ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় বিদ্যালয় মেরামতের জন্য এক কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। কিন্তু মাইনর মেরামত প্রকল্পের এই বরাদ্দের টাকা পেতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটি সংশ্লিষ্ট খাতে খরচ না করেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে বরাদ্দের টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক বিদ্যালয় নামমাত্র কাজ করে আবার কোথাও কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ এসেছে। ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের বিষয়টি জানতে পেরে এই প্রতিবেদক ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তথ্য অধিকার আইনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালকের কাছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাইনর মেরামত প্রকল্পের ভাউচারের ফটোকপির জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ তার কাছে ৮৫টি বিদ্যালয়ের ভাউচার তুলে দেয়।
উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে ৮৫টি বিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যাংক হিসাব নম্বরে দুই লাখ করে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা পাঠানো হয়। বরাদ্দ পাওয়া ওই টাকা দিয়ে বিদ্যালয় মেরামতের খরচ করার নির্দেশনা ছিল।
৮৫টি বিদ্যালয়ের দুই হাজার ৯৬টি ভাউচার ঘেঁটে দেখা গেছে, মাইনর মেরামত প্রকল্পের বরাদ্দ পাওয়া বিদ্যালয়গুলো শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের রড-সিমেন্টের দোকান মেসার্স নান্নু অ্যান্ড ব্রাদার্স, নরেশ চৌহান সড়কের ঢাকা ফার্নিচার মার্ট, বঙ্গবন্ধু সড়কের বৈদ্যুতিক সামগ্রীর দোকান হাবিব স্টোর ও সমবায় মার্কেটের ওমর ব্রাদার্সসহ কয়েকটি দোকান থেকে বেশির ভাগ মালামাল কিনেছে। দোকানগুলোর মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া সব ভাউচারই জাল। প্রায় সব বিদ্যালয়ই ইট গাঁথুনির কাজে রাজমিস্ত্রী আবুল হোসেন ও রঙের কাজে সোহেলের নাম দেখিয়েছে। বাস্তবে তারা এসব কাজ করেননি।
এফ রাজাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের লোকজনই প্রাক্কলনের বিপরীতে যে ভাউচার প্রস্তুত করে দিয়েছেন তা তারা শিক্ষা কার্যালয়ে জামা দিয়েছেন। বিনিময়ে প্রতিটি বিদ্যালয়কে ৫০০ থেকে ১০০০ করে দিতে হয়েছে। তবে উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন এ অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন।
এ দিকে বরাদ্দ পেয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আরাজী দক্ষিণ বঠিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করেছে শিক্ষা বিভাগ।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুনা লায়লা বলেন, পরিস্থিতির কারণে নিয়ম মানা সম্ভব হয় না। ভাউচারে সমস্যা থাকলেও কাজের মান সন্তোষজনকভাবে শেষ হয়েছে। যেসব বিদ্যালয়ে সমস্যা পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুজাহিদুল ইসলাম জানান, শিক্ষা কর্মকর্তাদের সভা ডাকা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা