ভিক্ষুক থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রতিবন্ধী তোফাজ্জল
- ফজলুল হক রোমাননেত্রকোনা
- ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:১১
প্রতিবন্ধী তোফাজ্জল হোসেন (৩৩) এক সময় দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পাঁচ কন্যাসন্তানের পরিবার নিয়ে কোনো মতে দিন যাপন করতেন। কিন্তু হঠাৎই এক সময় আত্মবিশ্বাসী হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নামার সিদ্ধান্ত নেন। সেই থেকে তার নতুন পথচলা শুরু। প্রতিবন্ধী তোফাজ্জল ভিক্ষা ছেড়ে এখন স্বাবলম্বী।
সদর উপজেলার মৈশাখালী গ্রামের মৃত সমর আলীর ছেলে তোফাজ্জল। তার বয়স যখন সাত কি আট তখন তিনি টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। কিন্তু দরিদ্র বাবার পক্ষে উন্নত চিকিৎসার অভাবে হাত-পা শুকিয়ে বাঁকা হয়ে কোমড় থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত অবশ হয়ে যায়। শুরু হয় কষ্টের জীবন ও পরনির্ভরশীলতা। বাবার মৃত্যুর পর পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে তিনি হাতে তুলে নেন ভিক্ষার থালা। টানা ১৬-১৭ বছর দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাবৃত্তি করে স্ত্রী ও পাঁচ কন্যাসন্তান নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করতে থাকেন।
তোফাজ্জল ভিক্ষা করাকালীন পুলিশের টি আই ওয়ান জহিরের কাছে স্বাভাবিক নিয়মেই হাত পাতেন। কিন্তু না ওই পুলিশ তাকে সবার মতো ভিক্ষা দেননি। মানবিক ওই পুলিশ কর্মকর্তার পরামর্শ ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন ভিক্ষুক তোফাজ্জল হোসেন। জীবনযুদ্ধে পরাজিত প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক তোফাজ্জল নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয়ায় তার জীবনই পাল্টে যায়। তার স্বপ্ন ছিল অতি সামান্যই। তিন চাকার ভ্যানগাড়ির ব্যবস্থা হওয়ায় দেরি না করে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ধার করা সামান্য পুঁজি নিয়ে ওয়াশিং পাউডার, শেম্পু, বিভিন্ন ধরনের সাবান, বাল্বসহ আরো নানান আইটেমের পণ্য বিক্রিতে নেমে পড়েন। অসহায় অবস্থায় রাস্তায় নেমে ছিলেন ভিক্ষার থালা নিয়ে। কিন্তু এবার নামেন ভাগ্য বদলাতে আত্মবিশ্বাসী দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে। তিনি এখন ক্ষুদে ব্যবসায়ী। শহর ও শহরতলিতে ফেরি করে বেড়ান। এতে আয়-রোজগার তার মন্দ নয়। গড়ে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করে থাকেন। এতে ৫০০-৭০০ টাকার মতো লাভ হয়ে থাকে।
কথা হলে তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ভিক্ষা করতে খুবই খারাপ লাগত। অপারগ হয়েই দ্বারে দ্বারে গিয়ে হাত পাততে হতো। সর্বদা নিজেকে ছোট মনে হওয়ায় দিলে শান্তি ছিল না। কিন্তু এখন পুঁজি খাটিয়ে পরিশ্রমের মাধ্যমে যে আয়-রোজগার হচ্ছে তাতেই আমি তৃপ্ত ও খুশি। তবে সুদমুক্ত ঋণের কোনো সহযোগিতা পেলে আরো বড় পরিসরে ব্যবসা করা সম্ভব হতো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা