স্বামী মারা গেছে বিদেশ-বিভুঁইয়ে এমন খবরের অনেকদিন পর অন্যত্র বিয়ে হয় স্ত্রীর। তারও অনেকদিন পর জানা গেল স্বামী মহিউদ্দিন মরেননি। তিনি বর্তমানে মিয়ানমার কারাগারে বন্দী। তিন বছর পর স্বামী বেঁচে থাকার খবর সাবেক স্ত্রীর কানে পৌঁছলে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন তিনি।
অনেকটা বেদনাবিধুর ফিল্মের মতো ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের মছদিয়া এলাকার আকবর পাড়ায়। জানা গেছে, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (২২) ওই এলাকার মোস্তাক আহমদের দ্বিতীয় ছেলে। পেশায় কাঠমিস্ত্রি। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। দীর্ঘ দিন প্রেমের সম্পর্কের পর ২০১৫ সালে একই উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের এক তরুণীকে বিয়ে করেন মহিউদ্দিন।
বিয়ের পর থেকে তিনি শ্বশুরবাড়িতে থাকা শুরু করেন। কিছু দিন পর মহিউদ্দিন কাউকে কিছু না জানিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। শ্বশুরপক্ষ ও বাবা বিভিন্ন জায়গায় তার খোঁজ নিয়েও না পেয়ে হতাশ হয়ে যান।
নিখোঁজের মাস দুয়েক পর মহিউদ্দিন তার শ্বশুর ও বাবার মোবাইলে ফোনে জানান, মানব পাচারকারীরা তাকে অপহরণ করে থাইল্যান্ডের একটি পাহাড়ে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে তাকে কোনো খাবার দেয়া হচ্ছে না। এ সময় তার সেই মোবাইল থেকে অপরিচিত একজন কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। নইলে ছেলেকে জীবিত ফিরে পাওয়া যাবে না বলে হুমকি দেয়।
মহিউদ্দিনের বাবা নিরুপায় হয়ে ছেলেকে প্রাণে বাঁচানোর জন্য ঋণ করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাঠান। মহিউদ্দিনের বাবা মোস্তাক আহমদ নয়া দিগন্তকে বলেন, অজ্ঞাত ব্যক্তিদের দেয়া ইসলামী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে আমি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা করি। সেই জমার রশিদ এখনো আমার কাছে রয়েছে।
কিছু দিন পর মহিউদ্দিন তার বোনকে ফোন করে জানান, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে না খেয়ে খুবই কষ্টে আছেন। তার রক্ত বমি হচ্ছে। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। আদম পাচারকারীরা আরো টাকা না পেয়ে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে, তাই রক্ত বমি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এর কিছু দিন পর অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে ফোন করে কে বা কারা পরিবারে খবর দেয়, মহিউদ্দিন আর বেঁচে নেই। মানব পাচারকারীরা তাকে মৃত ভেবে সমুদ্রে নিক্ষেপ করেছে। এ খবরে পরিবারের সবাই ভেঙে পড়েন। পরে মহিউদ্দিনের কুলখানিও হয়। ওই দিকে তার স্ত্রীকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেন মহিউদ্দিনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
চলতি আগস্ট মাসের শুরুর দিকে রেঙ্গুন থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তি (যিনি পেশায় একজন জেলে) লোহাগাড়ার আধুনগরের মছদিয়া এলাকায় তার পূর্বপুরুষের বাড়ি খুঁজতে আসেন। এ সময় তিনি মহিউদ্দিনের কথা সবাইকে বলতে থাকেন। মহিউদ্দিনের বাবার কানে এ খবর পৌঁছলে তিনি বিস্তারিত শুনে নতুনভাবে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা করছেন। সেই লোকটি জানান, মহিউদ্দিন মিয়ানমারের রেঙ্গুন কারাগারে বন্দী আছে। মহিউদ্দিন তাকে বলেছে, আধুনগর মছদিয়া গ্রামে গিয়ে আমার কথা বললেই লোকজন চিনবে। অনেকদিন আগে সেনাবাহিনীর লোকজন তাকে নদী থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে তিনি দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে রেঙ্গুন কারাগারে বন্দী আছেন।
এদিকে দ্বিতীয় বিয়ের তিন বছর পর প্রেম করে বিয়ে করা স্বামী মহিউদ্দিনের বেঁচে থাকার খবর এলে তার স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আধুনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো: আবু নাছের চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, মহিউদ্দিনের বেঁচে থাকার খবরে আমরা সবাই অবাক হয়েছি। তার আইডি কার্ড ও তথ্য-উপাত্য নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে বিজিবির কক্সবাজার রিজিওনাল কমান্ডারকে আদেশ দিলে নানা প্রক্রিয়া শেষে মহিউদ্দিন ফিরে আসতে পারে বলে আমরা আশা করছি।
মহিউদ্দিনের আত্মীয় মো: হারুন নয়া দিগন্তকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে ঢাকায়। মিয়ানমার দূতাবাস ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মহিউদ্দিনকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। একই সাথে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাথেও যোগাযোগ করছেন।
আরো পড়ুন :
কৃষি কর্মকর্তার বাড়িতে প্রেমিকার অনশন
বগুড়া অফিস
বগুড়ার সোনাতলায় অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে যাওয়ার খবর পেয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন করছেন ফার্মাসিস্ট প্রেমিকা বিপাশা খাতুন। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে রাশেদুল।
জানা গেছে, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নের লোহাগাড়া গ্রামের আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে ও বগুড়ার কাহালু উপজেলার মালঞ্চা ইউনিয়নে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামের (২৬) সাথে পাশের মহিচড়ন গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান বুলুর মেয়ে ও সিরাজগঞ্জ থেকে ফার্মাসিস্ট বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করা বিপাশা খাতুনের (২২) চার বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার প্রেমিক রাশেদুল ইসলাম গোপনে বগুড়া সদরে বিয়ে করতে যায়। বিষয়টি জানার পর বিপাশা খাতুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিক রাশেদুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন।
অনশনকারী বিপাশা খাতুন জানান, রাশেদুল ইসলাম তার প্রেমিক। সে তাকে বিয়ে না করলে বিপাশা তার বাড়িতেই আত্মহত্যা করবেন। বিপাশা খাতুনের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তারা দু’জন সম্পর্কে ফুফাতো মামাতো ভাইবোন।
তাদের দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্কের কারণে প্রেমিক রাশেদুল ইসলামকে সুপারিশ করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে চাকরি নিয়ে দেন প্রেমিকার বাবা মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান বুলু। শর্ত ছিল চাকরি হওয়ার পর সে বিপাশাকে বিয়ে করবে।
রাশেদুল ইসলামের বাড়ির লোকজন জানান, গত বৃহস্পতিবার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বগুড়া সদরে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে। এখন সে ওখানেই অবস্থান করছে।
সোনাতলা থানার ওসি মো: শরিফুল ইসলাম বলেন, অনশনের বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো পড়ুন :
রাজধানীতে দুই মেয়ে শিশুকে যৌন নিপীড়ন একজন গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর লালবাগে সাত ও নয় বছরের দুই মেয়ে শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এক শিশুর বাবা থানায় মামলা করেছেন। পরে অভিযুক্ত তরুণ শুক্কুর আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার দুই শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও মামলা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। পরে গতকাল শিশু দুটির শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।
শিশু দু’টির বাবা জানান, শহীদনগরে একটি বহুতল ভবনের প্রথম ও চতুর্থ তলায় থাকেন তারা। শিশু দুুু’টি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। গত মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে একই ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা শুক্কুর আলী ১ শ’ টাকার লোভ দেখিয়ে সাত বছরের শিশুটিকে তার রুমে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে যৌন নিপীড়ন করে। একই সময় নিচতলার অপর শিশুটিও সেখানে গেলে তাকেও নিপীড়ন করা হয়। পরে শিশু দুটি সবাইকে ঘটনা বলে দিলে স্থানীয়রা বিচার-সালিসের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু কোনো সমাধান না হওয়ায় মামলা দায়ের করেন এক অভিভাবক। দুই শিশু তাদের পরিবারকে জানিয়েছে, এক মাস ধরে শুক্কুর আলী তাদের যৌন নিপীড়ন করে আসছিল।
লালবাগ থানার ওসি সুবাস কুমার পাল জানান, এ ঘটনায় নিপীড়ক শুক্কুর আলীকে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়েছে। সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।