২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লড়াই যখন স্ত্রীদের

লড়াই যখন স্ত্রীদের - ছবি : সংগৃহীত

ভালোবাসা মানে বিশ্বাস, ভরসা; শক্তি, সাহস, অনুপ্রেরণা। ভালোবাসা মানে উৎসাহ, উচ্ছাস, উন্মাদনা। ভালোবাসার এমন আরো অসংখ্য মানে আছে, আছে আরও কতো শত উপাদান। ভালোবাসা হলো আবেগে মোড়ানো এক অনুভূতির নাম। যে আবেগে মানুষ জয় করতে পারে অসমুদ্র হিমাচল। সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে, সব ক্লান্তি ভুলে প্রিয়জনের ভালোলাগায় নিজেকে সঁপে দেয়ার নামই ভালোবাসা।

ক্রিকেটাররাও মানুষ। তারাও ভালোবাসা জানে, বুঝে, অনুভব করে। ভালোবাসার রঙ তাদেরকেও রাঙায়, ভালোবাসার দহন তাদেরও ছুঁয়ে যায়। ফলে নিজের সবটা দিয়েই প্রিয় মানুষটাকে আগলে রাখে, একটু সময় পেলেই তাদের কাছে ছুটে চল; বাকি সময়ে থাকে অনুভবে। আর প্রিয় মানুষগুলোও মান অভিমান ভেঙে দেশের স্বার্থে, ক্রিকেটের স্বার্থে নিজের ক্রান্তিলগ্নেও তাদের বিদায় দেয় হাসিমুখে। খারাপ সময়ে পাশে থাকে, আগলে রাখে, অনুপ্রেরণা জোগায়, উদ্বুদ্ধ করে। ফলে একটা ধন্যবাদ তারা পেতেই পারে।

সময়ে সুযোগে তাদের ধন্যবাদ দিতে ভোলেন না ক্রিকেটাররা মাঠে থেকেও। সেদিন লিটন বললেন, অনুপ্রেরণা পান স্ত্রী থেকে। তামিম ইকবালও এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, স্ত্রীর সমর্থনটা মন থেকে অনুভব করেন। এর আগে সাকিবের মুখেও স্ত্রীর প্রশংসা ঝরেছে। প্রশংসা করেছিলেন গোটা স্টেডিয়ামকে সাক্ষী রেখে। মনে আছে কি, সেই অস্ট্রেলিয়া বধের কথা? মাঠেই মাইক্রোফোন হাতে স্ত্রীকে দিয়েছিলেন কৃতিত্বটা।

এই পর্যন্ত ঠিক ছিল, তবে বিপত্তিটাও সাকিব-পত্নীর হাত ধরেই শুরু হলো। শততম টেস্ট খেলতে সাকিব তখন লঙ্কাদ্বীপে, খারাপ সময়ের মাঝে দিয়ে যাওয়া সাকিব ওই টেস্টে পেয়ে গেলেন সেঞ্চুরির দেখা। এদিকে ওই সময়ে ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন চলছিল জোরেশোরে, সাকিব নাকি ক্রিকেট খেলেন নিজের জন্যে। ফলে ওই শতকের পরে জবাব দেয়ার সুযোগটা লুফে নিলেন স্ত্রী শিশিরে।

ফেসবুকের নীল দুনিয়ায়, কালো কালো গোটা গোটা ইংরেজি শব্দে তীর ছুড়লেন সমালোচকদের মুখে। ইংরেজিতে দেয়া শিশিরের ওই স্ট্যাটাসটির বঙ্গানুবাদ হচ্ছে, ‘আরেকটি অপরাধ করলে তুমি! প্লিজ, এই ১০০ রান বাসায় নিয়ে এসো। যাতে আমরা সেগুলো দিয়ে তরকারি রেঁধে খেতে পারি। তুমি তো নিজের জন্য খেলো! নিশ্চয়ই তুমি ভালো কিছু করোনি!’

তারপর হয়তো থেমেই গিয়েছিলেন সাকিব-পত্নী। সমর্থকরাও ভুলে গিয়েছিল ওই কাহিনী। কিন্তু সাকিব-পত্নী শিশির থামেননি, ধীরে ধীরে খেলাটাকে বুঝে নিয়েছেন। স্বামীর পেশায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন। আইপিএলের অবদান যেখানে অনেক গুণে। ফলে সাকিবের চাওয়ার বিপরীতে ক্রিকেট তার পুরো আয়ত্তে। সাকিবের চাওয়ার বিপরীত বলার কারণ, একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, স্ত্রী যেন তার ক্রিকেট না বুঝে।

যাহোক, সাকিব-পত্নী ক্রিকেট বুঝে নিলেন। লে ক্রিকেটের নানা বিষয়ে নাক গলাতে লাগলেন। তবে গত বছর সবচেয়ে বড় বোমটা ফাটালেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে ১৯ বিশ্বকাপে ব্যর্থ মাশরাফীকে ইশারা করে বক্তব্য দিলেন। ফলে আগুন লেগে গেলো পক্ষে-বিপক্ষে, মাশরাফির ভাইও জবাব দিয়েছিলেন শিশিরের লক্ষ্যে। এর আগে থেকেই অবশ্য, টুকটাক মন্তব্য করে থাকেন সঞ্চিতা, স্বামী লিটন দাসকে সমর্থন দেন ভুলে সব দ্বিধা।

যাহোক যখন মনে হচ্ছিল এবার বুঝি সব মিটে গেছে। ক্রিকেট যে বাঙালীর আবেগ তা বুঝে গেছে। কিন্তু তখনই মুশফিকের টেস্টের ডবল সেঞ্চুরি, জবাবে এবার স্ত্রী মন্ডি। বললেন, আমরা তো হাসিমুখেই চলে যাব, আপনাদের বিকল্প আছে তো? সেই ধার যখন খানিকটা কমেছে, তখনই বোন মিষ্টি প্রেক্ষাপটে। বোনের সাথে মন্ডিও গা ভাসিয়েছেন সেই স্রোতে। আগুনে ঘি ঢালা যাকে বলে।

কিন্তু তাদের শিশুসুলভ এই কাণ্ড হাসির খোরাক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিষয়টা খুবই নেতিবাচক ক্রিকেটবোদ্ধাদের মতে। এক কথায় তরুণ ক্রিকেটারদের বিদ্রুপ করা হয়েছে তাতে। আপনি যখন একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের স্ত্রী, আপনার উপর অনেক দায়িত্ববর্তায় স্বাভাবিকভাবেই। এই অবস্থানে থেকে তরুণদের উপর চাপ তৈরী করা স্বার্থপরতাও বলা চলে। তরুণরা সুযোগ পেয়েছে, সেখানে ‘বলে বলে ছক্কা’ বিদ্রুপ, তাদের উপর আলাদা চাপ তৈরী ফেলবে নিঃসন্দেহে।

স্ত্রী যখন, স্বামীকে সমর্থন দেবেন। স্বাভাবিকই বটে। কিন্তু ওই সমর্থনটা যখন হবে অস্বাভাবিক কার্যকলাপে, তখন নিঃসন্দেহে পরিস্থিতি বিদঘুটে। তারা যেখানে অনুপ্রেরণা দেবেন, সমর্থন দেবেন, শান্ত রাখার চেষ্টা করবেন। সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাবিধ মন্তব্য করে সমর্থকদের উসকে দেয়া নৈতিকতার বিপরীতই বটে। এই যখন বাইরের অবস্থা, ভেতরের অবস্থা কতটা ভয়াবহ ভাবা যায়! যখন একজনের স্ত্রী আরেকজন সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করবে তার কাছে, আর কিছু না হোক, কিছুটা হলেও দাগ পড়বে সম্পর্কে। ফলে ড্রেসিংরুমের পরিবেশও ঘোলাটে হবে, খেলার মাঠেও তার প্রভাব পড়বে।

শিশির, সঞ্চিতা, মন্ডি কিংবা মিষ্টি- ক্রিকেটারদের সহধর্মিণী হওয়ায়, তাদের প্রতিও থাকে সাড়া দেশের দৃষ্টি। আর একজন ক্রিকেটারকে মাঠে ভালো করতে হলে, মাঠের বাইরের সমর্থনটাও খুব প্রয়োজন বটে। এবং তা সুস্থ ও স্বার্থহীন সমর্থন। না হলে, সম্পর্কে চিড় ধরে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ নষ্ট হবে। আর তা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যই ভয়াবহ হবে। নিশ্চয়ই, তারা তা চাইবেন না। ফলে, আশা করি আগামীতে দায়িত্বশীল হবেন মন্তব্যে।


আরো সংবাদ



premium cement
বনানীতে মোটরসাইকেল টেনে হিঁচড়ে নেয়ার সময় বাসে আগুন নোয়াখালীতে ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে ঝাড়– মিছিল ইউপি চেয়ারম্যানের সম্পদ বিবরণী চেয়েছে দুদক মুজিবনগর উপজেলা আ’লীগের ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে আহত ১৩ তীব্র গরমের জন্য দায়ী বর্তমান গণবিরোধী ডামি সরকার : ডা: শাহাদাত চট্টগ্রামে কাঠের গুদামে মিলল ৬শ বস্তা ভারতীয় চিনি রাজশাহীতে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা করছে ভারত : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নারায়ণগঞ্জে তাপদাহ থেকে স্বস্তি দিচ্ছে ওয়াটার মিস্ট ক্যানন শ্যামপুরে পরিচ্ছন্নকর্মীদেও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ জামালপুরে পারিবারিক কলহে একজন নিহত

সকল