২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফেনীতে করোনা সন্দেহে শ্বাশুড়িকে রাস্তায় ফেলে যায় পুত্রবধূ !

ফেনীতে করোনা সন্দেহে শ্বাশুড়িকে রাস্তায় ফেলে যায় পুত্রবধূ ! - নয়া দিগন্ত

ফেনীর সোনাগাজীতে করোনা সন্দেহে অসুস্থ্য বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি ফিরোজা বেগমকে (৭৫) রাস্তায় ফেলে যায় দুইপুত্র বধূ। গত শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সুজাপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃদ্ধা ফিরোজা বেগম উপজেলার সুজাপুর এলাকার হোসেন আহম্মদের স্ত্রী। মো. মোস্তফা ও ওমর ফারুক নামে দুজন ছেলের য়েছেন। তারা উভয়ে বর্তমানে প্রবাসে আছেন। বাড়িতে দুই পুত্রবধূর সঙ্গে শ্বাশুড়ি ফিরোজা বেগম থাকতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসিসসহ কয়েকটি রোগে ভুগছেন।

এতদিন পুত্রবধুরা তার সেব্ওকরোনা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ারপর থেকে ওষুধপত্র কিনে দেওয়া ও সেবাকরা অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছেন।বৃদ্ধা ফিরোজা বেগম বউদের কাছে কিছু চাইলে মাঝে মধ্যে তার উপর চড়াও হয়ে শারীরিকভাবে তাকে লাঞ্চিত করত পুত্রবধুরা।গত কয়েকদিন ধরে বৃদ্ধা মহিলাটির অসুস্থ্যতা বেড়ে যায়।

শনিবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বড় ছেলে মোস্তফার স্ত্রী পারভিন আক্তার ও ছেলের স্ত্রীলিপি আক্তার পরস্পর যোগসাজসে অসুস্থ্য বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে বাড়ির পাশের রাস্তায় ফেলে যায়।

বৃদ্ধা ফিরোজা বেগমের বাড়ির বাসিন্দা আবদুর রব জানান, শনিবার সকালে ফিরোজা বেগমের পুত্রবধু পারভিন আক্তার ও লিপি আক্তার মিলে তাকে বাড়ির পাশে রাস্তায় ফেলে যায়। মহিলাটি কিছুক্ষণ পর হামাগুড়ি দিয়ে বাড়িতে চলে যায়।এরপর বিকেলে আবারও তারা ফিরোজাকে বাড়ি থেকে ধরে এনে রাস্তায় ফেলে যায়। প্রায় সময় দুই বউ তাকে লাঞ্চিত করতো। ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া দিতনা।

স্থানীয় সমাজের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সাহাব উদ্দিন বলেন, ইফতারের আগমুর্হুতে বিষয়টি তারা জানার পর তিনি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামানকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে এসেম হিলাটিকে হাত-মুখ ধুয়ে দিয়ে তাকে ইফতার করান।পরে বাড়িতে লোক পাঠিয়ে দুই পুত্রবধূকে ডেকে এনে বিষয়টি সমাধান করে বৃদ্ধাকে দুই পুত্রবধূর হাতে তুলে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

জানতে চাইলে মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় ইফতারের আগমুহুর্তে স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি শুনে তিনি তাৎক্ষণিক ঘটনা স্থলে ছুটে গিয়ে মহিলাটিকে হাত-মুখ ধুয়ে দিয়ে ইফতার করান।পরে বাড়ি থেকে বৃদ্ধার দুই পুত্রবধূকে ডেকে এনে স্থানীয় সমাজের পঞ্চায়েত কমিটির লোকজনকে নিয়ে বৈঠকে বসেন।

এসময় জিজ্ঞাসাবাদে তারা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে শ্বাশুড়িকে ঘরে নিতে আবেদন করেন। তিনি বলেন, সমাজপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করবে না বলে অঙ্গীকার করায় এবং দুই ছেলের বউরা এক জন ফিরোজাবেগমকে এক মাস করে বরণ পোষণ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সবাই মিলে বৃদ্ধাকে বাড়িতে ঘরে দিয়ে আসেন। ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বলেন, রোববার দুপুরে তিনি নতুন কাপড়, চাল, ডাল, আলু, তেল, পেয়াজ, রসুন, ছোলাবুট, মুড়ি, খেজুর, হরলিকস, দুধ, সেমাই, চিনিসহখাদ্য, ইফতার ও ঈদ সামগ্রী নিয়ে বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধা ফিরোজার সঙ্গে দেখা করে তার খোঁজখবর নেন। তিনিবলেন, পুত্রবধূরা তাকে বরণ পোষণ ও সেবা না করলে তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এ সে মায়ের মতো সেবা করবেন বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।


আরো সংবাদ



premium cement