২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকায়

ইন্দুরকানীতে খালের পানিতে রান্না খালের পানি পান

- ছবি : নয়া দিগন্ত

পাশের খাল দিয়ে বালতি ভরে পানি উঠিয়ে রান্না আবার সেই পানিতে ফিটকারি দিয়ে পান করতে দেয়া হয় পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর হাট-বাজারের শত শত খাবার হোটেল ও রেষ্টুরেন্টে। অথচ বাজারের দু’পাশের শতাধিক আবাসিক ভবনের পয়নিস্কাসনের সংযোগ এই খালের সাথেই। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই চলে আসলেও এর যেন কোনো উন্নতি নেই। পানির দেশ ইন্দুরকানীতে চারদিকে পানিতে থৈ-থৈ করলেও এখানে নিরাপদ খাবার পানির নামমাত্র সুবিধাটুকুও নাই। পানির দেশে খাবার পানি নাই এ কথা কেহ বিশ্বাসও করতে চাইবে না।

ইন্দুরকানী উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এখানকার ৯০ শতাংশ মানুষ খাল ও পুকুরের পানির উপর নির্ভরশীল। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে পাড়েরহাট ইউনিয়নের চারটি গ্রামে কিছু গভীর নলকূপ স্থাপন করা গেলেও বাকি চারটি ইউনিয়নের কোথাও গভীর নলকূপ স্থাপন সম্ভব হয়নি। উপজেলায় নয় শতাধিক অগভীর নলকূপ থাকলেও তার অধিকাংশেই আয়রন ও আর্সেনিকযুক্ত। ফলে তা ব্যবহার অনুপযোগী।

এদিকে, ইন্দুরকানীতে বর্ষা মৌসুমে খাবার পানি হিসেবে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করা গেলেও শুকনা মৌসুমে খাবার পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। বালিপাড়া ও চন্ডিপুর ইউনিয়নের নদী ও খালের পানি বেশি লবণাক্ত। বড় কোনো পুকুর নাই। ছোট ছোট পুকুরে শুকনো মৌসুমে ব্যাঙের পোনা কিল বিল করে। তখন এসব পানি এতটা দূষিত হয় যে পান করা তো দূরের কথা ধোওয়া মোছার কাজেও ব্যবহার অনুপযোগী।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তথ্য মতে, এ উপজেলায় ২৭৬টি গভীর ও ৯৩৬টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। সোলার পিএসএফ চারটি, RO প্লান্ট রিভার্স ওসমসিস প্লান্ট (Reverse Osmosis Plant) চারটি এবং আশ্রয়ন প্রকল্পের ৬৫১টি-সহ রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টার আছে ১ হাজার ১৮৬টি। যা চাহিদার তুলনায় যৎ সামান্য।

ইন্দুরকানী উপজেলা সদরের বাসিন্দা ও বাজারের ব্যবসায়ী সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইন্দুরকানীতে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট। আমাদের পানি কিনে পান করতে হয়। বাজারের হোটেল ও রেষ্টুরেন্টগুলোতে খালের পানিতে রান্না করে আবার খালের পানিই খাওয়ায়। অথচ এই খালের দু’পাশে শত শত ভবনের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খালের সাথেই রয়েছে।’

ইন্দুরকানী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শিমুল বড়াল বলেন, ‘ইন্দুরকানীতে খাবার পানির সঙ্কট আছে। উপজেলার একটি ইউনিয়নের কিছু অংশে গভীর নলকূপ বসে, অন্য কোথাও বসে না। আবার অগভীর নলকূপগুলোর পানিতে আয়রন। আবার কোন কোন এলাকায় আর্সেনিকের মাত্রা বেশি। অনেকেই ঠান্ডার কারণে বৃষ্টির পানি পান করতে পারে না। খালের পানিতে ফিটকারী দিলে ভাসমান অপদ্রব্য দূর হয় এবং জীবাণু মারা গেলেও তা কিন্ত পানিতেই থেকে যায়। তাছাড়া ফিটকারী পানির লবণাক্ততা এবং রাসায়নিক পদার্থ দূর করতে পারে না। তাই ফিটকারী দেয়া পানি নিরাপদ না।’

বড়াল আরো বলেন, ‘শিগগিরই আরো ২ হাজার পরিবারের মাঝে রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টার বিতরণ এবং ১০টি RO প্লান্ট নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। আশা করি, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এ উপজেলায় খাবার পানির সঙ্কট অনেকটা কমে যাবে।’


আরো সংবাদ



premium cement