২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রাথমিক শিক্ষাবঞ্চিত নতুন ঘুরঘুরিয়ার শিশুরা

বালিয়াকান্দির নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষাবঞ্চিত শিশুরা : নয়া দিগন্ত -

প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব বেশি হওয়ায় শিশুরা স্কুলে যেতে চায়না বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। ফলে এসব শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকরা।
গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামে দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। পরিবারগুলোতে ৫-১০ বছর বয়সী শতাধিক শিশু রয়েছে। এলাকাটির পশ্চিমে তিন কিলোমিটার দূরে বন্যতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পূর্ব দিকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে ধর্মতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। এ ছাড়া প্রায় তিন কিলোমিটার দূূরে বকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে সাধুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামে ‘নতুন ঘুরঘুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। পরে বিদ্যালয়টি সরকারি না হওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১৩ সালে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হওয়ার সময় এলাকার কিছু তরুণ সরকারিকরণের আশায় আগের নামে বিদ্যালয়টি চালু করে। কিন্তু তৃতীয় ধাপেও বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ না হওয়ায় পুনরায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়টি। বর্তমানে সেখানে জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘর থাকলেও কোনো শ্রেণী কার্যক্রম চলে না। প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় নিরক্ষরতার হার ও শিশু শ্রম, বাড়ছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
বন্যতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবর আলী বলেন, আমার বিদ্যালয় থেকে নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামটির দূরত্ব দুই কিলোমিটারের বেশি। গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় অভিভাকরা খুবই সমস্যা রয়েছেন। ওই গ্রামের শিশুদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুবই প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।
ধর্মতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রূপচাঁদ বলেন, আমার বিদ্যালয় থেকে নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামটি দুই কিলোমিটার দূরে। গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করা খুবই কষ্টকর। ওই গ্রামের শিশুদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুবই প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।
বালিয়াকান্দি সদর ক্লাষ্টারের দায়িত্ব থাকা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার চঞ্চল শেখ বলেন, নতুনঘুরঘুরিয়া গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদ্যালয়টি সম্প্রতি পরিদর্শন করেছি। এলাকাবাসীর সাথেও কথা বলেছি। অনেক মায়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয় দূরে বিধায় তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠান না বলে জানিয়েছেন। এলাকাটিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুব প্রয়োজন।
জঙ্গল ইউনিয়ন পনিষদের চেয়ারম্যান কল্লোল কুমার বসু বলেন, নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামটিতে অনেক পরিবারের বসবাস হলেও কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। দুই-তিন কিলোমিটার দূরে প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামটিতে সরকারিভাবে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল হক বলেন, যেসব গ্রামে কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সে রকম এলাকায় এক হাজার নতুন বিদ্যালয় স্থাপনে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এলাকাটি সরেজমিন পরিদর্শন করে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিবুল হাসান বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে যদি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা পাওয়া যায় তা হলে সরকারিভাবে বিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ১০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে সুপারিশ করা হবে।
উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে যদি বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই শিক্ষা কমিটিতে রেজুলেশনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ পাঠানো হবে।
রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসনে ইয়াসমিন করিমী বলেন, স্কুল দূরে হওয়ায় শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত আছে এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। সরেজমিন পরিদর্শন করে যদি এমন হয় তাহলে সরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement