চলছিল নানা রকমের জল্পনা।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল