২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুনামগঞ্জের হাওরে ধান কাটা শুরু

হাওরে মনের আনন্দে ধান কাটছেন কৃষকরা : নয়া দিগন্ত -

করোনাভাইরাস আতঙ্ক নিয়েই সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই-শাল্লা ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে রভীপা হাইব্রিড বিআর-২৮ ধান কাটা শুরু হয়েছে। বুকভরা আশা নিয়ে সোনালি ধান ঘরে তুলতে ধান কাটছেন কৃষকেরা। বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ জুড়ে পাকা-অধাপাকা ধানের ম ম গন্ধে ভরে গেছে জেলার সব ক’টি হাওর। তবে গরম হাওয়ায় আংশিক ধানে চিটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার কিছু শ্রমিকরা এসেছেন কৃষকদের বাড়িতে। তবে লকডাউনে তুলনামূলকভাবে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে কিছুটা উদ্বিগ্ন রয়েছেন কৃষকরা।
জানা যায়, চলতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় ১১টি উপজেলার ছোট বড় ১৫৪টি হাওরে দুই লাখ ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর বোরো জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে চার হাজার হেক্টর বেশি। গত বছরের চেয়ে চলতি বোরো মৌসুমে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড চাষ করা হয়েছে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা চালে নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন। টাকার অঙ্কে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলার ১১ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে এখন চলছে আংশিক বোরো ফসল কাটা। বছরে একটি মাত্র বোরো ফসলকে ঘিরেই হাওরাঞ্চলের মানুষের যত স্বপ্ন। বহু প্রতীক্ষা ও ত্যাগের পর কৃষকদের বছরজুড়ে থাকা অভাব অনটন আর জমাট বাঁধা দুঃখকষ্ট পেরিয়ে এবার কিছুটা হলেও সোনাঝরা হাঁসি ফুটেছে তাদের মুখে। বহু প্রত্যাশিত সোনালি ধান ঘরে তুলতে করোনা আতঙ্কের মধ্যে কৃষকরা ব্যস্ত ধান কাটতে মাঠে। আর কৃষাণীরা মাড়াইকল দিয়ে ধান শুকানোর জন্য খলা প্রস্তুতের কাজ করছেন। অবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে।
হাজারো স্বপ্নে বিভোর কৃষকরা এখন রাত যাপন করছেন ধান কাটার অধীর আগ্রহে। কিন্তু এত স্বপ্নের মধ্যেও তাদের মনে আতঙ্কের কমতি নেই। রোদ উঠলেই আনন্দের ঝলকে ভরে উঠে কৃষান-কৃষাণীর মন। আর মেঘলা আকাশ বা বৃষ্টি হলেই তাদের চেহারাটা হয় ফ্যাকাসে। মেঘলা আকাশ আর আকাশ ফাটার শব্দে তাদের শুরু হয় ছটফটানি ও দৌড়ঝাঁপ। পাহাড়ি ঢল তাদের মনে ভাবনা জাগায় বারবার। চৈত্রের প্রচণ্ড অভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চরম দুর্দিন কাটিয়েছেন কৃষকরা। এখন মনের গভীর থেকে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন ফসল কাটার ক’টা দিনের জন্য। এখন হাওর জুড়ে যে দিকে চোখ যায় শুধুই ধান আর ধান।
সুনামগঞ্জের হাওরের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ১০-১৫ বছর আগে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার জন্য আসত বিশাল শ্রমিক বাহিনী। তারা কৃষকের বাড়িতে এক মাস থেকে ধান কেটে মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। যাওয়ার সময় তাদেরকে গরু-খাসি ও নতুন পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উপহার দেয়া হতো। এখন আর আগের মতো শ্রমিক না আসায় ধান কাটার জন্য শ্রমিক সঙ্কটে পড়তে হয়। পাকনা হাওরের কৃষক রফিক মিয়া বলেন, এবার বহু কষ্টে দেনা করে ফসল করছি। আল্লার রহমতে ভালো ফলন হইছে। বিআর-২৮ ধান কাটা শুরু করছি। কৃষক কয়েছ মিয়া বলেন, সারা বছর কষ্ট করে দেনা করে ফসল ফলাইছি। ফলনও ভালো হইছে কবে আগুল্লিয়ায় চিটাতে ক্ষতি হইছে। কয়েক দিনের মধ্যেই আমার ধান কাটা শুরু হইব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, হাওরের ধান কাটতে শ্রমিক ও কৃষককে প্রতিদিনই উৎসাহিত করা হচ্ছে। ধান কাটতে মাইকিং করা হচ্ছে। ত্রাণের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে ধান কাটার শ্রমিকদের।


আরো সংবাদ



premium cement