নোয়াখালীর বিচ্ছন্ন হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুত্বপূর্ণ পদে ডাক্তার নেই দীর্ঘদিন ধরে। ডাক্তার-নার্সসহ বিভিন্ন পদের মধ্যে খালি রয়েছে ৫৬টি পদ। ফলে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত হচ্ছে।
৩-৪ জন ডাক্তার ও নার্স দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সৃজনকৃত ৩১টি ডাক্তার পদের মধ্যে ২১টিতেই ডাক্তার নেই। অন্যান্য ৪০টি সৃজনকৃত পদের মধ্যে ৩৫টি পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ৩০ জন সিনিয়র স্টাফনার্স পদে আছেন ৪ জন ও ১০ জন মিডওয়াইফ পদের মধ্যে ৯টি পদই শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে।
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: নাজিম উদ্দিন জানান, হাসপাতালে জুনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজি, গাইনি, মেডিসিন, সার্জারি, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, নাক কান গলা, অর্থোপেডিক্স, মেডিক্যাল অফিসার হোমিও, ইএমও, আইএমও, অ্যানেসথেসিস্ট, এমও প্যাথলজিস্ট, সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে কোন ডাক্তার নেই।
৫০ শয্যার হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দ্বীপের ৬ লাখ লোকের চিকিৎসার একমাত্র প্রধান কেন্দ্র। প্রসূতি মা, শিশুরোগসহ সাধারণ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা না পাচ্ছেন ডাক্তার, না পাচ্ছেন বিছানা। প্রায় হাসপাতালের অলি-গলিতে, করিডোরে রোগীদের পড়ে থাকতে দেখা যায়। চিকিৎসকের অভাবে চিকিৎসা পেতে রোগীদেরকে অমানবিকভাবে বিশ্রী অবস্থায় পড়ে থাকতে হয়।
অন্যদিকে চিকিৎসাসেবায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হলেন নার্সরা। হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০ জন সিনিয়র স্টাফনার্সের পদ থাকলেও সেখানে মাত্র ৪ জন সিনিয়র স্টাফনার্স রয়েছে। মিডওয়াইফ পদে ৪ জন থাকার কথা থাকলেও সেখানে মাত্র ১ জন বর্তমান। বাকি সব পদে জনবল শূন্য রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা: নাজিম উদ্দিন জানান, নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে নার্স ও মিডওয়াইফ পদে উপজেলা পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে আসলেও কিছুদিনের মধ্যে কিভাবে যেন ট্রান্সফার হয়ে যায়। আমরা তা জানিও না কিংবা আমাদের কাছে কোনো যোগ-জিজ্ঞাসারও প্রয়োজন বোধ করেন না সংশ্লিষ্টরা। নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে তাদেরকে পাঠানো হয়, আবার এখান থেকে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদেরকে অফিসিয়ালি ধরে রাখার ব্যাপারে আমাদের কোনো সুযোগ নেই।
হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারী ডেন্টাল সার্জন ও এমও প্যাথলজিস্ট দীর্ঘদিন ধরে অন্য প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে কাজ করছেন। কিন্তু বেতন নিচ্ছেন হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে।
অন্যদিকে হাতিয়া উপজেলার মাঠ পর্যায়ের ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হরনী ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়া ডাক্তারবিহীন রয়েছে - চানন্দী, নলচিরা, তমরদ্দি, বুড়িরচর, সোনাদিয়া, আফাজিয়া, ওছখালি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এসব স্থানে একমাত্র উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (স্যাকমো) দ্বারা স্বাস্থ্যসেবা চলছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: নাজিম উদ্দিন জানান, আমরা হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকটের কথা সিভিল সার্জন অফিসে বার বার জানিয়েছি। ইতোমধ্যে ৩ জন এমবিবিএস ডেপুটেশনে পাঠিয়েছে। হাতিয়া দ্বীপের ৬ লাখ লোকের একমাত্র প্রধান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটিতে সবসময় রোগীদের চাপ অত্যন্ত বেশী। এজন্য দ্বীপবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সৃজনকৃত পদগুলোতে ডাক্তার সংখ্যা পূরণ করা খুবই জরুরী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা