২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ সার

বর্ষাকালে নগরবাড়ী বন্দরে খোলা আকাশের নিচে স্তূপ করে রাখা সার : নয়া দিগন্ত -

বর্ষা মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ী নৌবন্দর এলাকায় আমদানি করা প্রচুর পরিমাণ সার খোলা জায়গায় স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়েছে। মাসের পর মাস বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে শুকিয়ে জমাট বেঁধে যাওয়ায় এই সারের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ওজনেও প্রতি বস্তায় দুই-তিন কেজি ঘাটতি হচ্ছে। এ ছাড়া সারের ঝাঁঝাঁলো গন্ধে বায়ু দূষণ হচ্ছে বলেও অভিয়োগ করছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, আমদানিকারকদের মাধ্যমে চীন, মিসর, সৌদি আরব, তিউনিশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিসিআইসি ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি ও টিএসপি সার আমদানি করে থাকে। পরে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মাধ্যমে এই সার উত্তরাঞ্চলের বাফার গুদামগুলোতে পৌঁছে দেয়া হয়। প্রথমে সমুদ্র পথে বড় জাহাজে সার আমদানি করা হয়। পরে এই সার লাইটারেজ জাহাজে আনলোড করে বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ী বন্দরে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের ১৪টি বাফার গুদামে পাঠানো হয়।
বন্দরের ট্রান্সপোর্ট এজেন্ট ও বিসিআইসির বাঘাবাড়ি বাফার গুদাম সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের পাবনা-সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী, বগুড়া, শান্তাহার, জয়পুরহাট, রাজশাহী, নাটোর, রংপুর, লালমনিহাটের মহেন্দ্রনগর, দিনাজপুর, পার্বতীপুর চরকাট, ঠাকুরগাঁও, বিরামপুর ও গাইবান্ধায় বাফার গুদাম রয়েছে। গত বছর আমদানি করা সার দিয়েই বাফার গুদামগুলো ভরা। ফলে বন্দরে এখন যে পরিমাণ সার আসছে, তা বন্দর এলাকাতেই খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হচ্ছে।
এ দিকে চট্টগ্রাম নৌবন্দর থেকে ছেড়ে আসা সারভর্তি জাহাজ প্রতিদিনই বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ী নৌবন্দরে এসে নোঙর করেছে। অনেক জাহাজ আনলোডের অপেক্ষায় রয়েছে। নিয়মানুযায়ী জাহাজ বন্দরে পৌঁছার পর সার আনলোড করে ট্রাকযোগে বাফার গুদামগুলোতে পৌঁছে দেয়া হয়। কিন্তু গুদামগুলোতে জায়গা না থাকায় এই সার মাসের পর মাস বন্দরেই পড়ে থাকছে।

বাঘাবাড়ী বন্দরে নোঙর করা এমভি জব্বার কার্গো জাহাজের চালক আলী নূর বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আট হাজার বস্তা সার নিয়ে এসে দু’দিন ধরে বাঘাবাড়ী বন্দরে বসে আছি। আনলোড করা হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সার ডিলার জানান, অনেক দিন ধরে খোলা জায়গায় পড়ে থাকা ওজনে কম জমাটবাঁধা সার কৃষকরা নিতে চায় না। দেশী সারের প্রতিই বেশি আগ্রহ তাদের।
নগরবাড়ী বন্দরের লোড-আনলোড লেবার সরদার জানান, নগরবাড়ীতে বাফারগুদাম নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। এ কারণে জাহাজ থেকে সার আনলোড করে খোলা জায়গায় রাখা হয়েছে।
জননী ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার দুলাল দাস বলেন, নগরবাড়ী সরকারি গেজেটভুক্ত নৌবন্দর হলেও এখানে সরকারের নিজস্ব কোনো বাফারগুদাম নেই। তবে বর্তমানে বাফারগুদাম নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাফারগুদাম নির্মাণকাজ শেষ হলে হয়তো এভাবে আর খোলা জায়গায় সার ফেলে রাখা হবে না।
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত কবীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে রেখে দেয়া সারের কার্যক্ষমতা কিছুটা হলেও হ্রাস পায়। তবে সংশিষ্ট একটি সূত্র জানায়, চীন থেকে আমদানিকৃত সারের গুণগতমান এমনিতেই কিছু কম। এই সার সরবরাহের ক্ষেত্রে এক শ্রেণীর আমদানিকারক, বাফার গুদাম ইনচার্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠছে।
বাঘাবাড়ী বাফার গুদাম ইনচার্জ জানান, ময়েশ্চারের কারণে ইউরিয়া সার জমাট বাঁধে। কিন্তু এর গুণগত মানের তেমন হেরফের হয় না। তবে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখার কারণে বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে শুকিয়ে বস্তার ওজন কিছুটা কমে যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement