২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধর্ষণ বিষয়ে অনন্ত জলিলের দেয়া মন্তব্য নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল

ড. আসিফ নজরুল ও অনন্ত জলিল - ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি ধর্ষণ নিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের অভিনেতা অনন্ত জলিলের ভিডিও বার্তায় দেয়া মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমালোচকদের উদ্দেশে ড. আসিফ নজরুল তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে মঙ্গলবার বিকেলে একটি পোস্ট করেছেন। সেটি হুবহু নিচে দেয়া হলো :

‘অনন্ত জলিলের উপর এতো ক্ষোভ!
অনন্ত জলিলের প্রতি এতো ক্ষোভ কেন কিছু মানুষের?
কারণ তারা অনন্ত জলিলকে আহমদ ছফা বা চমস্কি মনে করেছিল!
উপরের উত্তরটা দিয়েছেন ঢা.বি.র অধ্যাপক ফেরদৌস আনাম। ফেসবুকে তার এ বাক্যটি আমাকে বিনোদিত করেছে। অনন্ত জলিলের উপর কারো কারো ঝাপিয়ে পড়ার রিখটার স্কেল দেখে আমারো অবাক লেগেছিল।
প্রথমে বলে নেই, ধর্ষনের কারণ নিয়ে অনন্ত জলিলের বক্তব্যটি নিন্দনীয় ছিল। তার বক্তব্যে ক্ষোভ দেখানো যেতে পারে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যে ক্ষোভ তার বিরুদ্ধে দেখানো হচ্ছে সেটা আরো অনেক বড় অপরাধীদের (ধর্ষকদের নির্মাতা আর পালনকর্তাদের) বিরুদ্ধে দেখানো হয় না কেন? তাদের তো নামটা নেয়ার সাহস থাকে না অনেকের। বরং তাদের তোয়াজ করেন কেউ কেউ।
উদাহরণ দেই। ধর্ষক দেলোয়ারকে জনতা ধরিয়ে দেয়ার পরও যে পুলিশ গ্রেফতার তাকে করেনি সেই পুলিশের হর্তাকর্তাদের সাথে হাসিমুখে ছবি পোষ্ট করেন কেউ কেউ। ভোটকেন্দ্র দখল করে ধর্ষক দেলোয়ার যে শতভাগ ভূয়া নির্বাচনের ফুট সোলজার হয়েছিল, সেই নির্বাচনের শিরোমনিদের মাথায় তুলে নাচেন অনেকে।
অনন্ত জলিলরে গালমন্দ করা খুব সোজা আর নিরাপদ। সেটা করেন। কিন্তু ধর্ষন মহামারীতে সত্যি ক্ষুদ্ধ আর বেদনার্ত হলে আরেকটু সৎ আর সাহসী হতে হবে আপনাকে।’

উল্লেখ্য, ধর্ষণ আর নারীদের পোশাক বিষয়ে তার ফেসবুক পাতায় একটি ভিডিও আপলোড করেন অনন্ত জলিল, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়। অনেক শোবিজ তারকাও অনন্ত জলিলের এই ভিডিও নিয়ে কথা বলেছেন।

প্রথম ভিডিওটির শুরুতে অনন্ত জলিল ধর্ষকদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কথা বলেছেন, তবে ভিডিওর পরবর্তী অংশে তার বেশ কিছু কথার মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদেরই দোষারোপ বা ‘ভিকটিম ব্লেমিং’ করা হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

কিন্তু পরে আরেকটি ভিডিওতে পোস্ট করেন অনন্ত জলিল। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি মেয়েদেরকে সম্মান করি, শুধু মেয়েদের না সারা দেশের মানুষকে সম্মান করি।

ধর্ষণবিরোধী চলমান আন্দোলনের মধ্যে অনন্ত জলিল সব মিলিয়ে তিনটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন। এর মধ্যে প্রথম ভিডিওটিতে তিনি নারীদের পোশাক নিয়ে বক্তব্য দেয়ার পর পরের দু'টিতে তিনি নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন।

প্রথম ভিডিওতে নারীরা কী করলে ধর্ষণের শিকার হবে না, সে বিষয়ে কিছু মতামত দিচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন অনন্ত জলিল।

কিন্তু এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হলে তিনি ড্রেসের ব্যাপারটা বাদ দিয়ে এবং আগের ভিডিও'র বিষয়ে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে আরেকটি ভিডিও আপলোড করেন।

এরপর সর্বশেষ প্রকাশ করা ভিডিও-তে তিনি বলেন, একটি ব্যাপারে তিনি মর্মাহত।

অনন্ত জলিল বলেন, ‘ভিডিওটিতে ৩ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড ধর্ষকদের বিরুদ্ধে বলেছি, যারা পোশাক নিয়ে সমালোচনা করেছেন তাদের চোখে পড়েনি। আমি যে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর কথা বললাম, সেগুলো নিয়ে অ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারতেন।’

প্রথম ভিডিওতে যা বলেন অনন্ত জলিল
‘আমি আজ কিছু কঠিন কথা বলবো,’ এই বলে তার বক্তব্য শুরু করেছিলেন অনন্ত জলিল।

ধর্ষণের মতো অপরাধের সাথে যারা জড়িত, তাদের বিরোধিতা করে মূলত তিনি ভিডিও বার্তায় বক্তব্য রাখেন।

তবে ভিডিওর এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সমস্ত মেয়েদের উদ্দেশ্যে কিছু বলি ভাই হিসেবে। সিনেমা, টেলিভিশন সোশাল মিডিয়াতে অন্য দেশের অশ্লীল ড্রেসআপ দেখে ফলো করার চেষ্টা করো। এবং ফলো করে সেইম ড্রেসআপ পরে ঘোরাঘুরি করো।’

এরপর তিনি বলেন, ‘এই চেহারার দিকে মানুষ না তাকিয়ে তোমাদের ফিগারের দিকে তাকায়।’

‘ফিগারের দিকে তাকিয়ে বখাটে ছেলেরা বিভিন্নভাবে মন্তব্য করে এবং রেপ করার চিন্তা তাদের মাথায় আসে ... তোমরা কি নিজেদের মডার্ন মনে করো? এটা কি মডার্ন ড্রেস নাকি অশালীন ড্রেস?’

তিনি মেয়েদের ‘শালীন পোশাক’ পরার ওপর জোর দেন।

অনন্ত জলিল বলেন, ‘নিজেকে একটা ভদ্র মেয়ের পাশে দাঁড় করিয়ে দেখো, কত বাজে লাগে।’

‘ছেলেদের মতো একটা টি-শার্ট পরে রাস্তায় বের হয়ে যাও। খুব মডার্ন তুমি! নিজেকে অনেক মডার্ন মনে করো! তারপর ইজ্জত হারিয়ে বাসায় যাও। হয় আত্মহত্যা করো, নয়তো কাউকে আর মুখ দেখাতে পারো না।’

‘শালীন ড্রেস পরলে যারা বখাটে, যারা ধর্ষণের চিন্তা-ভাবনা করে তারাও তোমার দিকে তাকাবে না। সম্মান করবে। মাটির দিকে তাকিয়ে চলে যাবে,’ বলেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement