দেশে পেঁয়াজের সঙ্কট মোকাবেলায় মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই টেকনাফ বন্দরে পেঁয়াজভর্তি জাহাজ এবং ট্রলার ভিড়ছে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে গত ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সাত হাজার ৫৭৯ মেট্রিকটন পেঁয়াজ মিয়ানমার থেকে আমদানি হয়েছে। স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তারা জানান, দেশের স্বার্থে সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি বাড়াতে আরো উৎসাহিত করা হচ্ছে।
গত ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার ৫০০ মেট্রিকটনের মতো পেঁয়াজ খালাস হয়েছে। তবে এ দিন মিয়ানমার থেকে কোনো পেঁয়াজের ট্রলার আসেনি। এরই মধ্যে পেঁয়াজগুলো ট্রাকে করে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিকের অভাবে খালাসের অপেক্ষায় বন্দরে আটটি পেঁয়াজবাহী ট্রলার নোঙর করা রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খালাসের আগেই ট্রলারে পচে যাচ্ছে। সরকার পেঁয়াজ আমদানিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও টেকনাফ স্থলবন্দরে পচনশীল এই পণ্য পেঁয়াজ ট্রলার থেকে খালাসে যে ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার কোনোটিই নেই। পর্যাপ্ত জেটি ও শ্রমিকের অভাবে মূলত ট্রলার থেকে পেঁয়াজ খালাস করতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে বন্দরে নোঙর করার দুই-তিন দিন পেরিয়ে গেলেও ট্রলার থেকে পেঁয়াজ খালাস করা যাচ্ছে না। পচা পেঁয়াজের গন্ধে বন্দরের বাতাস ভারী হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মাসের শেষের দিকে হঠাৎ করে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় দেশীয় বাজারে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। এর ফলে পেঁয়াজের দর দ্রুত বাড়তে থাকে। এ সময়ে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করা শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। প্রথম দিকে পেঁয়াজের চালান দ্রুত দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ করা হলেও এখন শ্রমিকসঙ্কট ও দু’টি মাত্র জেটি দিয়ে আমদানি-রফতানির মালামাল লোড-আপলোডের বিলম্বিত কারণে শত শত বস্তা পেঁয়াজ ট্রলারেই পচে যাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ফলে ব্যবসায়ীদের কাছে পেঁয়াজ আমদানিতে অনাগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে।
আমদানিকারক এএফ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো: সেলিম জানান, খালাস করতে দেরি হওয়ার কারণে মঙ্গলবার তার ট্রলারের আমদানিকৃত ৮০০ বস্তা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সেসব পেঁয়াজ থেকে ভালো পেঁয়াজ বাছাই করে কোনোরকমে লোকসান কমানোর চেষ্টায় আছেন। একইভাবে অন্যান্য প্রায় ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে খালাসে দেরি হওয়ার কারণে।
আবার এই দীর্ঘসূত্রতার পেছনে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অসৎ উদ্দেশ্যও রয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী। সময়ক্ষেপণ করে ট্রাকে লোড করা পণ্য বিকেল ৫টার পর স্কেলে তোলা গেলে একেকটি ট্রাক থেকে নাইট চার্জ হিসেবে বন্দরের অতিরিক্ত আয় হয় সাড়ে ৫ হাজার টাকার মতো। আবার রাতের শ্রমিকদের দিতে হয় অতিরিক্ত চার্জ। এটাও দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী।
টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন জেটি ও শ্রমিকসঙ্কটের কথা অস্বীকার করে জানান, বন্দরে কোনো ধরনের শ্রমিকসঙ্কট নেই। দু’টি জেটি দিয়ে দ্রুত সময়ে পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে। মূলত মিয়ানমার থেকেই পচা পেঁয়াজ আসছে বলে দাবি করেন তিনি। তিন-চারদিন পর্যন্ত ট্রলার নোঙর করে থাকলে কেন খালাস হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি জানান, আমদানি ঘোষণাপত্রসহ (আইজিএম) অন্যান্য ডকুমেন্ট দেরিতে জমা দিতে না পারায় দেরি হচ্ছে। এমনকি পেঁয়াজ খালাসের জন্য রাতে অতিরিক্ত শ্রমিক এনেও ব্যবসায়ীরা আনলোড করতে রাজি না হওয়ায় সেসব শ্রমিককে ফেরত পাঠিয়েছেন বলে জানান তিনি।
টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক দাবি করেছেন জাহাজ বন্দরে নোঙর করার সাথে সাথেই আইজিএম জমা দেয়া হয়। তিনি আরো জানান, কাঁচাপণ্য হিসেবে যত দ্রুত পেঁয়াজ খালাস করার কথা, বন্দর কর্তৃপক্ষ শত চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তাদের সেই সামর্থ্য না থাকায় আসলে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। ফলে পেঁয়াজের মতো বাজার অস্থিতিশীল করা পণ্য পচে যাচ্ছে ট্রলারেই। এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের শিকার হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা