১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

সুন্দরবনে থামছে না বিষ দিয়ে মাছ শিকার

সুন্দরবনের জলাশয়ে বিষ দিয়ে মাছ শিকাররত জেলে নৌকা : নয়া দিগন্ত -


বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের নদী ও খালে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার চলছেই। এতে বনের মৎস্য সম্পদ ও জলজসহ বিভিন্ন প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এক শ্রেণীর অসাধু বনরক্ষীদেরকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে জেলেরা বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করছেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের জলভাগের পরিমাণ এক হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটারের বেশি, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ। এ জলভাগে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে ১৩টি বড় নদনদীসহ ৪৫০টির মতো খাল। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া এ বনের নদনদী ও খালে ভেটকি, রুপচাঁদা, দাঁতিনা, চিত্রা, পাঙাশ, লইট্যা, ছুরি, মেদ, পাইস্যা, তপসে, লাক্ষা, ইলিশসহ ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ হয়ে থাকে। এ ছাড়া রয়েছে গলদা, বাগদা, চালী, চামীসহ ২৪ প্রজাতির চিংড়ি।
উপকূলীয় এলাকা ও বন বিভাগের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাস পারমিট নেয়া দুর্বৃত্তরা ছাড়াও কোনো কোনো জেলে আবার পাস ছাড়াই বনে প্রবেশ করে জোয়ারের আগে চিঁড়া, ভাত বা অন্য কিছুর সাথে কীটনাশক মিশিয়ে নদী ও খালের পানিতে ছিটিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। জেলেরা তারা ওই মাছ ধরে স্থানীয় আড়তসহ বিভিন্ন হাটবাজারে সরবরাহ করেন।


স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলে নামধারী মৎস্য দুর্বৃত্তরা কিছু মৎস্য আড়তদার, দাদনদাতা, কীটনাশক বিক্রেতা ও স্থানীয় কিছু নেতা জেলেদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এ কাজে সহায়তা করেন। আবার বনবিভাগের কিছু অসাধু বনরক্ষী ও কর্মকর্তা উৎকোচের বিনিময়ে এসব জেলেকে মাছ ধরার অনুমতি দেন।
মংলা বাজার মৎস্য সমিতির সভাপতি আফজাল ফরাজি বলেন, স্থানীয় কিছু আড়তদার এ চক্রকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের টাকা দাদন দিয়ে সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরতে পাঠান।
মংলা শহরের লেবার জেটি এলাকার তাহের এন্টারপ্রাইজের (সার ও কীটনাশক) মালিক আবু তাহের জানান, এসব কীটনাশক কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য চাষিরা কেনেন। এগুলো দিয়ে সুন্দরবনের খালে মাছ মারা হয় কিনা তা তার জানা নেই। কৃষি বিভাগ অনুমোদন দেয়ার পরই কীটনাশক বিক্রি করেন তারা।
মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনের ভেতরে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি এর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মাছ ধরতে যেসব বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে তা ধানসহ বিভিন্ন শাকসবজির খেতের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ মারার কাজে ব্যবহার করা হয়। কীটনাশক বিক্রেতা ও ডিলারদের তালিকাভুক্ত চাষি ছাড়া অন্য কারও কাছে এসব বিক্রি না করার নির্দেশনা দেয়া আছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, কীটনাশক প্রয়োগকৃত এলাকার ছোট-বড় সব প্রজাতির মাছ মারা যায়। ফলে ওই এলাকার খাদ্যচক্রে প্রভাব পড়ে। আবার এ কীটনাশকমিশ্রিত পানি যখন ভাটার টানে গভীর সমুদ্রে যায়, তখন সেই এলাকার মাছও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কীটনাশক প্রয়োগ সংশ্লিষ্ট এলাকার বিষক্রিয়া চার মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত থাকে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, অসাধু অনেক মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেকে একাধিকবার গ্রেফতার করা হলেও দ্রুত জামিনে বেরিয়ে এসে আবার একই কাজে জড়িয়ে পড়েন তারা।

 


আরো সংবাদ



premium cement