০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রাস্তার পাশে মরা রেইনট্রি গাছ : নয়া দিগন্ত -

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বসবাস করছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার মানুষ। সেই সাথে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে তাদের জীবন ও জীবিকা। লবণাক্ততার কারণে কৃষক তার জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন না, হালের পশু ও অন্যান্য গৃহপালিত পশুর খাদ্যের ব্যাপক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে উপকূলের চাষযোগ্য জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত এই অঞ্চলের মানুষকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে স্বাস্থ্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাতক্ষীরার ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬২৬ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে ৮১ শতাংশেরও বেশি জমি অর্থাৎ ১ লাখ ৫৩ হাজার ১১০ হেক্টর জমি লবণাক্ততায় রূপ নিয়েছে। আর পতিত জমি রয়েছে ৪০ হাজার ৯৮১ হেক্টর।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ মৌসুমে এ জেলায় রোপা আমন চাল উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬ টন, ২০-২১ মৌসুমে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১০০ টন, ২১-২২ মৌসুমে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭২৮ টন এবং ২২-২৩ মৌসুমে আমন চাল উৎপাদন হয় ২ লাখ ৪১ হাজার ৮৫৮ টন। সেই হিসাবে ২০১৯-২০ মৌসুমের তুলনায় ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩৩ হাজার ২৩৮ টন উৎপাদন কমেছে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. নাসরিন আক্তার জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে মাটির লবণাক্ততা ও ক্ষার বাড়ায় সড়ক-মহাসড়কে হাজার হাজার রেইনট্রি গাছ মরে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
২০০৯ সালে আইলার পর থেকে গত ১৫ বছরে এক ডজনের বেশি দুর্যোগের কবলে পড়েছে উপকূলের এ জেলা। তবে উপকূলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলায় নদীভাঙনে গত কয়েক বছরে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদরাসাসহ বহু কৃষিজমি নদীতে বিলীন হওয়ায় সহায়-সম্বল হারিয়ে বাসস্থান ছেড়েছেন অনেক মানুষ।
উপকূলের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, উপকূলের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার উন্নয়নে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে এ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৩৩ হাজার ৯৩৭ জন শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত ছিল। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২২ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৬ হাজার ৪৮৭ জন। অর্থাৎ ওই ব্যাচের কমপক্ষে ৭ হাজার ৪৫০জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে।
সুন্দরবন ঘেঁষা শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার বাসিন্দা হুদা মালী বলেন, খরা, ঝড়, বৃষ্টি ও নদীভাঙন আমাদের নিত্যসঙ্গী। আইলার পর লবণাক্ততার কারণে গোটা এলাকা উদ্ভিদশূন্য। সব সময় সুপেয় পানির অভাবে থাকতে হয় বলে দাবি করেন তিনি।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বলছে, প্রতি লিটার পানিতে শূন্য থেকে এক হাজার মিলিগ্রাম লবণ থাকলে সে পানি পানযোগ্য। কিন্তু উপকূলে প্রতি লিটার পানিতে এক হাজার থেকে ১০ হাজার মিলিগ্রাম লবণ রয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সাতক্ষীরার ১৩ শতাংশ মানুষ খাওয়ার পানির সঙ্কটে রয়েছে। আর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স, ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ডসহ জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের তথ্যমতে, জেলার ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮১ জন মানুষের মধ্যে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ সুপেয় পানির সঙ্কটে রয়েছেন।
জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে শীতের সময় অধিক শীত, গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম এবং বর্ষায় অতিবৃষ্টির ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাসে নদীভাঙনে এসব এলাকার বহু মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাতক্ষীরার মানুষ রেকড পরিমাণ তাপমাত্রা অনুভব করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement