খাদে পড়া চলচ্চিত্র শিল্পে অন্ধকার কাটতে শুরু করেছে। হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে প্রাণ ফিরেছে ঝলমনে রুপালী জগতে। তবে অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে আসার পেছনে যাদের অবদান তাদের অন্যতম বর্তমান সময়ের আলোচিত নায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিল। গত ঈদে মুক্তি পাওয়া অনন্ত জলিলের ছবিকে কেন্দ্র করে বদলে গেছে সিনেমা পাড়া। ছবিটি মুক্তির পর হলে দর্শক ফেরাতে ছবির প্রযোজক ও নায়ক অনন্ত জলিল ও নায়িকা বর্ষা হলে হলে গিয়ে প্রচারণায় নামেন। অভিনয় শিল্পী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের তাদের সাথে হলে এসে সিনেমা দেখতে অমন্ত্রণ জানান।
দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হল চালু করতে মালিকদের পাশে দাড়ান। অনেক হল মালিকদের কাছ থেকে আর্থিক কোনো সুবিধা না নিয়েই ‘দিন দ্য ডে’ ছবি হলে ফ্রি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। এতে করে সফলতাও আসে। ছবি রিলিজের কয়েক দিনের প্রতিটি শো হাউজ ফুল হতে থাকে। অনন্তের এমন প্রচারণার সফলতায় পরবর্তীতে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য ছবির শিল্পীরাও একই কায়দায় প্রচারণা শুরু করেন। সর্বশেষ হাওয়া ছবি মুক্তির আগে থেকেই ছবিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শিল্পীদের নিয়ে প্রচারণা শুরু করেন। যার কারণে হাওয়া মুক্তির পর বাজিমাত করে।
চলচ্চিত্র রক্ষায় অনন্তের এমন প্রচেষ্টাকে সাধারণ দর্শক সাধুবাদ জানালেও চলচ্চিত্রের অনেক শিল্পী এ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকেন। ফলে বিতর্ক শুরুর এক পর্যায়ে সমালোচকরা চুপ হয়ে যান। কিন্তু থেমে থাকেননি অনন্ত জলিল। তিনি কঠোর সমালোচনা ডিঙিয়ে এখানো প্রচারণায় রয়েছেন।
প্রাণহীন চলচ্চিত্রে হঠান প্রাণের সঞ্চারে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা অনন্ত জলিলের প্রচেষ্টাকেই অনুসরণীয় বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়া এ শিল্প রক্ষায় অনন্ত জলিল এগিয়ে না এলে আগামীতে কী হতো তা সহজেই অনুমেয়। তার প্রচেষ্টায় ঐতিহ্য রক্ষা পেয়েছে। সুতরাং বলতে হয় চলচ্চিত্রে অনন্তের অবদান অনুসরণীয়।
লেখক এবং চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপম হায়াৎ বলছেন, যে কোনো ক্ষেত্রে সফলতার পেছনে কারো না কারো অবদান থাকে। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও তা হয়েছে। অনন্ত জলিলের কারণে ঝিমিয়ে পড়া চলচ্চিত্রে নতুন হাওয়া লেগে সুদিন ফিরেছে।
তিনি বলেন, কোনো নায়ক যদি চলচ্চিত্রের ঐতিহ্য ফেরাতে পারেন সেটা অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। সুতরাং এটা শুনে খুব আনন্দ লাগছে যে একজনের প্রচেষ্টায় মরা গাঙে জোয়ার এসেছে। এটা অবশ্যই স্মরণীয় বিষয়।
তিনি বলেন, আগে পত্রিকায় ও রেডিওতে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারণা চালানো হতো। আর এখন আমাদের নায়করা হলে হলে গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাতে মানুষ সাড়া দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, অনন্তের মতো উচিত আমাদের অন্য সুপার হিরো যারা আছেন তাদেরও হলে গিয়ে ছবি দেখা এবং প্রচারণা চালানো। তাতে করে চলচ্চিত্রে আবার সুদিন ফিরবে।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিরি সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান নয়া দিগন্তকে বলেন, চরচ্চিত্র নির্মাণে যে খরচ হবে প্রচারে তারচেয়ে বেশি খরচ করা উচিত। যার প্রমাণ নায়ক ও নির্মাতা অনন্ত জলিল।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্রে দর্শক ফেরাতে অনন্ত জলিল যে অবদান রেখেছেন তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কারণ সময়ের ব্যবধানে কয়েক বছর থেকে সিনেমা নির্মাণ কমে যাওয়ার সাথে দর্শকও আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছিল। অনন্ত ‘দিন দ্য ডে’ নির্মাণের পর সিনেমার চিত্র পাল্টে যায়। এত বড় বাজেটের ছবি নির্মাণের পর হলে হলে গিয়ে যেভাবে তিনি প্রচারণা চালিয়েছেন তাতে হলে দর্শক ফিরেছে। তাকে দেখে পরবর্তীতে যত ছবি নির্মাণ হয়েছে তারাও তাকে অনুসরণ করে একই কৌশলে প্রচারণা চালিয়েছেন। তাতে করে চলচ্চিত্র শিল্প প্রাণ পেয়েছে। ফলে অনন্ত জলিল সিনেমা শিল্পে আজীবন অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন।
সিনেমা হল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল নয়া দিগন্তকে বলেন, ভয়াবহ অবস্থার মধ্য থেকে সিনেমা শিল্পকে রক্ষায় অনন্ত জলিলের অবদান আজীবন স্মরণীয়। কারণ দীর্ঘ দিন ধরে সিনেমা নির্মাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় রাজধানীসহ দেশের অনেক সিনেমা হল দর্শকশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে একে একে বন্ধ হয়ে যায় শত শত হল। এতে করে এ শিল্প রক্ষা এতটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে যে চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারের দেয়া ঋণ পর্যন্ত কেউ নিতে চায়নি। কিন্তু অনন্ত জলিলের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ বন্ধ হল খুলেছে। তিনি ঢাকা ছাড়াও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্ধ হয়ে পড়া হলগুলো রক্ষায় সেগুলোতে তার শত কোটি টাকা বাজেটে নির্মিত ছবি ফ্রিতে চালাতে দিয়েছেন। যাতে করে দর্শক হলে ফিরে। তার তার এ প্রচেষ্টা কাজে লেগেছে। ফলে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা