১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


রণথম্বোর দুর্গের ইতিকথা

-


আজ তোমরা জানবে রণথম্বোর দুর্গ সম্পর্কে। এটি একটি ঐতিহাসিক দুর্গ। লিখেছেন লোপাশ্রী আকন্দ

দুর্গের নাম রণথম্বোর। এ দুর্গ এখন ঘোড়ার ডাক, তরবারির ঝলকানি, তোপ দাগার (কামান ছোড়া) হুঙ্কারে আলোড়িত হয় না। সামরিক ও প্রশাসনিক গুরুত্বও হারিয়েছে সেই কবে। এখন রয়েছে এর প্রতœতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব।
বিশ্বের অন্যতম দুর্জয় প্রতিরক্ষা ঘাঁটি রণথম্বোর দুর্গ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন চৌহান রাজবংশের রাজপুতেরা ৯৪৪ সালে। মধ্যযুগের বিবেচনায় রাজস্থানের সামরিক কৌশলগত তরঙ্গায়িত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ভূমিতে এই দুর্গের অবস্থান। চারদিকের সমভূমি থেকে দুর্গটির উচ্চতা প্রায় ৭০০ ফুট। চারপাশের জঙ্গল এ দুর্গের বাইরের প্রতিরক্ষা সুবিধা হিসেবে কাজ করত।
এক সময় দুর্গের ভেতরে অনেক দালান-কোঠা ছিল। বিভিন্ন যুদ্ধের অভিশাপ আর সময়ের প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে টিকে আছে দুর্গের কিছু ধ্বংসাবশেষ; দু’টি প্যাভিলিয়ন, বাদল মহল, হামিরের দরবার এবং আরো কিছু ধ্বংসাবশেষ। রাজপ্রাসাদের কিছু অংশ থেকে দুর্গের বিশালতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পানি সরবরাহের জন্য দুর্গের অভ্যন্তরে রয়েছে দু’টি বৃষ্টিনির্ভর জলাধার, প্রার্থনার জন্য তিনটি হিন্দু মন্দির। ১২ ও ১৩ শতকে নির্মিত মন্দির তিনটি গণেশ, শিব আর রামালালাজির প্রতি উৎসর্গীকৃত।
ইতিহাস : ১১৯২ সালে তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহান মোহাম্মদ ঘোরীর (আফগান সেনানায়ক) কাছে পরাজিত হওয়ার পর পৃথ্বীরাজের নাতি গোবিন্দ রাজার নেতৃত্বে চৌহানরা রণথম্বোরে দিল্লি সালতানাতের সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। গোবিন্দের পর তার ছেলে বলহানা রণথম্বোরের ক্ষমতায় আসেন।
দিল্লির সুলতান ইলতুৎমিশ ১২২৬ সালে রণথম্বোর অধিকার করে, কিন্তু ১২৩৬ সালে সুলতানের মৃত্যুর পর চৌহানরা এটি পুনর্দখল করে।
১২৯৯ সালে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির বিদ্রোহী সেনানায়ক মুহম্মদ শাহ রণথম্বোর দুর্গ ও রাজ্যের শাসক হামির দেবের কাছে আশ্রয় নেয়। সুলতান ফেরত চান মুহম্মদ শাহকে। হামির দেব প্রত্যাখ্যান করেন। এ বছরই সুলতান দুর্গ অবরোধ করেন এবং ব্যর্থ হয়ে দিল্লি ফিরে আসেন। ১৩০১ সালে দীর্ঘ অবরোধের পর সুলতান রণথম্বোর দখল করতে সক্ষম হন। পরবর্তীকালে মেওয়ারের রানা হামির (১৩২৬-১৩৬৪) এবং রানা কুম্ভ (১৪৩৩-১৪৬৮) রণথম্বোর দুর্গ দখল করেন। ১৫৫৯ সালে এ দুর্গ মুঘল সম্রাট আকবরের দখলে আসে। ১৭ শতকে এটি জয়পুরের মহারাজাদের দখলে যায়। পরবর্তীকালে জয়পুর রাজ্য ব্রিটিশ-ভারতের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় এবং রণথম্বোর দুর্গ ভারতের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত এই জয়পুর রাজ্যের অধীনেই থাকে। জয়পুর দেশীয় রাজ্য ১৯৪৯ সালে ভারতে যোগ দেয় এবং ১৯৫০ সালে রাজস্থানের অংশে পরিণত হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement