২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সারা বছর ময়লা পানিতে ডুবে থাকে সৈয়দপুরের রাস্তাঘাট

ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল
সৈয়দপুর পৌর শহরের হাতিখানা রাজ্জাকিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তাটি সারা বছরই জলাবদ্ধ থাকে : নয়া দিগন্ত -


বৃষ্টি নেই, বন্যা নেই তবুও রাস্তায় হাঁটু পানি। বাসাবাড়ির ব্যবহৃত পানিতেই দিনের পর দিন তলিয়ে থাকছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়কগুলো। কোথাও কোথাও রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির আঙ্গিনাসহ ঘরেও প্রবেশ করেছে ড্রেনের ময়লা পানি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করায় স্থায়ী রূপ নিয়েছে এই জলাবদ্ধতা। হেঁটে চলাচল তো দূরের কথা, যানবাহনেও যাতায়াত দুরূহ হয়ে পড়েছে। শিশুরা স্কুলে আর মুসল্লিরা মসজিদে যেতে পারছেন না। তার ওপর দীর্ঘ দিন থেকে জমে থাকা নোংরা ময়লাযুক্ত পানিতে গ্রীষ্মের তীব্র রোদ পড়ে পচে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চার দিকে। বিষাক্ত হয়ে উঠেছে পরিবেশে। ফলে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছে পৌরবাসী।
এমন বেহাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভায়। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার নাগরিকরা আজ তৃতীয় শ্রেণীর সেবা থেকেও বঞ্চিত। বছরের পর বছর ধরে এই অবস্থা চললেও পৌর পরিষদ জনদুর্ভোগ লাঘবে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় ক্রমেই তা বেড়ে চলেছে। এলাকাবাসী বারবার দাবি ও ক্ষোভ জানালেও কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। গত তিন বছরে এই সমস্যা প্রকট হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিখানা এলাকার ক্যাম্পের সামনের রাস্তার পুরোটাজুড়ে পানি। কোনো কোনো বাড়ির আঙ্গিনাও জলমগ্ন। লোকজন এর মধ্যেই যাতায়াত করছে বাধ্য হয়ে। শিশু ও বৃদ্ধরা চলাচল করতে পারছেন না। অসুস্থদের হাসপাতালে নিতে খুবই অসুবিধা হয়।
একই অবস্থা ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশবাড়ী শহীদ নুর মুহাম্মদ সড়ক, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাবুপাড়ায় খ্রিষ্টানপাড়ার ভেতর দিয়ে মণ্ডল ভবন হয়ে ইত্তেহাদুল মুসলেমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী সড়ক, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিস্ত্রিপাড়া মোড় থেকে বসুননিয়াপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়া এলাকার রেলওয়ে কলোনি ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের রেলওয়ে কলোনির সড়কগুলোসহ পুরো পৌর এলাকার অনেক রাস্তায়।
এলাকাবাসী জানান, এ সড়কগুলোর সাথে ড্রেন থাকলেও তা পানি নিঃসরণের অনুপযোগী। ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হলেও দীর্ঘ দিনে পরিষ্কার না করায় পানি নির্গমনের ডোবা বা ভাগারগুলোতো যেতে পারছে না। কোথাও আবার ড্রেনের শেষপ্রান্তে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে স্থাপনা গড়ে ওঠায় পানি অপসারণ হচ্ছে না। তা ছাড়া ডোবা ও ভাগারগুলোও ভরাট হয়েছে। সেগুলোও খনন না করায় পানি ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে উল্টো ডোবার পানিই ড্রেন দিয়ে নিচু এলাকায় গড়িয়ে এসে রাস্তায় পড়ছে। এতে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় পড়েছে এলাকাগুলো।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, এলাকার কাউন্সিলর ও মেয়রসহ সব জনপ্রতিনিধিই এ ব্যাপারে অবগত। কিন্তু তার পরও কেউ-ই ভোগান্তি দূর করতে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছেন না। জনগণের প্রতি যেন তাদের কোনো দায়িত্বই নেই। আগে নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করায় দুর্ভোগ কম ছিল। ন্যূনতম হলেও শুকনো মৌসুমে সমস্যা থাকত না। বর্ষায় চরম অবস্থা হতো। আর এখন গ্রীষ্মকালেও পানিতে তলিয়ে থাকছে রাস্তা, বাড়ির আঙ্গিনা। বর্তমান পরিষদ কোনো কাজই করেনি। তাই এমন দুঃসহ অবস্থায় পড়েছে সৈয়দপুরবাসী।
হাতিখানা রাজ্জাকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কের বাসিন্দা ওয়াসিম আকরাম বলেন, এলাকায় রেলওয়ের জায়গা লিজ নিয়ে গড়া ইকু হেরিটেজ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের পানি এই ড্রেনে এসে ছড়িয়ে পরায় সারা বছর রাস্তায় পানি জমে থাকছে। ড্রেনটি ক্যাম্পের ভেতর দিয়ে যে জমিতে গিয়ে পড়েছে, তাতে এখন বাড়ি করায় মালিক ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত ওই নোংরা পানি মাড়িয়ে অনেক কষ্টে চলাচল ও বসবাস করছে। কাউন্সিলর ও মেয়রকে জানালেও তারা গায়ে লাগায়নি।
৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেলাল আহমেদ বলেন, খুবই দুঃখজনক বিষয়। ইকু হেরিটেজের মালিককে বলেছি তারা যেন এই ছোট ড্রেনে পানি না ফেলে। কিন্তু তারা কর্ণপাত না করায় পানির পরিমাণ বাড়ছে। এ নিয়ে মেয়রের সাথে কথা হয়েছে। সহসাই করোনার ফান্ড দিয়ে রাস্তা ও ড্রেনের কাজ করা হবে। তাহলে সমস্যার সমাধান হবে। এর আগে আর কিছুই করার নাই।
ইকু হেরিটেজ হোটেল ও রিসোর্টের মালিক ইকু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সিদ্দিকুল আলম বলেন, এ ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি। এখন যেহেতু জানলাম। নিজ উদ্যোগেই ড্রেন পরিষ্কারসহ পানি নিষ্কাশন স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এ দিকে ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন বলেন, মাসিক মিটিংয়ে রাস্তায় জলবদ্ধতার বিষয়টি তুলে ধরেছি মেয়র রাফিকা আক্তার জাহান বেবির কাছে। তিনি কথা দিয়েছেন শিগগিরই ড্রেন নির্মাণের ব্যবস্থা নেবেন।
পৌরমেয়র রাফিকা আকতার জাহানকে মোবাইল ফোনে জনভোগান্তির বিষয়টি জানালে তিনি চিরাচরিত আচরণে ‘বাইরে আছেন’ বলে এড়িয়ে যান এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement