০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কুবিতে সাংবাদিকদের ছাত্রলীগ নেতার হুমকি, নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি

কুবিতে সাংবাদিকদের ছাত্রলীগ নেতার হুমকি, নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি। - ছবি : সংগৃহীত

‘গুন্ডামির কি দেখছে?’ সাংবাদিকরা এখনো আমাকে চিনে না, আমি কে? এই ক্যাম্পাস কারো বাপের না।’ গত ২৯ জুন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে এ হুমকি দেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রেজা-ই-এলাহি। হুমকির ছয় দিনের মাথায় গত ৩ জুন রাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (কুবিসাস) কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছে কুবিসাস।

মঙ্গলবার (৬ জুন) কুবিসাসের সংবাদকর্মীদের পক্ষে সাধারণ ডায়েরি করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ইউসুফ আকাশ।

সাধারণ ডায়েরি সূত্রে জানা যায়, গণমানুষের কাছে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সংবাদকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। সংবাদ প্রচার করায় কুবিসাসের সদস্যদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিভিন্নভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে।

গত ২৯ মে (সোমবার) দুপুরে ইংরেজি বিভাগের ১৫তম ব্যাচের দুই শিক্ষার্থীর মাঝে মারামারির ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে শাখা ছাত্রলীগের ২০১৭ সালে বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহি ও স্বজন বরণ বিশ্বাসের নেতৃত্বে দৈনিক যায়যায় দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রুদ্র ইকবালকে হত্যা, মেরে লাশ গুম করে ফেলা, মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশে হেনস্তা করেন সাবেক-বর্তমান নেতা-কর্মীরা।

একই ঘটনার জের ধরে বিকেল ৪টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে ফের সাংবাদিকদের দেখে নেয়ারর হুমকি দেন রেজা-ই-এলাহি, লোক প্রশাসন ৯ম ব্যাচের মাহি হাসনাইন, নৃবিজ্ঞান ১০ম ব্যাচের আমিনুর বিশ্বাস, লোক প্রশাসন ১১তম ব্যাচের মমিন শুভ, নূরউদ্দিন হোসাইন, একই বিভাগের ১২তম ব্যাচের রিফাত আহমেদ, ১৩তম ব্যাচের সাদ্দাম হোসেন, ১৪তম ব্যাচের শেখ মাহাবুব, ১৫তম ব্যাচের নওশীন আল ইসলাম, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১১তম ব্যাচের ওয়াসিফুল ইসলাম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৩তম ব্যাচের আসিফ এন্তাজ রাব্বি, ১৩তম ব্যাচের বাংলা বিভাগের রাকিব হোসাইন, নৃবিজ্ঞান ১৪তম ব্যাচের রাকেশ দাস, অর্থনীতি বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শেখ মোহাম্মদ মাসুম, রাফি প্রমুখ।

এদিকে সাংবাদিক হেনস্তা এবং হুমকি-ধমকির ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ২৪টি সাংবাদিক সংগঠন এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।

এ ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সাবেক নেতা রেজা ই এলাহী সমর্থিত নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন। অর্থনীতি বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ মোহাম্মদ মাসুম (এসকে মাসুম) বলেন,‘ডিরেক্ট একশন হবে এখন থেকে।’ লোক প্রশাসন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন নাম এক ছাত্রলীগ কর্মী ফেসবুকে তখন লিখেন, ‘সাংবাদিকদের এক এক করে ধরে কালার পাল্টে লাল করে দিব।’

এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মানববন্ধন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ। সোমবার (৫ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে সাংবাদিক সমিতির আয়োজনে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন তারা। এ সময় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি,’ রক্তদাতা সংগঠন‘বন্ধু’, কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি মডেল ইউনাইটেড ন্যাশনস অ্যাসোসিয়েশন, অনুপ্রাস কণ্ঠ চর্চা কেন্দ্র, প্লাটফর্ম, রোভার স্কাউটস, প্রথম আলো বন্ধুসভা, অভয়ারণ্য, তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, লিও ক্লাব কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, আইটি সোসাইটি, সায়েন্স ক্লাবসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।

এসব বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন ও প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীর মোবাইলফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগের বিষয় বরাবরের মতো অস্বীকার করে রেজা-ই-এলাহি বলেন, ‘আমি সাংবাদিক হেনস্তা করিনি এবং সাংবাদিক সমিতির অফিস ভাঙচুরের সাথে জড়িত নই।’

সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মুহা. মহিউদ্দিন মাহি বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের হুমকির পর কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় এটাই প্রতিয়মান হয়ে যে, সাংবাদিকদের ওপর ক্ষোভ থেকেই তারা এ অপকর্ম ঘটিয়েছেন। জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।


আরো সংবাদ



premium cement