পাবনায় হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান
ঈশ^রদী ইপিজেডে ২০ হাজারের অধিক কর্মসংস্থান অর্জিত হচ্ছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা- শফিউল আযম বেড়া (পাবনা)
- ২৩ অক্টোবর ২০২১, ০১:৫৪
পাবনায় নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক কর্মসংস্থান। রূপপুর গ্রিন সিটিতে ২০তলা ১৩টি ও ১৬ তলা আটটি দৃষ্টিনন্দন ভবন সবার দৃষ্টি কাড়ছে। এ ভবনে পারমাণবিক প্রকল্পের রাশিয়ান পাঁচ-ছয় হাজার স্টাফ থাকেন। গ্রিন সিটিতে ইতোমধ্যে নামীদামি বিভিন্ন ব্র্যান্ড শাখা খুলেতে শুরু করেছে।
এক হাজার ৬২ একর জমির ওপর নির্মিতব্য দেশের প্রথম এ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর দুই ইউনিট থেকে ২০২৪ সাল নাগাদ জাতীয় গ্রিডে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত পারমাণবিক সংস্থা রোসাটোম প্রকল্পটিতে কারিগরি ও নির্মাণ সহায়তা দিচ্ছে।
প্রকল্পের নিরাপত্তাব্যবস্থা অধিকতর জোরদার করতে আধুনিক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম কনটেইনমেন্ট বিল্ডিংয়ের পর ০.৫ মিটার পুরুত্বের আরো একটি কনটেইনমেন্ট বিল্ডিং যুক্ত করা হয়েছে, যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিমান দুর্ঘটনা থেকে প্ল্যান্টকে সুরক্ষিত রাখবে। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ছাড়াও এ প্ল্যান্টের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যাতে আট মাত্রার ভূমিকম্পেও প্রকল্পটি নিরাপদ থাকবে। এ ছাড়া ৫.৭ টন পর্যন্ত ওজনের বিমানের আঘাতে ও এটি অক্ষত থাকবে। সর্বশেষ প্রজন্মের অত্যাধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্বলিত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে রিঅ্যাক্টর বিল্ডিং থেকে ৮০০ মিটারের বাইরেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যাবে।
কয়েক হাজার রাশিয়ান কর্মকর্তা ও স্ট্যাফকে কেন্দ্র করে ঈশ^রদীতে বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বেসরকারি উদ্যোক্তরা পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের প্রক্রিয়া চালমান। তবে পারমাণবিক প্রকল্পের এ মহাকর্মযজ্ঞে ঈশ^রদী বিমানবন্দর চালুর তাগিদ অনুভব করছে সংশ্লিষ্টরা। ঈশ^রদী বিমানবন্দরটি চালু করা গেলে বিদেশী কর্মকর্তাদের যাতায়াত সহজ হলে প্রকল্পের কাজ আরো বেগবান হবে।
ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে পাবনাবাসীর দীর্ঘকালের দাবি পূরণ হয়েছে। এ জন্য ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। ট্রেন চালুর ফলে এখন জেলাবাসী প্রতিদিন সকালে রাজশাহী গিয়ে তাদের ব্যবসাসহ নানা কর্মকাণ্ড শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে পারছেন।
ঈশ^রদীতে ৩০৯ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ইপিজেডের কার্যক্রম চলছে পুরো দমে। ২০০৫ সালে এ ইপিজেড নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এখন এ ইপিজেডে অস্ট্রেলিয়া, চীন, হংকং, তুর্কিস্থান, ভারতের বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এখানে তামার তার, এ্যাংলো, ফ্লাট টিউব, সোয়েটার, পলিথিন দ্রব্যগার্মেন্ট, মোজা, ব্যাটারি, বিদ্যুৎ, তুলা, ফ্যাব্রিক্স তৈরি হচ্ছে। ঈশ^রদী ইপিজেডে ২০-২২ হাজার লোকের কর্মসংস্থানসহ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।
পাবনায় রয়েছে পাবনা মেডিক্যাল কলেজ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা এ্যাডওয়ার্ড কলেজের মতো বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সুজানগরে প্রায় ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে গাজনারবিল বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ণ হয়েছে। গাজনার বিল প্রকল্পে তালিমনগরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লি. প্রায় ২২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ডুয়েল পদ্ধতির পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করেছে।
বহুমুখী এই প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত কৃষিজ পণ্য ও মাছ উৎপাদন হবে। এতে প্রকল্প এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ প্রকল্পটিতে এক ফসলি জমি দুই ফসলি এবং দুই ফসলি জমি তিন ফসলিতে রূপান্তরিত হবে। ফসলের উৎপাদন ১৩৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০০ শতাংশে উন্নীত হবে। এতে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত কৃষিজ পণ্য উৎপাদন হবে। গাজনার বিল, বিল গ্যারগা, গাঙভাঙ্গার বিল ও মোস্তার বিলের অভয়াশ্রম থেকে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার দেশীয় উৎপাদন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন।
প্রায় ৫১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে বেড়ার নগরবাড়ীতে আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ হয়েছে। এ বন্দর দিয়ে বছরে ৩০ লাখ টন পণ্য নিরাপদে ওঠানামা করতে পারবে। যমুনা সেতুর বিকল্প হিসেবে এ বন্দরের ব্যবহার বাড়বে ও সেতুর ওপর চাপ কমবে। বিআইডব্লিউটিএ একটি সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সার, সিমেন্ট, বালু, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য পাবনার বেড়া উপজেলায় অবস্থিত নগরবাড়ী নৌবন্দরে আসে। সেখান থেকে সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলা পরিবহন করা হয়। বেড়া উপজেলার নাটিয়াবাড়ি মৌজায় ১২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের মেরিন অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এখানে ১০টি বহুতল ভবন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য ডেক ক্যাডেট, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের ব্যবস্থা থাকবে। চার বছর মেয়াদি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ২০০ ক্যাডেট পড়াশুনার সুযোগ পেলেও প্রথম অবস্থায় এই অ্যাকাডেমিতে ৫০ জন নটিক্যাল ও ৫০ জন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পাবে। বর্তমানে ছাত্র ভর্তিও প্রক্রিয়া চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়াও বেড়ায় ৫৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
এ দিকে ১৯ বছর পর সরকার কাজিরহাট থেকে আরিচা ফেরি সার্ভিস চালু করে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। দীর্ঘকাল পর ফেরি নার্ভিস চালুর কারণে পাবনাসহ আশপাশের জেলার পণ্যবাহী মালামাল কম সময়ে ও অল্প ব্যয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৌঁছানো সহজ হচ্ছে। কাজিরহাটে দীর্ঘকাল পর ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় জেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চার করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
জেলায় ছোট-বড় ৪০০ ঝুটকেন্দ্রিক হোসিয়ারি শিল্প গড়ে উঠেছে। এ শিল্পে এক লাখ শ্রমিক নিয়োজিত। হোসিয়ারি শিল্পের মূল কাঁচামাল গার্মেন্টস ঝুট ভারতে রফতানি হওয়ায় সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। এ শিল্পের উৎপাদিত বেশির ভাগ গেঞ্জি ভারতে রফতানি করা হয়। এরপর মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবেও রফতানি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ঝুট রফতানি বন্ধের দাবি তুলেছেন। তারা সহজ শর্তে ঋণেরও দাবি করেছেন।
তাঁত শিল্পে পাবনা জেলা সমৃদ্ধশালী। এখানকার শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা বিদেশে রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে পাবনার তাঁত শিল্পকে আরো উজ্জীবিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁত শিল্প উজ্জীবিত হলে বহু কর্মসংস্থান যেমন হবে তেমনি আরো বেশি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা বিদেশে রফতানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বেড়ার নতুনভারেঙ্গায় সাফুল্লা মৌজায় যমুনার তীরে সরকার ৭০০ একর জমিতে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। জেলাবাসীর এখন চাওয়া পাবনাকে যুক্ত করে আরিচা-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় যমুনা-পদ্মা বহুমুখী সেতু বাস্তবায়ন। বেড়ার কাজীরহাট, আরিচা ও দৌলতদিয়া সংযোগকারী ওয়াই টাইপ সেতু নির্মাণে পাবনাবাসীর প্রাণের এ দাবি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা করছেন। পাবনাবাসীর এ দাবি পূরণ হলে রাজধানীর সাথে যাতায়াতে ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। পাবনায় নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। উত্তরবঙ্গের সাথে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা