২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রযুক্তির যুগেও ঘানি ভাঙা তেলের কদর

-

বাজারের নামীদামি ব্রান্ডের তেলে আস্থা নেই মানুষের। তাই বিশুদ্ধ সরিষার তেলের চাহিদা সর্বত্র। কিন্তু চাহিদা থাকলেও পরিকল্পিত উদ্যোগ, সময়োপযোগী বিপণন পদ্ধতি চালুর অভাবে বিলুপ্তির পথে ঘানিশিল্প। বর্তমান বিশ্বে জীবন চলার পথে প্রযুক্তির জয় জয় কার। কিন্তু প্রযুক্তি যেমন সুবিধা দেয় তেমন অসুবিধাও আছে। তবে হাজারো প্রযুক্তির ভীরেও প্রাকৃতিক জিনিসে মানুষের আকর্ষণ আগের মতোই আছে।
কালের বিবর্তনে মেশিন চালিত কম খরচে তেল উৎপাদন হওয়ায় সয়াবিন, পামওয়েল, কলের সরিষা তেল ব্যবহারে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সয়াবিন ও পামওয়েল আমদানি এবং দেশে সরিষার আবাদ কমে যাওয়ায় ঘানিশিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ঘানি মালিকরা। এ ছাড়া সরিষার তেলের দাম বেশি হওয়ায় ঘানি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সবই আজ বিলুপ্তির পথে। কিন্তু ঘানি ভাঙা তেলের বিশুদ্ধতা অন্য সব তেলের থেকে বেশি। যা সুস্থ জীবনের জন্য সহায়ক। তাই অনেক টাকাওয়ালা মানুষ আজ একটু সুস্থ থাকার জন্য অনেক বেশি টাকা খরচ করে হলেও বিশুদ্ধ তেল চায়। কিন্তু পায় খুব কমই।
তেল ভাঙানোর সাথে জড়িত ব্যক্তিকে কুলা বলা হয়। সরিষা বা তেলবীজ পেষার জন্য পশু দ্বারা চালিত যে দেশীয় যন্ত্রটি কলুরা ব্যবহার করেন সেটিই ‘ঘানি’ নামে পরিচিত। ঘানি টানার জন্য মূলত গরু কিংবা ঘোড়া ব্যবহার করা হয়। ঘানি তৈরি হয় কাঠ দিয়ে, যেখানে এক বিন্দু লোহা নেই। এটা তৈরি করতে রীতিমতো একটা গাছ লেগে যায়। একেকটি অংশ তৈরিতে লাগে একেক ধরনের কাঠ। প্রত্যেকটি অংশের নামও ভিন্ন ভিন্ন। আট থেকে দশ ফুট লম্বা একটা কাণ্ডের অর্ধেকের বেশি থাকে মাটিতে পোঁতা। ঘানির এটাই হলো প্রধান অংশ। এই অংশের নাম ‘গাছ’। পাকা কড়ই কাঠের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। গাছের ওপরে বেড় দেয়া কাঠের একটা অংশ থাকে, যা ‘ওড়া’ নামে পরিচিত। সরিষা পেষার জন্য কাঠের লম্বা একটা দণ্ড লাগে, এটা দেখতে অনেকটা ঢেঁকির ওঁচা বা থারি মুগুরের মতো। এর নাম ‘জাইট’। বেল গাছের কাঠ এ ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী। জাইটকে চাপ দেয়ার জন্য এক-দেড় হাত লম্বা এক প্রান্ত বাঁকা একটা কাঠ লাগে-এর নাম ‘ডেকা’। ডেকার বাঁকানো মাথা টুপির মতো বসে যায় জাইটের মাথায়। অন্য প্রান্ত বাঁধা থাকে একটা ভারী মোটা তক্তার এক প্রান্তের সাথে। এই তক্তার নাম ‘কাতাড়ি’। গাছের নিচের অংশে একটি ছিদ্র করা হয় এবং এই ছিদ্রের লাগানো থাকে কাঠির মতো একটা চিকন কাঠ। এর নাম ‘পাতাড়ি’। এটা দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় তেল গিয়ে পড়ে নিচে রাখা পত্রে। কাতাড়ির ওপর রাখা হয় ভারী কোনো জিনিস যেন সরিষা পিষে তেল বের করা যায়।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জিনারী ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামের হারুন মিয়া। এখনো ঘানি দিয়ে সরিষার তেল ভাঙান। তিনি বলেন, খুব কষ্ট করে বাপ-দাদার এ পেশাটি ধরে রেখেছি। আমার একটি ঘানি রয়েছে। দৈনিক ছয় কেজি সরিষার তৈল উৎপাদন হয়। তবে বর্তমান বাজারমূল্যে কোনো রকমে খেয়ে পরে পেশাটি ধরে রেখেছি। পরিবারের আর কেউ এ পেশার সাথে জড়িত নয়। সবাই অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার সিদলা গ্রামের ছমেদ, ধুলিহর গ্রামের সবুরসহ অসংখ্য লোকের ঘানি ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে গেছে। বর্তমানে উপজেলার কয়েকজন তাদের বাপ-দাদার এ ব্যবসা ধরে রেখেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন হাত কাটা বন্দীর নেতানিয়াহুর সমালোচনা ইসরাইলের আলটিমেটাম, যা বলল হামাস রাশিয়ার প্রতি চীনের সমর্থনের বিরুদ্ধে ব্লিংকেনের হুঁশিয়ারি

সকল