০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


১৯ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি

-

জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ে, কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ে না। সারা দিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সেকশনে সাপ, বিছা, পোকামাকড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করি। সপ্তাহে যে তলব (সপ্তাহের মজুরি) পাই তা দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন।’ কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর চা বাগানের নারী-শ্রমিক লক্ষ্মী রবিদাস ও লক্ষ্মীমনি সিং। শমশেরনগরের কানিহাটি চা বাগানের নারী-শ্রমিক আলোমনি মৃধা ও মিনা রায় বলেন, ‘হামরা ১২০ টাকা মজুরি পাইয়া বাচ্চা-কাচ্ছা লইয়া পাঁচ-সাতজনের খরচ কেমনে চালাবো?’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চা শিল্পের মূল কারিগর চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি হওয়ার কথা প্রতি দুই বছর অন্তর। বর্তমানে মজুরি চুক্তির মেয়াদ ১৯ মাস উত্তীর্ণ হওয়ার পথে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আগের চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর শ্রীমঙ্গলে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে চা শ্রমিকদের মজুরি ১০২ টাকা থেকে ১২০ টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে আর চুক্তি হয়নি। চা সংসদ ও শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি এ-ক্লাস বাগানে ১২০ টাকা, বি-ক্লাস ১১৮ ও সি-ক্লাস বাগানে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
শ্রমিক নেতা সিতারাম বীন জানান, করোনাকালে ঝুঁকি নিয়ে আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই দলবদ্ধভাবে কাজ করেছি। আমাদের মজুরি পাওয়ার পর সপ্তাহে কারেন্ট বিল, অনুষ্ঠান চাঁদা, ইউনিয়ন চাঁদা এসব কর্তনের পর চার থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা থাকে। এই টাকায় এক বেলাই খাবার চালানো দায়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দেশের ১৬৬ চা বাগানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। ৩০০ টাকা মজুরি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এ বিষয়ে চা সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, মালিকপক্ষের সাথে শ্রমিকদের আলোচনা চলাকালে এভাবে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করা বেআইনি। মালিকপক্ষের সাথে চা শ্রমিকদের আলোচনা ১৯ মাস ধরে চলছে।
এ বিষয়ে শ্রম অধিদফতর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক নাহিদুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা আন্দোলন করতে পারেন, আমাদের জানাতে পারেন কিন্তু চা শ্রমিক নেতারা সেটা করেননি। চা শ্রমিক ইউনিয়ন দাবিনামা উত্থাপন করেছে। তিনি আরো জানান, গতকাল মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে এসে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী চা শ্রমিক নেতাদের সাথে বসবেন। পরে বাগান মালিকদের সাথে কথা বলবেন। ধর্মঘটের কারণে দু’পক্ষের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাই দু’পক্ষকে নিয়ে একসাথে বসে সমস্যার সমাধান কঠিন হবে।


আরো সংবাদ



premium cement